মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিছিল কেন
২৩ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৩
ফুটপাতে একা হাটতেও ভয় হয়। কারণ আমি যে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কলম ধরি। যদি ওরা গুম করে মেরে নদীতে ফেলে দেয়। যানবাহনে উঠে গন্তব্য স্থানে যাওয়ার সময় বুকের ভীতর ভীষণ ভয় হয়। যদি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ টা কেড়ে নেয় কিংবা বিকৃত মানুষিকতার ব্যক্তির কষাঘাতে মেরুদণ্ড দুমড়ে মুচড়ে যায়। ধর্মীয় উপাসনালয়ে আশে পাশে যেতেও ভয় হয় কারণ যদি ধর্মান্ধতা গোষ্ঠী ধর্মের গুজব রটিয়ে প্রাণনাশ করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তমনে লেখতে কিংবা কথা বলতেও ভয় হয়। যদি ঐ উন্মাদের দল এসে নাটকীয় ভাবে আঘাত করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানোর পর্যন্ত ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ঘুমাতে হয়। কথা গুলো বলতে হচ্ছে কারণ যখন নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে ধর্মান্ধের দল ধর্মীয় স্লোগান তুলে উল্লাস করেছিল। যখন মিথ্যা অভিযোগে বিজ্ঞানের শিক্ষককে জেলে ঢুকিয়েছিল। যখন শিক্ষককে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলা হয়েছে অথবা উত্তরায় শিক্ষকের বাসায় জুম্মার নামাজের পর মৌলবাদী গোষ্ঠী ‘নারায়ে তাকবীর’ শ্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়েছিল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে নড়াইলে হিন্দু বাড়িতে একদল মানুষ সম্পদ লুটপাট করেছিল এবং আরেক দল মানুষ সম্পদ না পেয়ে ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়ে ছাই করে দিয়েছিল। তখন আমাদের ব্যক্তি জীবন কিংবা রাষ্ট্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে দেড় -দুই কোটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ এখনও রয়েছে। যাদের অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাদের নিরাপত্তা কি আছে। তা সব সময় রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে হয়। রাষ্ট্র কেন এইসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সহ্য করছে? কেন বাড়তে দেওয়া হচ্ছে ধর্মান্ধ অপশক্তিকে? প্রশ্নের জবাব কী রাষ্ট্র দিতে পারবে?
ফেসবুকে মন খুলে দু-চারটা লাইন লেখতে গিয়েও জলহীন পুকুরের মাছের মত জীবনের অবস্থা তৈরী হয়। এক দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর অপরদিকে ধর্মান্ধদের হুমকির চাপে মুক্তচিন্তার চেতনা হাসপাতালের আইসিইউ বেডে রাখতে হয়। অনেক সময় সমাজের কিছু বিজ্ঞ প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের মুখে পরামর্শের কথা শোনা যায় “আগে নিজের চিন্তা কর, তার পরে দশের চিন্তা” এক কেন্দ্রিক চিন্তা সমাজের পুঁজিবাদী চিন্তা আস্ফালন দেখা যায়। তবে দুঃখের বিষয় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমাজের কখনও কল্যাণ চায় না বরং নতুনভাবে কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক সংকট তৈরী করে শোষণের যন্ত্র সর্বদা চালু রাখার ব্যস্ত হয়ে থাকে। ফলে ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রিক চিন্তার অপর নাম যে পুঁজিবাদীচিন্তা। আর যার ফলে পুঁজিবাদ শুধু মুনাফা খোঁজে। মুনাফার প্রধান মাধ্যম হিসাবে ধর্মকে পুঁজি করে চলছে হরহামেশাই রাজনীতির নামে অপরাজনীতি। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বহুমুখী সংকটের মধ্যে অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কৃত্রিম আরও সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে এবং ভবিষ্যৎতেও করবে। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান বরাবরই বাঙালির সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চক্র করেছিল। শোষণ বঞ্চনার যাঁতাকলের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্র। সেই সেই রাষ্ট্র সংস্কৃতি কেমন চলছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে পৃথিবীর অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে যেমন টা আমাদের সংস্কৃতি। মোটাদাগে সংস্কৃতি কে দুই টা অংশে বিভক্ত করা হয়। একটি হলো বস্তুগত সংস্কৃতি আর আরেকটি হলো অবস্তুগত সংস্কৃতি। বস্তুগত সংস্কৃতি হচ্ছে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট যানবাহন ইত্যাদি। বলার অপেক্ষা রাখে এই সংস্কৃতির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে অবস্তুগত সংস্কৃতি অর্থাৎ যা দেখা যায় না কিন্তু কল্পনা কিংবা অনুভব করা যায় যেমন দেশীয় সংস্কৃতির গান ও ইতিহাস ঐতিহ্য। ফলে বলা যায় অবস্তুগত সংস্কৃতির শিকল টেনে ধরার যড়যন্ত্র চলছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ভাববাদী সংস্কৃতির আধিপত্যের কারণে হিংসা, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চলেছে। এর শেষ কোথাও? সাম্প্রদায়িক সহিংসতার লাগাম টানবে কে? ভোটের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ কি বলির পাঁঠা হয়ে থাকবে?
প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজার আগে স্বাধীনতার ৫১ বছরের বাংলাদেশ আজ কোন পথে? কেমন চলছে শিক্ষা পদ্ধতি? শিক্ষার্থীরা কোন মানুষিকতায় গড়ে উঠে? ঘটনার ক্রমে বলতেই হয় জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করা এক সাবেক শিক্ষার্থী মেসে থাকে চাকুরীর প্রস্তুতি জন্য। তিনি ধর্মে মুসলিম । ঐ মেসে সবাই মুসলিম ছাত্র। কোনো এক দিন তাদের মেসের সদস্যদের মধ্যে একজনের বন্ধু আসে রাতে আসে মেসে থাকার জন্য কারণ পরের দিন কলেজে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। তবে তিনি ছিলেন অমুসলিম। যার ফলে ঐ মাস্টার্স পাশ করা সাবেক শিক্ষার্থী বিষয় টি মেনে নিতে পারে না কারণ মুসলিম মেসে অমুসলিম ব্যক্তির থাকা ও খাওয়া না কী চরম ধর্ম বিরোধী কাজ। ফলে তার মেসের ঐ সদস্যকে ভবিষ্যৎতে যেন অমুসলিম বন্ধু মেসের মধ্যে না নিয়ে আসে তা কঠিন ভাবে শর্তক করে দেন। বিষয় টি সামান্য ঘটনা হলেও ভাবতে হবে। কারণ একজন মানুষ বিপদে পড়ে অন্যের সহযোগিতা নিবে এটাই তো স্বাভাবিক কিন্তু সহযোগিতা তো দূরের কথা ভিন্ন ধর্ম বলে তাকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এমন মানুষিকতার মানুষ কোটি কোটি আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানুষ প্রবেশ করে মনুষ্যত্ব বোধের মানুষ তৈরী জন্য কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে যদি সাম্প্রদায়িক মানুষিকতার হয় তাহলে তখন রাষ্ট্রের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। ধ্যানে জ্ঞানে মগজে কোন মানুষিকতায় গড়ে উঠেছে আমাদের জ্ঞানপিপাসুরা? তবে বলতেই হয় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামাজে নতুন করে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি গড়ে উঠতে শুরু করছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিকৃত রুচি, ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনবোধ, হিংসা, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি সাজানো হচ্ছে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। ফলে রাষ্ট্র ও রাজনীতি তাই সাম্প্রদায়িকতার স্তর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
কোন সংস্কৃতিতে একটি সমাজ গড়ে উঠবে তার নীতিনির্ধারক হিসাবে কাজ করে রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্রের যিনি শাসক থাকেন তিনি সমাজের সংস্কৃতি গড়ে তুলেন। তবে আমাদের দেশে বর্তমানে যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সেই সরকার তো মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার। অর্থাৎ মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রতিশ্রুতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। এমনি বর্তমান সরকারের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথার বিভিন্ন রকমের ফুলঝুরি শোনা যায় কিন্তু বাস্তবে কি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা হয়? ইতিহাসের পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে ১৯৪৭ সালে ভারতে যে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় সংবিধান গ্রহণ করা হয়েছিল বর্তমান ভারতের ক্ষমতাসীন সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি তা শেষ করে ফেলছে। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সমাজে সাম্প্রদায়িকতা চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশেও ৭২ এর সংবিধানও সংশোধন করে ফেলা হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম বিলসহ অনেক সাম্প্রদায়িক সংশোধনী এনে তার মূল ৪টি স্তম্ভ শেষ করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে। সমাজ বিশ্লেষকরা বলে থাকেন যে, শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শোষণব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শাসকশ্রেণি সমাজের সংস্কৃতি তার সুবিধামত নির্মাণ করে। তাঁরা যত বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়, সে সমাজের সংস্কৃতি ততটাই প্রতিক্রিয়াশীল হতে বাধ্য। আমাদের রাষ্ট্রের মধ্যে সেই চরিত্র গুলো স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু কী বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটছে? উত্তর হচ্ছে না সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে এমন ঘটনা ঘটেই চলছে এর প্রধান কারণ বিশ্ব পুঁজিবাদ প্রত্যেক রাষ্ট্রকে গ্রাস করে নিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের নতুন নতুন পথ তৈরী করছে। যার ফলে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি চাষ করা হচ্ছে। ধর্মে ধর্মে আর সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে হিংসা-বিদ্বেষ ক্রমাগত লেগেই আছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বর্তমানে সোনার হরিণের মত। তা খুঁজে পাওয়া বড় মুশকিল। এতে করে শ্রমিক শ্রেণির মানুষের বিভিন্ন ভাবে শোষিত হচ্ছে। এখন দেখা যাক বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিসংখ্যান।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে,২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর ৯ মাসে হিন্দুদের ওপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি। আর এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন। এর বাইরেও ২০১৪ সালে দুজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন। শ্লীলতাহানি করা হয় আরো চার জনের। এছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ১০টি হিন্দু পরিবারকে জমি ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের অভিযোগ ওঠে।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক দাবি করেছেন ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত হিন্দুসম্প্রদায়ের ৭৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৪৬৮টি বসতবাড়ি হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট, ৩৪৩টি অগ্নিসংযোগ, ৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ২১৫৯.৩৬ একর ভূমি দখল এবং ৪১৯.৬৩ একর দখলের তৎপরতা চালানো হয়েছে। মন্দিরের জমি দখল ২৯টি, ৫০১টি সংঘবদ্ধ হামলা, ৫৬টি মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, ২১৯টি প্রতিমা ভাঙচুর, ৫০টি প্রতিমা চুরি, ৬৩টি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনাও ঘটেছে দেশে। ৫৭টি ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান অপবিত্রকরণ, ৬০টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা, ১০০ জনকে ধর্মীয় নিষিদ্ধ খাবার খাওয়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এভাবে যদি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মিছিল ও ধর্মের গুজবের মিছিল তৈরী হয় তাহলে কী দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে? মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের শাসন আমলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিগত সরকারের শাসন আমলে কি সংখ্যালঘু মানুষ নিরাপদে ছিলেন? ২০০১ সালে আমাদের দেশে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল তখনও দেখে যেত সারাদেশে নির্বিচারে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ নিত্য দিনের ঘটনা। যার উদাহরণ হিসাবে বলা যায় চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপালকৃষ্ণ মহুরী। তিনি ১ নভেম্বর ২০০১ সকালে বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন তখন জামায়াত-শিবিরের একদল ঘাতক তাঁকে মাথায় গুলি করে নিজ বাড়িতেই। পত্রিকায় প্রকাশিত সেই রক্তাক্ত বীভৎস ছবি কেউ ভুলে যায় নি।
আজও বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত হচ্ছে, আগুন জ্বলছে ঘরবাড়ি নিয়মিত। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অজুহাতে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করতে হবে। রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লা, শাল্লাসহ অতীতের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। প্রতিনিয়ত তারা জমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে। বান্দরবানের লামায় ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের জমি দখল করে রাবার বাগান করার চক্রান্ত করছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আদিবাসী নেতা রংধজন ত্রিপুরার উপর ভূমিদস্যুরা হামলা করে তাকে আহত করে। লামায় ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়েী জমি দখলকারী ভূমিদস্যু রাবার মালিককে গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষা-সংস্কৃতির মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক সিলেবাস দিয়ে ছাত্রদের মনোজগৎ মনুষ্যত্ব বোধের মানুষ রূপে গড়ে তুলতে হবে। দেশিয় শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। সমাজের সংস্কৃতিতে কুসংস্কার, কুপমণ্ডুকতা, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার কুফল সম্পর্কে বুঝাতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারী দলীয় সুবিধায় যেন পার পেয়ে না যায় সেই দিকে রাষ্ট্রকে কঠোর নজর দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতে হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিছিল কেন মুক্তমত রাশেদুজ্জামান রাশেদ