Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপদ ভ্রমন বয়ে আনুক ইদ আনন্দ

রশীদ এনাম
২৭ এপ্রিল ২০২২ ১৪:১২

“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ইদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ। তোর সোনা দানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ, দে যাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিঁদ, ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ইদ। আজ পড়বিরে ঈদের নামাজ রে মন সেই ইদগাহে, যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ!” কবি কাজী নজরুল ইসলাম মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমেদের অনুরোধে ১৯৩১ সালে গানটি রচনা করেছেন। ইদের চাঁদ দেখার সাথে সাথে গানটি বেজে উঠে চারিদিকে। আকাশে বাতাসে বয়ে যায় ইদ আনন্দ বার্তা। গানের সুরে যেন ইদের চাঁদও খিল খিল করে হেসে উঠে।

বিজ্ঞাপন

পবিত্র ইদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে। নাড়ির টানে শেকড়ের টানে সবাই নিজভূমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকে আগে ভাগে টিকেট বুকিং দিয়েছে। ট্রেন ভ্রমন সবচেয়ে নিরাপদ কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে পাথর নিক্ষেপ বা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা সামাজিকব্যাধী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ ইদের সদাইপাতি করছে কেউ ইদের নতুন কাপরচোপড় বা গাঁটরি বুচকা আটসাট করে বাঁধছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শেষ কর্মদিবস। সবাই ছুটবে ইদ উদযাপন করতে। তাড়াহুড়া করে ট্রেনে এবং ট্রেনের ছাদে বানরদোলা কিংবা টাসাটাসি করে উঠবেন না। ধীরে সুস্থে উঠবেন। শিশু এবং বৃদ্ধ ও মহিলাদের একা ছেড়ে দিবেন না। শিশুদের হাতে ধরে রাখবেন। এবং ওদের প্রতি আলাদা নজর রাখতে হবে। টাকা পয়সা, গাঁটরি , বোচকা, ল্যাগেজ হাতের কাছে রাখবেন। ল্যাগেজে অবশ্যই নিজের নাম মোবাইল নম্বর লিখে রাখুন। টাকা এক ব্যাগে না রেখে আলাদা আলাদা জায়গা রাখা ভালো।
বহুসপ্ন নিয়ে ইদ করতে যাচ্ছেন বাড়িতে কু-ঝিক-ঝিক কু-ঝিকঝিক করে ছুটে চলেছে ট্রেনে। জানালার পাশে বসবেন ভালো কথা ট্রেনে জানালা বন্ধ করে দিবেন। ভুলেও বাসে বা ট্রেনের জানালায় মাথা বা হাত রাখনে না। চলন্ত ট্রেনে ধুর্বত্তরা বিভিন্ন স্টেশনে পাথর ছুড়ে মারে। চলন্ত ট্রেনে বা রেললাইনে বা রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় মোবাইলে সেলফি তুলা থেকে বিরত থাকুন। নদী সাগর পারে ছবি তোলার সময় সাবধান। সাতার না জানলে পুকুরে, বা নদী সাগরে ভুলেও নামবেন না। চোখের পলকে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। পাশের সিটে বসা অপরিচিত লোকে কিছু দিলে ভুলেও খাবেননা। যথা সম্ভব ভীড় এড়িয়ে চলুন। পকেট মার, অজ্ঞান, মলম পার্টি থেকে সাবধান। রেল স্টেশনে গিয়ে দেখলেন- ট্রেনে উঠার তাড়াহুড়া। আপনি উঠতে গিয়ে পড়ে গেলেন কিংবা আপনার মোবাইল মানিব্যাগ উধাও। ট্রেনে উঠে বসলেন, পাশের সিটে অপরিচিত লোক খেতে দিল জুস, পান, কিংবা কোন পানীয় খাবার পাওয়া মাত্রই গট গট করে পান করলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, মালপত্র এমনকি পরিধানের জামাও খুলে নিয়ে গেছে। ইদের খুশি তখন ট্রেন যাত্রাপথে বিষাদে পরিণত হবে।

বিজ্ঞাপন

ট্রেনের ছাদে করে যাত্রা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। মোটর বাইকে যাত্রা করার সময় অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করুন। পানি এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র নিজের কাছে রাখুন। ট্রেনের টিকিট, বগি নম্বার এবং সিট নম্বার যাত্রার আগে চেক করে নিন। সিট এবং বগি বা কেবিন নম্বরটা মোবাইলে ছবি তুলে রাখতে পারেন। গভীর রাতে ট্রেনযাত্রায় সজাগ থাকতে হবে। ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন। গভীর রাতে চলন্ত ট্রেনে একা একা ওয়াশ রুমে যাবেন না। চা কফি খেতে পারেন এবং অবশ্যই যাত্রা পথে গল্প উপন্যাসের বই নিয়ে উঠবেন। হেডফোন দিয়ে গান শুনতে পারেন। তন্দ্রা কেটে যাবে। যাত্রা পথে বিপদ বা বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়লে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরুন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন। তিনি যেন সহি সালামতে বাড়িতে পৌছে দেন। বড় কোন বিপদ হলে মাথা ঠান্ডা রেখে ৯৯৯ ফোন করুন।

ধর্ম যার যার উৎসব হলো সবার, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আনন্দ করি মিলেমিশে। আসুন সবাই মিলে কোলাকুলি করি হাতে হাত ধরে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী সবিহ্ চাচা বলতেন, ‘আনন্দ শেয়ার করলে আনন্দ বাড়ে। দুঃখ শেয়ার করলে দুঃখ কমে’। ইদের দিনের আনন্দ মানে সেমাই, কোর্মা, পোলাও মজার মজার ভোজন রসদ, সাথে আছে আবার নতুন কড়কড়া নোটের ইদসেলামী। পরিশেষে বলতে চাই, আমরা নিরাপদ ট্রেন যাত্রা চাই। দূরের মানুষ আসুক কাছে, কাছের জন থাকুক পাশে, মন ছুটে যাক তোমার টানে, চাঁদরাত্রির আগমনে, ইদ আনন্দময় হোক সবার মনে, ইদমোবারক।

লেখক: প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

নিরাপদ ভ্রমন বয়ে আনুক ইদ আনন্দ মুক্তমত রশীদ এনাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর