Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে, কি অবস্থা বাংলাদেশের?

রহমান মৃধা
২৭ জুলাই ২০২২ ১৮:১৪

২০১৯ এর শেষ এবং ২০২২ এর শুরু অবধি সময়ে গোটা বিশ্ব বলতে গেলে শুধু সঞ্চয়ের অর্থে চলছে। পণ্যদ্রব্যের সংকট থাকা সত্ত্বেও অধিক অর্থ ব্যয় করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মিটানো হয়েছে। জমানো অর্থ খরচ করে চাহিদা মিটানো হয়েছে যা কারো অজানা থাকার কথা নয়। করোনার ভয়াবহতা কমার সাথে সাথে মানুষ জাতি চলাফেরা, কেনাকাটা, জোরালোভাবে চালু করতে শুরু করে। মূলত, ভয়ংকর দুটো বছর পার করার পরও, কেও তেমন অর্থের বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না, যদিও এমনও সময় গেছে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করেছি, যেমন: বাঁচবো নাকি মরবো। ঠিক তেমনি একটি সময়ে কেও ভাবেনি কি হবে আমাদের, যদি বেঁচে থাকি। তারপর করোনা যখন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলো মূলত সবকিছু নতুন করে গড়ার কাজে সবাই চেষ্টা চালাতেই ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ!

বিজ্ঞাপন

প্রথমদিকে বিষয়টি জানিনে কে কীভাবে নিয়েছে। তবে, এখন কিন্তু গুরুতর সমস্যার মুখামুখি বিশ্ব তথা বাংলাদেশ এবং আমি, তুমি, সে।

আমেরিকা ধনী দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তার দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য। ইউরোপ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং কীভাবে কি করা যায় ভেবে দেখছে। রাষ্ট্রপ্রধান পদ ছাড়ছে যেমন: যুক্তরাজ্য, ইটালি। প্রতিটি দেশেই কম বেশি অর্থনৈতিক সংকটের ঘণ্টা বাজাতে শুরু করেছে। কোন কোন দেশ দেওলিয়ার পথে বা হয়ে গেছে, শ্রীলংকা তার মধ্য অন্যতম।

আমরা, বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো করতালির সঙ্গে বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ এমনটি হবে বলে ঢোলডাগর, বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শুরু করেছি। কিন্তু অভাগা দেশের কি হবে বা কি আমাদের করণীয় বা বর্জনীয়, সরাসরি সে ধরনের কোন প্রি-প্লান বা লং-রেঞ্জ প্লান আমার চোখে পড়ছে না যা একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাকে বেশ বিষন্নতায় ফেলেছে, মূলত সে কারণেই আমার ভাবনা থেকে এ লেখা।

বাংলাদেশ যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন এবং সে অর্থের বেশির ভাগই এসেছে বিদেশী ঋণ থেকে যা বিলিয়ন ডলারের ঋণ।

২০২৩ সাল থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। ঋণ নেওয়া যত সহজ তা শোধ করা কিন্তু ততো সহজ হবে না, দেশের অবস্থা ২০২৩-২৪ সাল থেকে কেমন যাবে সেটা বলা কঠিন তবে যদি রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দেয় তবে পরিস্থিতি ভালো যাবে বলে মনে হয় না।দেশে যদি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে, যেমন: রপ্তানি যদি ঠিক মত না হয় যুদ্ধের কারণে বা রেমিটেন্সের পরিমাণ কমতে থাকে তাহলে অনেকেই পরামর্শ দিবে নতুন করে ঋণ নিতে। কারণ তাদের পরামর্শ, রিজার্ভ কমে যাওয়া মানে হচ্ছে অর্থনেতিক সক্ষমতা কমে যাওয়া। কিন্তু ঋনের অর্থে রিজার্ভ বৃদ্ধি!

বিজ্ঞাপন

অনেকেই বলবে এই প্রথম রিজার্ভের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। এর আগে বাংলাদেশের রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ইত্যাদি।

নানা জনে নানা বিশ্লেষণ দিবে, যেমন আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, সেই অনুপাতে রপ্তানি না বাড়া, রেমিটেন্স কমে যাওয়া এবং ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন- প্রভৃতি কারণে রিজার্ভ কমে গেছে। আর জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় আরও বেড়ে গেলে রিজার্ভে কমতে থাকবে। তবে জ্বালানির এই সংকটের পেছনে কারা দায়ী? তাদেরকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি, মনে করে দেশের মানুষ।

দেশে সাধারণভাবে তিন থেকে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকার কথা বলা হলেও বর্তমান বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে থামবে তা কি কেউ জানে? তবে রিজার্ভ কমে যাওয়া মানে অর্থনৈতিক শক্তি কমে যাওয়া এটা অনেকেই ইঙ্গিত করছে। হ্যাঁ কথাগুলো সঠিক তবে এর জন্য যে কারণ গুলো বেশি জড়িত তার মধ্যে বর্তমান যুদ্ধ এবং করোনা বলবে সরকার, বলবে কতৃপক্ষ।

আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমতে থাকলে রিজার্ভও কমতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে প্রবাসীদের আয় কমতে থাকলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

বেশির ভাগ প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে সব জায়গায় কাজ করে তার মধ্যে রয়েছে হকার ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, ট্যুরিস্টদের নানাভাবে সাহায্য করা। যেহেতু এসব সেক্টরগুলো বিদেশে খারাপ যাচ্ছে ফলে বাংলাদেশীদের আয় কমছে। প্রবাসী আয় কমার কারণে গত অর্থ বছরে রেমিটেন্স নিশ্চয়ই অতীতের মত দেশে আসে নি।

আশঙ্কার অপেক্ষায় না থেকে দ্রুতই রিজার্ভ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। রেমিটেন্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।অনেকেই বলবে একমাত্র ইতিবাচক জায়গা হলো বৈদেশিক সাহায্য।

আমি মনে করি এ ধরনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যারা শুধু বৈদেশিক সাহায্য নিতে সরকারকে উপদেশ দেয় তাদের চাকরিচ্যুত করা উচিত। বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া কি অন্য কোনো উপায় নেই?

কূটনৈতিক থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তাদের ক্রিয়েটিভ হতে হবে। ম্যান পাওয়ারকে আরো দক্ষ করে নানা দেশে পাঠাতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীদের নানাভাবে সাহায্য করতে হবে যাতে করে তারা সময়মত তাদের জিনিসপত্র সঠিক জায়গায় পাঠাতে পারে। ধার করা বন্ধ করতে হবে এবং সর্বোপরি ঘুষ না দিলে কাজ দ্রুত হবে না এসব বন্ধ করতে হবে, নইলে বেশি দিন বাকি নেই। দেশের অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে থাকবে।

মনে রাখা দরকার, বিশ্বে সমস্যা চলছে এবং সমস্যা মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। পুঁজিবাদীরাই আজীবন এমনটি করে আসছে। সজাগ থাকতে হবে শুরু থেকে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় নাসা ৫০০ মিলিয়নের বাজেটের কাজকে বৃদ্ধি করে ১০ বিলিয়নে এনেছে। এটা নিয়ে কথা কম তবে কীভাবে ৪৬০ কোটি বছর আগের মহাকাশের ছবি তোলা সম্ভব এটা এখন আলোচনার বিষয়! ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সব থেকে বেশি দেনাদার রাশিয়া, চীন ও জাপানের কাছে। দেনার গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ এখন পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় অংকের দেনা পরিশোধ করতে হবে কিন্তু সে ঋণ পরিশোধ করতে নতুন ঋণ নিলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে সেটা নিয়ে কথা নেই, কথা চলছে অন্যান্য বিষয়ে। অথচ সংকটে আমাদের ক্রিয়েটিভ হতে হবে সেটা আমরা ভুলে যাচ্ছি!

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে- কি অবস্থা বাংলাদেশের? মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর