দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা প্রয়োজন
২৫ এপ্রিল ২০২২ ১৭:২৭
মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয় বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যের। সেই সকল দ্রব্য সমাজ অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী মানুষকে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে ক্রয় করতে হয়। যে মূল্যের বিনিময়ে মানুষ কোন দ্রব্য ক্রয় করে সেই মূল্য মানুষকে আপন যোগ্যতায় অর্জন করতে হয়। সে কারণে কোন দ্রব্যের মূল্য যদি সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে তাকেই আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বলে থাকি।
সম্প্রতি যে বিষয়টি আমাদের জীবনধারণের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে, জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বিশেষজ্ঞের মতে , এ আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ একাধিক। প্রথমত, মুনাফালােভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়।
দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সংকট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করে সমাজের বৃহত্তর অংশ। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘভাতা ঘােষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারি কর্মচারীগণ যে হারে মহার্ঘভাতা পেয়েছেন , দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
ফলে সরকারি কর্মচারীরাও সমস্যামুক্ত হতে পারেননি। তাই অবিলম্বে এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরােধকল্পে যথাযােগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি জিনিসের দাম গত কয়েক বছরে বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। জীবনধারণের জন্য সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন সেই খাদ্যদ্রব্যের অধিকাংশের মূল্য এখন আকাশচুম্বী। ন্যায়সংগত ও নির্ধারিত মূল্য বলতে এখন কিছুই নেই। দফায় দফায় দাম বাড়লেও রোজগার বাড়ছে না সেই মাত্রায়। ফলে সীমিত আয়ে সংসার সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেই সাথে দফায় দফায় গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন হয়ে পড়েছে অসহায়। মূল্যবৃদ্ধি এদেশে এটাই প্রথম, তা নয়। এটি একটি অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মূল্যবৃদ্ধিজনিত এমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনা বিরল। অন্য দেশে এমনটি ঘটলে বিক্ষোভ দানা বাঁধে , সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের দেশের মানুষেরা শুরুর দিকে এ ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকলেও বছরের পর বছর মূল্যবৃদ্ধি চলতে থাকায় প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। সচেতন নাগরিকগণ এর সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এ অবস্থার কোনো উন্নতি সাধন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার বাজার মনিটরিং, কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়া ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট না হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ বাড়েনি। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বার বার।
আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এসব ঘটনায় কেউ কেউ রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এমন অমানবিক সমস্যায় পীড়িত করে যারা নিজেদের সুখ – সম্পদ। আহরণের চেষ্টায় মত্ত , তারা দেশের শত্রু , জনগণের শত্রু। এসব অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোকদের উৎখাত এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে সরকারি , বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের দৃষ্টিদান অপরিহার্য।
তাই বলা যেতে পারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বগতি রোধ করার জন্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এর জন্যে প্রথমেই দরকার, সরকারের সদিচ্ছাপ্রসূত বাস্তব পরিকল্পনা। দ্বিতীয় ও অপরিহার্য করণীয় হচ্ছে পণ্যসামগ্রীর চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করা। এ জন্যে দেশের কৃষি শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং আমদানি রপ্তানি উন্নতি করতে হবে। দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার উৎপাদন-ব্যবস্থার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যবাজারের ওপর সরকারের সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে খেয়াল-খুশিমত জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেদার মুনাফা লুটতে না পারে। কালো টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে যেন তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ ইত্যাদি চলছে। ফলে উৎপাদনের হার অনেক কমে যাচ্ছে। সরবরাহ ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সমঝোতা সৃষ্টি করে এই সমস্যা লাঘব করা দরকার। এছাড়াও চোরাচালান ও চাঁদাবাজি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। বাজারের পরিস্থিতি যাতে সরকারের সদা নখদর্পণে থাকে সেজন্যে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দুর্নীতির লাগামহীন ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই সব পদক্ষেপ নেওয়া হলে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
কবিতা রাণী মৃধা দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন মুক্তমত