আমাদের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় বড় খাতের একটি চামড়া শিল্প। বর্তমানে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা দেশে এবং দেশের বাইরে প্রচুর বিদ্যমান। চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু এজন্য শিল্পটিকে হতে হবে পরিবেশবান্ধব। একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও এ খাতের বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। সবচেয়ে বিস্ময়কর হল আমাদের চামড়ার বাজার। প্রতিবছর কোরবানীর ইদে চামড়ার দাম কমে যাওয়া একটা মারাত্বক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট। এছাড়াও ট্যানারীগুলো স্থানান্তর, অর্থ সংকটের মতো বড় সমস্যার কারণে এ শিল্পের ধস নামছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। যার অন্যতম উদাহারণ, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া।
উল্লেখ্য যে, আমরা চামড়ার জুতা কিংবা চামড়া জাতীয় পন্য কিনতে গেলে হাজার টাকার উপরে খরচ হয়। অথচ সেই চামড়াটাই এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছে না মানুষ। আবার এসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্যানারী মালিকরাও চামড়া কিনছে না সঠিক মূল্য দিয়ে। যারা চামড়া সংরক্ষণ করে তাদের ভাষ্য হলো, যে পরিমাণ চামড়া সংরক্ষণ করা আছে সেগুলো এখনও বিক্রি করতে পারেনি। তাই নতুন করে চামড়া সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে নেই। যে কারণে অল্প টাকায় চামড়া কেনা সম্ভব হলে কিনছে, অন্যথায় কিনছে না।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবছরও চামড়ার দাম কম। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অথচ বছরের পর বছর চামড়ার দাম কমছে। মূলত এটা একটা মারাত্বক সিন্ডিকেটের আওতায় পড়েছে। এবছরও চট্টগ্রামে চামড়া বিক্রি হয়েছে কম দামে। অনেকে সঠিক দাম না পেয়ে দান কওে দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। এবছর কোরবানি দিয়েছেন এমন একজন জানান, এখন মানুষ আর চামড়া বিক্রি করার চিন্তা করে না। কারণ চামড়ার কোনো দাম পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানায় দান করে দিয়েছেন।
এ-বিষয়ে আড়তদাররা সেই মুখস্থ কথাটাই বলে থাকেন প্রতি বছর। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম, তাই ট্যানারি মালিকরা বেশি দাম দিতে চায় না। মূলত একারণেই চামড়ার সঠিক দাম পাচ্ছে না কেউই। এবার বেশিরভাগ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করা থেকে বিরত ছিলেন। এটা শুধু চামড়া শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে একসময়। বর্তমানে আমাদের দেশে চামড়া শিল্পের বিপর্যয় চলছে। আর এ বিপর্যয়ের মাত্রা ২০১৯ সাল থেকেই ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে একসময় সত্যি সত্যি আমাদের চামড়া শিল্প হারিয়ে যাবে। তাই এসব সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরী। সরকারের উচিৎ এসকল সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা। এবং যে সকল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবেই চামড়া শিল্পের সুদিন ফিরবে বলে আমি মনে করি।
এছাড়াও চামড়া রফতানির জন্য বাইরের দেশগুলোর দিকে না তাকিয়ে আমাদের দেশে কীভাবে প্রক্রিয়াজত করা যায় এবং চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা যায় সেটা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। প্রয়োজনে পৃথিবীর যেসকল দেশসমূহ চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করে তাদের সাথে যৌথ উদ্যোগে আমাদের দেশে শিল্পকারখানা স্থাপন করা যেতে পারে। এতে করে দেশের মানুষের চাহিদাও মিটবে এবং চামড়াজাত দ্রব্য বাইরের দেশে রফতানি করে আরও অধিক মুনাফা অর্জন করা যাবে। আমরা যেহেতু নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি, আমরা অবশ্যই এই চামড়া শিল্পকেও রক্ষা করে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো।
লেখক: শিক্ষার্থী