নাম হোক ‘জয় বাংলা সেতু’
১৩ মে ২০২২ ১৭:১৬
‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের ভিতর একটা ঝংকার আছে। জয় বাংলা শুধু শ্লোগান না, এটা বাঙালির বুলি।
১৯৭১ এর আগে মুক্তি সংগ্রামের মিছিল মিটিংয়ে ‘জয় বাংলা’ উজ্জীবনি শক্তি হিসাবে কাজ করতো। ১৯৭১ এ প্রায় নিরস্ত্র বাঙালিকে, মুক্তিযোদ্ধাকে অলৌকিক সাহস, শক্তি যোগাত ‘জয় বাংলা’। আজও দলমত নির্বিশেষে দেশ প্রেমিক বাঙ্গালির সুর, সাহস, মমতার জায়গা ‘জয় বাংলা’।
এর বিপরীত চিত্রও আছে। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানিদের ঘৃণার বাক্য ছিল ‘জয় বাংলা’। আজও বাংলাদেশ বিরোধীদের ঘৃণা, আতঙ্কের শব্দ বোমা ‘জয় বাংলা’। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার পরপর অনেক কিছুর সাথে নিষিদ্ধ হয় জয় বাংলা। জেনারেল জিয়াউর রহমানের সরকার মুক্তি সংগ্রামের শ্লোগান, মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান ‘জয় বাংলা’কে কঠিনতম ভাবে নিষিদ্ধ করে। এর বিপরীতে পাকিস্তানী কায়দায় প্রচলন করে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। শত আইন, শত অপপ্রচার, শত নিষেধাজ্ঞার পরও ‘জয় বাংলা’ বহাল তবিয়তে টিকে আছে। যতদিন পৃথিবীতে একজন বাঙালি থাকবেন ততদিনই ‘জয় বাংলা’ টিকে থাকবে।
বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারলাম শীঘ্রই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে। প্রোমত্তা পদ্মার বুকে সেতু তৈরি করতে গিয়ে বাঙালিকে পোহাতে হয়েছে অনেক খরস্রোত। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট শুধুমাত্র ব্যাক্তি স্বার্থে পদ্মার উপর সেতু তৈরি না হবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন আন্তর্জাতিক মন্ডলে। সাথে ছিল বিদেশী মোড়লেরাও, যারা চাইত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় তাদের হুকুমের গোলাম হয়ে থাকুক। দেশীয় গুজবীরা তো ছিলই। কত শত দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে তা নিয়ে হাজার পৃষ্ঠার ইতিহাস লেখা যাবে। ঋণ না দিয়েও বাঙালিকে, পৃথিবীকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছিল পদ্মা সেতু নিয়ে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করেছে। এ ইস্যুতে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করারও চেষ্টা করছিল চিহ্নিত ষড়যন্ত্রীরা। সময়ের সাথে সব পরিস্কার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনা কঠিন অবস্থান নেন পদ্মা সেতু নির্মাণের। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন বাঙালি নিজের টাকায় পদ্মার উপর সেতু বানাবে। এবার দেশের ভিতর শুরু হয় অন্য খেলা। বিষয়টাকে সুশীল সমাজ, কিছু রাজনৈতিক দল কৌতুকের পর্যায়ে নিয়ে যায়। একটি গোষ্ঠী জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে যেন ‘পদ্মা সেতু’কে মানুষ ঠাট্টার বিষয় হিসাবে নেয়। শত অপপ্রচারের পর পদ্মা সেতুর নির্মাণ শুরু হলে বিএনপি, সুশীল সমাজ নতুন মাত্রায় অপপ্রচার শুরু করে।
সুশীল সমাজ প্রচার শুরু করে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হলেও নির্মাণ শেষ করা সম্ভব না। আর সম্ভব হলেও দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া তো জনগনকে আহ্বান করলেন – পদ্মা সেতুতে না ওঠার জন্য। পদ্মা সেতু হবে জোড়াতালির সেতু। কেউ যেন না উঠে। যে কোন সময় এ সেতু ভেঙ্গে যাবে। তবুও পদ্মা সেতুর কাজ থেমে থাকে নাই।
এর মধ্যে চলছে অদ্ভুত সব গুজব। নির্দিষ্ট গোষ্ঠী দারুণ কৌশলে ভয়ঙ্করতম গুজব ছড়ায় যে পদ্মা সেতুর জন্য শিশুদের রক্ত লাগবে। তাই সরকার গোপনে বাচ্চা চুরি করে জাবাই করে সেতুর পিলারে লাশ ফেলছে। এই গুজবের কারণে কয়েকজন গণপিটুনিতে নিহত হন। পদ্মা সেতুকে জনবিমুখ করার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়। পদ্মা সেতু নিয়ে যত ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে তা যে কোন স্পাই থ্রিলারের সমপর্যায়ের।
শুধু কি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। পদ্মা সেতু নির্মাণে বারবার সামনে এসেছে স্থাপত্যবিদ্যার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সীমাবদ্ধতাও। যাইহোক সব সীমাবদ্ধতা, ষড়যন্ত্র পার করে পদ্মা নদীর উপর সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতুগুলির মধ্যে একটি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতু সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। এই সেতু নির্মাণের ম্যাধমে একাডেমিকলি আমরা প্রমাণ করেছি আমরা আর তলাবিহীন ঝুড়ি না। সাথে স্বনিয়োজিত বিশ্ব মোড়লদের জানিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশ আর কখনও কারো প্রেসক্রিপশনে চলবে না। নিজেদের সিধান্ত নিজেই নিবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ জয় বাংলার আরেক জয়। বিশ্ব মোড়লদের বৈরিতা উপেক্ষা করে আমরা যেমন ৭১-এ জয়ী হয়েছি। তেমনি বিশ্ব মোড়লদের, দেশী ষড়যন্ত্রীদের বৈরিতা উপেক্ষা করে আমরা পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করে আরেকবার জয়ী হয়েছি।
সব বিবেচনায় পদ্মা নদীর উপর সেতুর নাম বাঙালির বুলি ‘জয় বাংলা সেতু’ হলে সব দিক দিয়ে সুন্দর হয়। ৭১-এ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা জয় পেয়েছি। ২০২২-এ পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জয় বাংলার আরেক বিজয়।
পদ্মা সেতুর নাম হোক ‘জয় বাংলা সেতু’।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি