Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভালোবাসা ও বিশ্বাস

রহমান মৃধা
২৭ মে ২০২২ ১৪:৪২

আমি নিজে অনেকবার পরাজিত হয়েছি, ঠকেছি, অনেকে পরাজিত হয়েছে তা দেখেছি। এমনকি আমার অর্থ অপচয় করে অন্যেরা পরাজিত হয়েছে, তাও দেখেছি। অথচ শুনেছি ”failure is the pillar of success” কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় “failure is the pillar of further failure”-এর বেশি কিছু দেখিনি। পরাজয়ের উপর যেহেতু অনেক অভিজ্ঞতা আমার তাই পরাজয়কে নিয়েই চলছে আমার জীবন। হতাশ করে দিলাম নাতো এই অপ্রিয় সত্যটাকে তুলে ধরে! হতাশার দেখছেন বা শুনছেন কী? এতো সবে শুরু, যদি সাথে থাকেন শতভাগ নিশ্চিত আপনি হতাশ হবেন যখন পুরো লেখাটির শেষ অবধি পড়বেন। বরং পুরো লেখাটি না পড়ে কেটে পড়াই মঙ্গল।

বিজ্ঞাপন

যাই হোক হঠাৎ খবর পেলাম, নাম না বলি, একজন প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকা বেড়াতে গিয়ে এক বাঙালি ছেলের প্রেমে পড়েছে। ভদ্রমহিলার আগে বিয়ে হয়েছিল, সম্পর্ক টেকেনি। এক মেয়ে সন্তানের মা, তখন সুইডেনে থাকেন। বাঙালি ছেলেটি যে আমেরিকা থাকেন তিনি দেশে থাকতে বিয়ে করেছিলেন তবে বিয়ে টেকেনি। সেও এক মেয়ে সন্তানের বাবা। তবে মেয়ের ভরণপোষণ কিছুই বহন করেন না এমন কী দেখা করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। শেষে উচ্চ ডিগ্রির সুবাদে আমেরিকা পাড়ি দেন এবং পড়ালেখার সাথে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এক আমেরিকানকে বিয়ে করেন। আমেরিকান মেয়েকে শেষ অবধি ধরে রাখতে না পারায় পারমিশন হয়নি। পরে চাকরির মাধ্যমে চেষ্টা তাতেও ভালো ফল হয়নি।

বিজ্ঞাপন

দেশে ফেরা ছাড়া উপায় নেই, ঠিক সে সময় সুইডিশ প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা আমেরিকা ভ্রমণে। আর দেখা থেকে প্রেম, পরে হুট করে বিয়ে। এতক্ষণ যা জানালাম আমি নিজেও কিন্তু কিছুই জানতাম না আগে। তবে পরাজয় যখন আমার জীবনে এসে নক করেছিল তখন এসব কাহিনী জানতে পারি।

ভদ্রলোক সরাসরি স্টকহোমে এসেছেন। তার প্লান বিয়ের কাজ শেষ করে তবে তিনি বাংলাদেশে যাবেন। বউ সুইডেনে থাকবেন এসময়ে তিনি দেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করবেন। ভদ্রলোক দেশের নাম করা পরিবারের একমাত্র ছেলে। আমার সঙ্গে ভদ্রলোকের স্টকহোমে দেখা। খুবই ভদ্র, নম্র প্রকৃতির ছেলে। বললেন, দেশে গিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিবেন তরুণ মেধাবীদের।

ঘটনাটি বর্ণনা করছি তা কিন্তু ২৫ বছর আগের কথা। বাংলাদেশ প্রযুক্তির উপর স্বপ্ন দেখতেও শেখেনি তখন তবে মুষ্টিমেয় কিছু ছেলে যারা ভদ্রলোকের মতো পাশ্চাত্যে পড়ালেখার জন্য এসেছে তাদের ধ্যানে এবং জ্ঞানে ঢুকেছে প্রযুক্তি এবং তারা স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে তখন থেকে। যাই হোক আমি ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম এ প্রজেক্ট দাঁড় করানো থেকে চালু করা পর্যন্ত যে বাজেটের দরকার তা কীভাবে জোগাড় করবেন? উত্তরে বললেন, পরিবারের প্রভাব দেশে রয়েছে। তাছাড়া বাবা দেশের প্রভাবশালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। টাকা ধার পেতে সমস্যা হবে না। তবে ৫০ শতাংশ টাকা নিজের থাকলে সুবিধা হতো প্রজেক্টি দাঁড় করাতে।

আমি আবার দেশের জন্য যদি কেউ ভালো কিছু করতে চায় তাকে না করতে পারি না। বেশ কিছু টাকা ব্যংকে পড়ে আছে। ভাবলাম একটি নতুন প্রজন্ম সুদুর আমেরিকা থেকে স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু করবে, শত শত শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। তাছাড়া ছেলেটিকে পছন্দ হয়েছে। বিশ্বাস করে বড় একটি টাকার অংক সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে পাঠিয়ে দিলাম। পরে শুনেছি যে সে তৎকালীন সময়ে ২০টে কম্পিউটার কিনে ক্লাস শুরু করেছিল এবং সাথে স্টকশেয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বাবা ছেলের পতনের খবর জানতে পেরে কম্পিউটারগুলো বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা শোধ করে। আমাকে ব্যাংকের সেই চেয়ারম্যান একটি চিঠি লিখেছিল যার সারমর্ম ছিল; না জেনে শুনে এতগুলো টাকা ডকুমেন্ট ছাড়া দেওয়া ঠিক হয়নি। যাই হোক আমি মূলত বিশ্বাস করে দিয়েছিলাম।

সেই ছেলের সে বিয়েও টেকেনি। যদিও তার দুটো সন্তান রয়েছে, তারা এর কিছুই জানে না। মজার ব্যাপার হলো আমি আজো সেই একই ভুল করে চলছি কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই মানুষকে সাহায্য করি কিন্তু এখনও কেউ ফিরে আসেনি এবং বলেনি যে এই নাও তোমার ঋণ শোধ করে গেলাম।

সবাই বলবেন নিশ্চয় আমি বোকা। কথা সত্য, ভালোবাসার কাছে আমি বোকা। তবে আরো মজার ব্যাপার আমার বাংলাদেশে বেশ কিছু জমিও আছে এবং সেগুলোর ডকুমেন্ট আছে সত্ত্বেও আমার তেমন কোনো অধিকার নেই। যদিও ডকুমেন্ট আছে। কারণ কী জানেন?ভালোবাসার জন্য দলিল বা ডকুমেন্ট দরকার হয় না বিশ্বাসই যথেষ্ট। আমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সেটা হলো ভালোবাসাটি শুধু আমার পক্ষ থেকে ছিল, ওদের পক্ষ থেকে ছিল না বা থাকবেও না তারপরও আমি দূর হতে আমার মতো করে ভালোবেসে যাবো। আগেই বলেছিলাম পুরো লিখাটি পড়ার দরকার নেই মন খারাপ হবে, রাগ হবে এমনকি আমাকে গালি দিতে ইচ্ছে হবে!

তবে পড়ে যখন ফেলেছেন তাহলে কিছু একটা ভাবনা মাথায় ঢুকাতে চেষ্টা করি; যদি ডেস্টিনিকে বিশ্বাস করেন তবে কী বুঝলেন এ ঘটনা থেকে।

লেখক: সাবেকপরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে

email: [email protected] 

সারাবাংলা/এজেডএস

বিশ্বাস ও ভালোবাসা মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর