শতভাগ বিদ্যুতায়ন হওয়ার পরেও কেন লোডশেডিং হচ্ছে?
৯ জুলাই ২০২২ ১৬:৩৫
প্রথমে একটু পিছনের দিকে ফিরে যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করেছিল। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা কমে হয় মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বিএনপি সরকার এই ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এর অর্ধেকই সরবরাহ করত ঢাকার স্পেসিফিক কিছু এলাকাই। এবং বাকি অর্ধেক সারাদেশের জন্য। তাহলে বুঝা যাচ্ছে সেই সময় সাধারণ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ ছিল সোনার হরিণের মত। চাইলেও পাওয়া যেত না।
বিএনপির-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সেক্টর থেকেই বিশ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের নামে শুধু খাম্বা পুঁতে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তারেক রহমান। এই দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে তরুণ প্রজন্ম তারেককে ‘খাম্বা তারেক’ হিসেবেও ব্যঙ্গ করে থাকেন। রাজধানীর একটি ৮০ মেগাওয়াট মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা টাকা নিয়ে তা সিঙ্গাপুরে পাচার করে। সেই সময় এমন অনেক দুর্নীতি হয়েছিল। যার কারণে তখন বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ চাওয়ায় বিএনপির আমলে ২০ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময় ৪০ শতাংশের কম মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছিল। তারেক রহমানকে তখন একটি টক শো-তে বিদ্যুতের ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল তখন তারেক রহমান উত্তর দিয়েছিল কোন সরকারের একই সময়ে শপিং মলে এবং বাড়িতে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব নয়। এই ছিল তখনকার বিদ্যুৎ এর অবস্থা!
২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। দেশের সকল মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৩ বছর আগের ঘোষণাটিকে স্বপ্ন মনে হলেও, বিদ্যুৎ বিভাগ এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে দেশে ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে পরিবেশ-বান্ধব নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৭৩০.৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
এখন সকলের মনে প্রশ্ন বাংলাদেশের সবাই শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধায় আসার পরও হঠাৎ কয়েকদিন ধরে কেন লোডশেডিং হচ্ছে? দেখলাম অনেক জন লোডশেডিং হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে গালি দিচ্ছে। আমার এই লেখাটি শুধু তাদের জন্য।আসুন জেনে নিই কেন লোডশেডিং হচ্ছে _
আমেরিকা একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের সকল মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে। আমেরিকার সেঙ্কশন-এর কারণে প্রত্যেকের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার এই সেঙ্কশন এর কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালে যে গ্যাস প্রতি ইউনিট ৪ মার্কিন ডলারে কেনা গেছে, তা এখন বেড়ে ৩৮ ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসনির্ভর। ফলে গ্যাস সরবরাহের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেখানে কোনো সময় বিদ্যুৎ যায় না, সেখানেও নানাভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াতেও ১৫-১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। জাপানের আয় বাংলাদেশের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। সেখানেও লোডশেডিং হচ্ছে। ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়াসহ সারা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ তের অভাবে আধাঁরে ডুবতে পারে, বিদ্যুৎ এর সংকটে চীনের লাখো মানুষ অন্ধকারে, বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় ৮০ লাখ অস্ট্রেলিয়ানকে লাইট বন্ধ রাখার আহবান- এগুলো কিছু নিউজের হেডলাইন চাইলেই পড়ে আসতে পারেন।
চলমান এই পরিস্থিতি একটি যুদ্ধের মতো, সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, তাহলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ওপর সকলের আস্থা রাখতে হবে। শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছেন শেখ হাসিনা, সেই শতভাগ বিদ্যুৎ শতভাগই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত সৎ ও দক্ষ নেতা ক্ষমতায় আছেন বলেই বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
তাজিন মাবুদ ইমন মুক্তমত শতভাগ বিদ্যুতায়ন হওয়ার পরেও কেন লোডশেডিং হচ্ছে?