Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিনটি ঘটনা ও ১৮ কোটি মানুষের ভালোবাসা

রহমান মৃধা
১৮ মে ২০২২ ১৬:৫২

ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে হয়েছে কাজে হয়নি। যদি শুধু ঢাকা শহর নিয়ে কথা বলি, তাহলেও কথা শেষ হবে কথা শেষ হবে না। দুইজন মেয়র ঢাকার দায়িত্ব নিয়েছেন— রাস্তা, ঘাট, বস্তি এবং ডাস্টবিনের অবনতি ছাড়া কোন উন্নতি হয়নি, বাড়েনি জনসাধারণেরও সচেতনতা। শুধু বেড়েছে জনসংখ্যা, হাহাকার আর দুর্নীতি। আজকের সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের তিনটি ঘটনা বা বিষয় আমাকে বেশ যন্ত্রনা দিয়েছে যার ফলে লিখতে বসেছি। ধৈর্য বা সহ্য কিছুই বাকি রইল না। দেশে দেদারসে চলছে দুর্নীতি। অনীতি হচ্ছে স্বাধীনভাবে অথচ সত্যকে তুলে ধরার হিম্মত, অধিকার বা সাহস কারো নেই? নাকি ইচ্ছে নেই? সব সত্য কী তাহলে পরাজিত হয়ে যাবে মিথ্যার কাছে!

বিজ্ঞাপন

ঘটনা ১

জানালার পাশে বসায় এক সিনিয়র ভাই হাতে কলার খোসা ধরিয়ে দিয়ে ফেলে দিতে বললেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই, রাস্তায় ফেলা কী উচিত হবে?’ ভাই বললেন, ‘বাসে তো ফেলার জায়গা নেই। বাইরেই ফেলে দাও, বাংলাদেশটাই তো ডাস্টবিন’। তবে বাসে ঝুড়ি বা ডাস্টবিন থাকলে হয়তো কলার খোসাটি বাইরে ফেলতে বলতেন না।

বাংলাদেশে দূরপাল্লায় যাতায়াতের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বাস ও ট্রেন। দেশের সিংহভাগ মানুষ এই দুই যানই ব্যবহার করে থাকেন। বাসে বা ট্রেনে যাওয়ার সময় অনেকেই শুকনা খাবার, চিপস, বিস্কুট, পানীয়সহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনেন। এ ছাড়া বাস বা ট্রেনে হকার, ঝালমুড়ি, বাদাম, পেয়ারা, পানীয়সহ বিভিন্ন বিক্রেতা উঠে পড়েন। যাত্রীরা তাদের থেকে খাবার কেনার সময় তারা পলিথিন কিংবা কাগজের ঠোঙ্গা দিয়ে থাকেন। যাত্রীরা খাবার খাওয়ার পর পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, ঠোঙ্গাসহ বিভিন্ন আবর্জনা বাসে বা ট্রেনের ভেতরে ফেলেন। এতে সেগুলো অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

এছাড়া কিছু বাস ও ট্রেনে আবর্জনা ভেতরে ফেলতে নিষেধ করা হয়। ফলে আবর্জনা অনেকেই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। এতে রাস্তাঘাট নোংরাসহ পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। তাই এসব যানবাহনে আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন বা ঝুড়ি স্থাপন করা অপরিহার্য। এতে যেমন যানবাহনগুলো পরিচ্ছন্ন থাকবে তেমনি পরিবেশও কিছুটা হলেও দূষণমুক্ত হবে। বিষয়টি আমলে নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।

— নাগরিকের পক্ষ থেকে সমস্যা এবং তার সমাধানের জন্য একটি অনুরোধ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র কী কিছু করবে? বা এই ধরণের বিষয়ে কিছু করার নজির কি আগে আছে?

বিজ্ঞাপন

 

ঘটনা ২

গলি দিয়ে ঢুকতে দুই সারিতে ছোট ছোট ঘর। নম্বরযুক্ত ও নম্বরহীন ‘আলগা’ ঘর। ফাঁকে ফাঁকে টয়লেট, গোসলখানা, রান্নাঘর। কোনো গোসলখানার চারপাশ ঘেরা থাকলেও ছাদ নেই, কোনোটি একেবারেই উন্মুক্ত। তেমন একটি উঁচু পাটাতনের উন্মুক্ত গোসলখানায় কুয়া থেকে পানি তুলে পাশাপাশি গোসল করছিলেন নারী ও পুরুষ। গা-ধোয়া পানি গড়িয়ে আবার কুয়াতেই ফিরে যাচ্ছিল। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কোনো বন্দোবস্ত নেই। গোসল, কাপড়-ধোয়া, থালাবাসন ধোয়া, মাছ-মাংস ধোয়া—সবই এখানে করতে হয়।

এভাবে খোলা জায়গায় গোসল করাটা খুব অস্বস্তিকর। কিন্তু উপায় কী? বস্তিতে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো গোসলখানা নেই। ঋতুস্রাবের সময় মেয়েরা অবর্ণনীয় অস্বস্তির মধ্য দিয়ে সময় পার করেন। মাসিকের ব্যবহৃত কাপড় তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কারের সুযোগ পান না। ব্যবহৃত কাপড় জমিয়ে রেখে সন্ধ্যার পর গোসলখানা নিরিবিলি হলে পরিষ্কার করতে যান। আরেক শঙ্কা, গোসলের দৃশ্য কেউ ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় কি না!

ঢাকায় বস্তিতে থাকে আনুমানিক ৬১ লাখ মানুষ। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে, ঢাকার লোকসংখ্যা ১ কোটি ৮৪ লাখ।

জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ গ্রাম থেকে নগরে আসছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বস্তির সংখ্যা। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার অভাবে বস্তিগুলো নারী ও শিশু বাসিন্দাদের জন্য কঠিন ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ন্যূনতম মৌলিক সেবা পাওয়া কঠিন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপদ গোসলখানা।

মাসিকের সময় অস্বস্তি আরও বেশি। মাসিকের সময় তিনি ন্যাকড়া ব্যবহার করেন। দিনের বেলা গোসলখানায় পুরুষদের আনাগোনা বেশি। আর অপেক্ষমান সারিও লম্বা। এ কারণে মাসিকের সময় তাৎক্ষণিকভাবে ন্যাকড়া পরিষ্কার করতে পারেন না। ঘরের এক কোনায় জমিয়ে রাখেন। সন্ধ্যার পর গোসলখানা নিরিবিলি থাকে, তখন এসে ন্যাকড়া পরিষ্কার করেন। ঘরের ভেতর শুকাতে দেন।

নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরী জানাল, সে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। তবে তার মা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন। মাকেও একই সমস্যায় পড়তে হয়।

ঘটনাটি জানার পর রাষ্ট্র কী করবে? জাতির একটি অংশ যখন  চরম দুরাবস্থায় যখন দরকার প্রকৌশলীদের- যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে দেশের পরিকাঠামো নির্মানে, ঠিক তেমন একটি সময়। কিন্তু এই ধরণের ঘটনায় আমাদের নাগরিক পেশাজীবী সমাজ বা রাষ্ট্রের ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্যা সমাধানের নজির আছে কী?

 

ঘটনা ৩

এই খবরটি আরেকটু পুরোনো। দিনদুয়েক হলো সম্ভবত। বাংলাদেশে আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারি, আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

— আর কত সহ্য করতে হবে?

দিন যাচ্ছে আর নতুন নতুন ভেলকিবাজির উদয় হচ্ছে। এতদিন ধরে শুনে আসছি দেশের মানুষ বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সরকার মাঝে মধ্যে জনগণকে আশ্বাস দিচ্ছে যারা বিদেশে টাকা পাচার করছে তাদের টাকা দেশে ফেরত আনা হবে। টাকা এবং পাচারকারীর কেউ ফিরে আসেনি আজ অবধি। এবার শুনলাম নতুন কাহিনী সেটা হচ্ছে ভারত থেকে টাকা পাচার করে বাংলাদেশে ইনভেস্ট। এতোদিন দেশের টাকা বাইরে গেছে একভাবে, এবারের নতুন খেলায় বুয়েটের মেধাবী প্রকৌশলীর প্রশংসা করতেই হয়। বাহ, কি চমৎকার! মেহেনতি মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এসব গুনিধারী রত্নদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছে, দেশকে সোনার বাংলা করতে সাহায্য করবে- অথচ এসব কুলাঙ্গার আমাদেরকেই বাঁশ এবং হারিকেন ধরিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। দেশের টাকা ভারতে পাচার করে সেটাকে কায়দা করে বলছে ভারতের টাকা বাংলাদেশে এসেছে।

জানা গেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার ১১টি বাড়ি, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে ইডি। তার আরও সম্পদ পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। জেরায় পি কে হালদার নাকি কবুল করেছেন তার বাংলাদেশে বিপুল সম্পদের কথা। এর মধ্যে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে দুশো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হোটেল, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিঘার পর বিঘা জমি, ময়মনসিংহে চার একর জমি, ঢাকার পূর্বাচলে ষাট বিঘা জমি, ১১তলা একটি মার্কেট প্লাজা, রাঙামাটিতে তিনশো কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত রিসোর্ট, কয়েকটি ফ্ল্যাট যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। এছাড়াও ব্যাংকে একশো কোটি টাকা থাকার কথা নাকি জেরায় জানিয়েছেন পি কে হালদার।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আটজন ইডি অফিসার পালা করে জেরা করছেন পি কে হালদারদের। কখনও একা, কখনও দুজনকে একসঙ্গে বসিয়ে অথবা মিলিতভাবে। কিন্তু কীভাবে ভারতে ভুয়া সব পরিচয়পত্র করিয়েছিলেন পি কে হালদার তার হদিস এখনও মেলেনি।

বাংলাদেশ অতীতে কেউ পারেনি ফিরিয়ে আনতে পাচার করা টাকা। দিন মজুরের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যাদেরকে রাষ্ট্র উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করছে আজ তারাই যদি দেশটাকে শেষ করতে উঠে পড়ে লাগে জাতি কোথায় যাবে? এদের মতো কিছু মানুষ উচ্চশিক্ষিত হয়ে হয়ে চাকরি নিয়েছে বিভিন্ন প্রশাসনে, কেউ হয়েছে কুটনৈতিক এবং শেষে যার যা খুশি তাই করছে। একের পর এক এরা দেশকে ধ্বংস করে চলছে। আমরা কি এই জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম?

এই ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবতে সবার কাছে আহ্বান রেখে গেলাম।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

তিনটি ঘটনা ও ১৮ কোটি মানুষের ভালোবাসা বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের ভালোবাসা মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর