নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐতিহ্য রক্ষায় অনন্য প্রয়াস
৯ জুলাই ২০২২ ১৮:৩৩
এক সময় বাংলাদেশ যাত্রাপালা অনেক জনপ্রিয় ছিল। রচিত হয়েছিল নানা রূপকল্প। রাতের পর রাত জেগে থেকে মানুষ বিভিন্ন যাত্রার পালা দেখেছেন। আলিবাবা, রূপবান, বেদের মেয়ে জোছনা, সোহরাব-রোস্তম, সিঁদুর নিয়ো না মুছে, গরিবের মেয়ে, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা—এ রকম বহু যাত্রাপালা দেখার জন্য যাত্রাপাগল মানুষ ছুটে যেতেন যাত্রা দেখতে। যাত্রাপালা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো কৌতূহল এখন তেমন একটা নেই। গ্রামগঞ্জে যাত্রা প্রদর্শিত হওয়ার কথা আজকাল খুব একটা শোনাও যায় না। দিন যতই যাচ্ছে মনে হয় যাত্রাপালা লুপ্ত হতে চলেছে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের যাত্রা নিয়ে তেমন একটা কৌতূহলও দেখা যায় না। যুগ পাল্টে যাওয়ার কারণেই হয়তো যাত্রার আজ করুণ পরিণতি।
একইভাবে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে আমরা সম্মান দিয়েছি সত্যি, কিন্তু তার সৃষ্টিভাণ্ডার নিয়ে যতটা কাজ করা দরকার তা কোনভাবেই করা হয়নি। তিনি যে বৈচিত্র্য এবং বিপুল রচনাসম্ভার নিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছিলেন তার অনেক কিছুই আজও লোকচক্ষুর অন্তরালে। বালক বয়সে কবি নজরুল ছিলেন লেটো দলের সর্দার। নাটক রচনার মাধ্যমেই মূলত তার বিস্ময়কর, সৃষ্টিশীল জীবনের যাত্রা। ঠিক এই কারণেই নজরুলের সাহিত্যকর্ম থেকে মধুমালা নাটক টি বেছে নিয়ে এবং সেইসাথে যাত্রাপালা যেটি আরেকটি ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিক, যেটির প্রচলন ও চর্চা অনেকাংশেই কম, সেটিকেও এর সাথে যুক্ত করে নজরুলের নাটক অবলম্বন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল জন্মজয়ন্তীতে যাত্রাপালা ‘মধুবালা’ মঞ্চস্থ করা হয়েছে। যাত্রাপালায় মদন কুমারের চরিত্রে অভিনয় করেন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক। তার বিপরীতে মধুমালা চরিত্রে অভিনয় করেন একই বিভাগের শিক্ষিকা মাশকুরা রহমান রিদম। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন ড. জাহিদুল কবীর, ড. মার্জিয়া আক্তার, ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, তন্বী সাহা, মো. সোহেল রানা, মাসুম হাওলাদার, তুহিন অবন্ত, জাহিদুল ইসলাম, আসিফ ইকবাল আরিফ, আল জাবির, নাহিদুল ইসলাম, সাজন সাহা প্রমুখ ।
যাত্রাপালার নির্দেশনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক হীরক মুশফিক। কথা হয়েছিলো তার সাথে; তিনি জানিয়েছিলেন, একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ও এর বিকাশ খুবই প্রয়োজনীয়। সেই প্রয়োজনীয়তার জায়গা থেকেই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিমনা শিক্ষকদের বিশেষ আগ্রহে ও উপাচার্য মহোদয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ আয়োজন। নজরুল এবং নজরুলের সাথে খুবই ঐতিহ্যবাহী একটি আঙ্গিক যাত্রাপালা, দুটোকে একসাথে সমন্বয় করতে চেয়েছি। ঠিক সে কারণেই নজরুলের সাহিত্যকর্ম থেকে মধুমালা নাটক টি বেছে নিয়েছি এবং সেইসাথে যাত্রাপালা যেটি আমাদের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিক, যেটির প্রচলন ও চর্চা অনেকাংশেই কম, সেটিকেও আমরা এর সাথে যুক্ত করে নজরুলের নাটক অবলম্বন করে যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করেছি। প্রায় বিশজন শিক্ষক অভিনেতা ও ত্রিশজন শিক্ষক নানাভাবে এই প্রয়োজনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সবার সার্বিক সহযোগিতায় ও খুবই উৎসবমুখরতার সাথে মহড়া শেষ করে মঞ্চস্থ করতে পেরেছি।
তিনি আরও জানান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ দর্শক সমাগম ও যে পরিমাণ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি, সেটি আমাকে আনন্দিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকে প্রথমবার মঞ্চে উঠলো, আবার অনেকে আছেন দশবছর পর মঞ্চে উঠলেন, তারপরও সার্বিকভাবে সুন্দর একটি প্রযোজনা সফল করতে পেরেছি, এজন্য আমার বিশেষ ভালোলাগা রয়েছে।
যাত্রাপালাটি দর্শকসারিতে বসে উপভোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তার অনুভূতি জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি যারপরনাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে। তিনি জানিয়েছিলেন, নজরুলের যে নাটক তা প্রাচীন যাত্রাপালার সাথে মিলিয়ে হীরক মুশফিকের নির্দেশনায় আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী যে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন, আমরা আশা করি এই টিমটাকে আমরা ধরে রাখবো। ভবিষ্যতে উন্মুক্ত যাত্রামঞ্চ তৈরি করে অনেকগুলো মঞ্চায়ন হবে। আমরা মনে করি, এভাবেই নজরুলের রচনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আমাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা আধুনিক যুগ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া, যা আমাদের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
প্রসঙ্গত, মধুমালা কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি গীতিনাট্য। নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ১৯৬০ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। রূপকথা বা ঐতিহ্যের আদলে নাটকটি রচিত হয়েছে।মদনকুমারের স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা মধুমালা আর তাকে খুঁজতে গিয়ে প্রণয়ে আবদ্ধ কাঞ্চনমালা মধ্যে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ও মধুমালার ট্র্যাজিক পরিণতি নিয়ে এই নাটক। গদ্য সংলাপ, সুর ও কাব্য নিয়ে একসাথে অগ্রসর হয়েছে নাটকের গল্প।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐতিহ্য রক্ষায় অনন্য প্রয়াস মুক্তমত মোঃ আশিকুর রহমান সৈকত