প্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে পদ্মা সেতু
২৪ জুন ২০২২ ১৭:৫৫
বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। প্রযুক্তির ছোঁয়া সারাদেশে কম বেশি লাগলেও রাজধানী চট্টগ্রাম এমনকি যশোর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এলাকা যেভাবে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে ঠিক তেমনি ভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবেও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন বেশিরভাগই এ সকল এলাকায় সম্পাদিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক দক্ষিণবঙ্গ হলেও বিশেষ করে জাতির জনকের জন্ম স্থান গোপালগঞ্জ টুংগীপাড়া যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা থাকায় খুব একটা প্রযুক্তিখাতের উন্নয়ন দক্ষিণাঞ্চলের হয়নি।
আগামী ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। আর এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ও প্রযুক্তিখাতের কানেক্টিভিটি নিরবিচ্ছিন্ন হবে। আর এই নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ আরেকটি সিলিকন ভ্যালি। প্রযুক্তিখাতের বেসরকারি উদ্যোক্তা এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলির হেডকোয়ার্টার গড়ে উঠেছে রাজধানীভিত্তিক। দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার্থী, চিকিৎসক প্রযুক্তিবিদ বা আধুনিক কৃষিকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ শিল্প মালিকগন তাদের উৎপাদিত গবেষণালব্ধ গবেষণা নিয়ে আসতে হয় ঢাকায়। আর যাতায়াতের ও পণ্য আনা-নেওয়ার ঝুঁকি এবং সময়ের কারণে ইকোসিস্টেম গড়ে উঠতে পারেনি প্রযুক্তিখাতে এখনো দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের জন্য। যেমনিভাবে ১৯৬৯ সালের ১৭ মে ইন্টারনেটভিত্তিক শিল্প বিপ্লব শুরু হলেও বাংলাদেশ সেই শিল্পবিপ্লব মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি।
ঠিক একইভাবে যোগাযোগের নিরবিচ্ছিন্ন মাধ্যম না থাকায় ডিজিটাল বাংলাদেশের শতভাগ সফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে ই-কমার্স, কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার, চিকিৎসা, গবেষণা, ফ্রিল্যান্সিং, রোবটিক্স ও আইওটি শিল্পে নতুন বিপ্লব শুরু হতে পারে। বিশেষ করে তাদের উৎপাদিত পণ্য সফটওয়্যার দ্রুত রাজধানীতে সরবরাহ বা প্রযুক্তিখাতের হেডকোয়ার্টারগুলোতে প্রদর্শন এবং দাপ্তরিক কাজ দ্রুততার সাথে সেরে ফেলতে পারবে। পদ্মায় দুই পাড়ে গড়ে উঠতে পারে অগ্রসর প্রযুক্তি। আবার সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সফটওয়্যার ফিনিশিং স্কুল, মর্ডানাইজেশন অফ রুবেল এন্ড আরবান লাইভস, স্মার্ট সিটি, আইটি ফরেনসিক ল্যাব এর মত প্রকল্প।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় দক্ষিণাঞ্চলে করে তুলতে পারে আইওটিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা। তাছাড়া ঢাকার বেশিরভাগ শ্রমিক বিশেষ করে অদক্ষ তারা দক্ষিণ অঞ্চলের নাগরিক। তাদেরকে বর্তমান পারিশ্রমিকের চাইতেও আরেকটু বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ঢাকায় যেমন জনসংখ্যার চাপ কমবে ঠিক একইভাবে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন আধুনিক দক্ষ শ্রমিক গড়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলে।
এছাড়াও প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার, আউটসোর্সিং, ই-কমার্স, হ্যান্ডসেট তৈরীর নতুন শিল্প কারখানা, ফাইবার শিল্প এমনকি প্রযুক্তিখাতের সহযোগী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে পদ্মার দুই পাড়ে। প্রযুক্তিখাতের সম্ভাবনা হাত এবং পদ্মা সেতুর মধ্যে একটি ইকোসিস্টেম তৈরীর মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন সিলিকন ভ্যালি গড়ে তুলতে অবদান রাখবে পদ্মা সেতু।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
প্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে পদ্মা সেতু মহিউদ্দিন আহমেদ মুক্তমত