Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষিকা থেকে রাষ্ট্রপতি!

মো. আশিকুর রহমান সৈকত
২৩ জুলাই ২০২২ ১৫:৩৬

দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতের প্রথম আদিবাসী নারী রাষ্ট্রপতি। দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে সদ্য নির্বাচিত। ২৫ জুলাই শপথ। ওড়িশায় ময়ূরভঞ্জের এক অখ্যাত গ্রাম থেকে দেশের এক নম্বর বাসিন্দা। সামান্য স্কুল শিক্ষিকা থেকে রাইসিনা হিলসে যাওয়ার পথটা মোটেই সুখকর ছিল না। এই পথ অতিক্রম করতে যেমন উৎসাহ পেয়েছেন, ঠিক তেমনই পরিবারের একাধিক খুব কাছের সদস্যদের দ্রৌপদী মুর্মু হারিয়েছেন খুব কম সময়ের ব্যবধানে।

বিজ্ঞাপন

১. নেই ভাষা ভিত্তিক রাজ্য—
ভারত স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে একের পর এক ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠন হয়েছে। কিন্তু সাঁওতালদের ক্ষেত্রে তা অপূর্ণই রয়ে গিয়েছে। সাঁওতালরা বাংলা, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড, দেশের এই তিন রাজ্যে বসবাস করেন। যখন তাঁরা ওড়িশায় থাকেন তখন ওড়িয়া, যখন বাংলায় থাকেন বাঙালি। এক্ষেত্রে তিনি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার একজন সাঁওতাল।

২. গ্রামে কিছুদিন আগেও বিদ্যুৎ ছিল না—
ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের রায়রাংপুরের অবস্থান বারিপাদা থেকে ৮২ কিমি দূরে। রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে ২৮৭ কিমি দূরে। দ্রৌপদী মুর্মুর গ্রাম পূর্ববেদায় কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না।

৩. পরিবারের সদস্য বিয়োগ—
দ্রৌপদী মুর্মুর প্রয়াত স্বামী শ্যামচরণ মুর্মু একটি ব্যাংকে কাজ করতেন। তাঁর একমাত্র জীবিত সন্তান ইতিশ্রী মুর্মু ভুবনেশ্বরের একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। অন্যদিকে তাঁর দুই ছেলে মারা যান ২০০৯ ও ২০১২ সালে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে।

৪. প্রাথমিক শিক্ষক থেকে সরাসরি রাজনীতিতে—
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরুর পরে তিনি সেচ বিভাগে জুনিয়র সহকারীর কাজ করেছেন। তাঁর বাবা ও দাদা উভয়েই পঞ্চায়েতে গ্রামপ্রধান ছিলেন। দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৯৭ সালে রায়রাংপুর পুরসভার সদস্য হন। পরে তিনি সেই পৌরসভারই চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন।

৫. ওড়িশায় বিধায়ক থেকে মন্ত্রী—
২০০০ সালে রায়রাংপুর থেকে তিনি বিধায়ক হন। বিজেপির সেবারের মন্ত্রিসভায় তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি বাণিজ্য, পরিবহণ, পশুপালন, মৎস্যচাষ দফতরের দায়িত্বও পালন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

৬. ২০১৫-তে রাজ্যপাল—
২০১৫ সালে দ্রৌপদী মুর্মু প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করার সময়ে তিনি ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯০৮ এবং সাঁওতাল পরগনা প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯৪৯-এ র সংশোধনীতে সম্মতি দিতে অস্বীকার করেন। কেননা দুটি ক্ষেত্রেই জমির অধিকার পরিবর্তন না করে, তা বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। ২০২১-এ তিনি রাজ্যপালের পদ থেকে সরে যান।

৭. মনোনয়নে অবাক হয়েছিলেন—
দ্রৌপদী মুর্মু এখন দেশের সর্বোচ্চ পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন এই পদের জন্য এনডিএ-র তরফে মনোনয়ন পান, তখন তিনি অবাকই হয়েছিলেন। প্রথম বিষয়টি তিনি শুনেছিলেন পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের কাছ থেকে। কেননা বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি খবরটি সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারেননি। আবার তিনি এই খবরে প্রথমে অবাক হয়েছিলেন, কেননা ২০১৭ সালেও রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়নের সময়ও তাঁর নাম উঠেছিল।

এত সংগ্রাম ও প্রতিকূলতাকে জয় করে ভারতের সর্বোচ্চ পদে আসীন দ্রৌপদী মুর্মুজিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, নিঃসন্দেহে তার জীবনসংগ্রাম সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

মুক্তমত মো. আশিকুর রহমান সৈকত শিক্ষিকা থেকে রাষ্ট্রপতি!

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর