Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদেশি সংস্কৃতির গ্রাসে আমরা

সামিহা খাতুন
২৫ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৩৭

ইদকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে সকল মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে একটি উৎসব মুখর পরিবেশ। সেই উৎসবকেই দ্বিগুণ করতে মানুষ ব্যস্ত হয়েছে ঈদ কেনা-কাটায়। মানুষের ইদ কেনা-কাটা কে কেন্দ্র করে কাপড় ব্যবসায়ীরা বিগত বেশ কিছু বছর যাবৎ তৈরি করেছে ব্যবসার নতুন একটি ধরন। প্রতিবছর ইদ মৌসুমে কাপড় ব্যবসায়ীরা সেই বছরের ট্রেন্ডিং কোন নাম বা ভাইরাল কোন গানের নাম বা কোন শব্দ দিয়ে পোশাকের নামকরণ করছে। যে সমস্ত জামাকাপড় বা পণ্য ঈদ মৌসুমে পূর্বে এবং ইদ মৌসুমে পরবর্তী সময়ে একই দামে বেচা-কেনা হলেও ইদ মৌসুমে সে সমস্ত পোশাকেরই উদ্ভট কিছু নাম দেয়ার মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। ইদকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চরিত্রের নামে নিম্নমানের পোশাক আনা হচ্ছে। প্রতি বছর ভারতীয় সিরিয়ালের মূল চরিত্রের অনুকরণে তৈরি করা পোশাক দেশে ঢুকছে। সীমান্ত এলাকার বিভাগীয় শহরের বড় বড় বিপণিবিতানে এসব পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। গত বছর বাহুবলী টু, দিল নাশি, বাজিরাও মাস্তানি, হুররম, কারন-অর্জুন টু ও সেলফি নানা নামের পোশাক বিক্রি হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ইদ কেনা-কাটায় দেখা যায় বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব। এ বছর মার্কেটে ইদ কেনা-কাটা পর্যবেক্ষণ করতে গেলে দেখা যায়, পোশাকের নাম পুষ্পা, কাঁচা- বাদাম এ ধরনের। সেইসাথে এই সমস্ত পোশাক বিক্রি হচ্ছে অত্যন্ত চড়া মূল্যে।

বিজ্ঞাপন

ইদকে কেন্দ্র করে পোশাকের নাম কেন বিদেশী সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, একটি পোশাক বিক্রির জন্য বিক্রেতারা বিদেশী সংস্কৃতি থেকে ধার করা উদ্ভট কিছু নাম ব্যবহার করে ক্রেতাদের যে ঠকাচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলার কেউ নেই। প্রতিবছরই নতুন নতুন যে সমস্ত শব্দ জনপ্রিয় হয় সে শব্দের নামকে কেন্দ্রের করেই শুরু হয় ইদ মৌসুমে পোশাকের কেনাবেচা। এ বছর ভাইরাল নামের সাথে মিল রেখে যে পুষ্পা বা কাঁচা বাদাম জামা বিক্রি হচ্ছে সেই সমস্ত নামের সাথে জামার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই। লক্ষনীয় বিষয় হলো কাঁচা বাদাম শব্দটি জনপ্রিয় হয়েছে ইন্ডিয়ার একটি বাদাম বিক্রেতার গাওয়া লোকাল গান থেকে, আবার পুষ্পা নামটিও একটি সিনেমা থেকে নেওয়া। বিক্রেতারা শুধুমাত্র নামটা পরিচিত তাই তাদের বিক্রি বাড়ানোর জন্য এসমস্ত নাম ব্যবহার করছে। প্রতিবছর ইদের সময় সেই বছরের ট্রেন্ডিং নাম দিয়ে অত্যন্ত বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হয় এবং অধিকাংশ বিক্রেতাদের মাঝেই দেখা যায় অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে লাভ করার প্রবণতা। কিন্তু এসমস্ত নামের প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের উপর পরছে। তারা নিজেদের সংস্কৃতি থেকে ছিটকে গিয়ে বিদেশী সংস্কৃতি কে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতেও দেখা যায় ভারতীয় পাকিস্তানি কাপড়ের সমারোহ। মানুষের ভারতীয় বা পাকিস্তানি কাপড়ের প্রতি আগ্রহ দেশের বুটিক শিল্প কে হুমকির মুখে ফেলবে। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ইদকে কেন্দ্র করে প্রায় সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকার বিদেশি পোশাক আমদানি হয়। এসব পোশাকের দামও হাঁকাচ্ছেন ১৫ শ’ থেকে শুরু করে মানভেদে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য ভারতীয় সিরিয়াল, সিনেমা ও চরিত্রের নামে পোশাকের নামকরণ করা হচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে মূলত বিদেশি পণ্যের দিকে ঝুঁকছে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীরা। মানুষ পরিচিত কোন কিছুর নামে পোশাক দেখলে আগ্রহ নিয়ে দেখে এবং সাধারণত না কিনে যায়না- ব্যবসায়ীরা এ পলিসি ব্যবহার করেই ঈদ মৌসুমে ব্যবসা বৃদ্ধি করে থাকে। বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিশু, কিশোর এসমস্ত নামে ব্যবহৃত পোশাক কিনতে না পেরে কান্নাকাটি করা এমনকি আত্মহত্যা করেছে এমন ঘটনার নজির ও রয়েছে আমাদের দেশে। এ সমস্ত ঘটনা দেখলে বোঝা যায় বর্তমান প্রজন্ম কতটা বিদেশি সংস্কৃতির ধারা ধীরে ধীরে প্রভাবিত হচ্ছে। এ প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের দেশি নামে পোশাকের নাম করণের মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করানো যেতে পারে। সরকারের উচিত প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে প্রতিটি মার্কেট ব্যবস্থাপনাকে মনিটরিং এর মাধ্যমে রাখা। কেননা দেশে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক হলেও ইদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ছোট-বড় শপিংমলে প্রায় পুরো পোশাকের প্রায় পুরোটাই থাকে ভারত চীন আর থাইল্যান্ডের দখলে। সেই সাথে দেশের দেশী কাপড়ের তৈরি পণ্য ও পোশাক কতগুলো বিক্রি হবে এবং কতগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড় বিক্রি হবে সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারের উচিত দেশীয় বস্ত্র শিল্প রক্ষায় বিদেশে বস্ত্রের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা ও কোনো উৎসব উপলক্ষে কত টাকার পোশাক আমদানি করা হয় তার সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। তরুণ প্রজন্মকে এই বিদেশী সংস্কৃতির গ্রাস থেকে রক্ষা করতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের সাহায্যে বর্তমান প্রজন্মকে সচেতন করার প্রচেষ্টা করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বিদেশি সংস্কৃতির গ্রাসে আমরা মুক্তমত সামিহা খাতুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর