অগ্রগতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
১৭ আগস্ট ২০২২ ১২:৫৭
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি কিংবদন্তি। পৃথিবীর প্রত্যেক জাতিকে পরাধীনতার প্রকট অন্ধকার থেকে মুক্ত করে আলোর পথ দেখানোর জন্য একজন মহান নেতার আবির্ভাব ঘটে। আর বাঙালির সেই মহান নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের পাতায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বনেতাদের পাশে তিনি নিজ কর্ম ও ত্যাগের মহিমায় চিরস্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু ব্যতীত কোনো নেতা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন কিনা তা আমার আসলেই জানা নেই। কোনো প্রকার জাগতিক মায়া বা লোভ-লালসা তাকে পথচ্যুত করতে পারেনি, পারেনি ফাঁসিকাষ্ঠের ভয়ও। আর ঠিক এইজন্যই যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে, এ বাংলার মাটির প্রত্যেক কণায় কণায় বঙ্গবন্ধুর নাম লেখা থাকবে।
বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেন জাতির পিতা। শৈশব থেকে মানুষকে যে অত্যাচার সহ্য করতে দেখেছেন, তা থেকে তার জাতিকে মুক্ত করে একটি আত্মনির্ভরশীল এবং উন্নত দেশে পরিণত করাই ছিল তার স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়ার ভিত্তিমূলে যে উদ্দেশ্যটি বঙ্গবন্ধুর ছিল তা হলো একটি সোনার বাংলা গড়ে তোলা। প্রথমে ব্রিটিশরাজ দু’শ বছর এবং তারপর পাকিস্তানের বর্বর শাসকগোষ্ঠী ২৩ বছর ধরে এ বাংলার সর্বস্ব লুট করেছে। এককালের অতি সম্পদশালী বাংলার অর্থনীতিকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। তাই ১৯৭২ সালে দেশের শাসনভার গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু অনেক অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, একটি নিঃস্ব জাতি কখনোই সম্পদ ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনা। এজন্য তিনি পুঁজিবাদের বদলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন, যার মূল লক্ষ্য একটি দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। তাই সংগত কারণেই এটিকে আমাদের রাষ্ট্রীয় ৪টি মূলনীতির একটি করা হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে সাড়ে তিন বছর যাবৎ বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসকল দেশের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। তিনি সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে বিনয়ী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু কখনো আত্মসম্মানের বিনিময়ে কারো শরণাপন্ন হননি আর হতেও চাননি। এজন্যই তিনি বারবার জাতিকে ঘুষ-দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দেন, নিজ দেশে উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন এবং সেই অনুযায়ী উদ্যোগও নেন। কেননা তিনি কখনোই নিজ দেশকে অন্যের দাস বানাতে চাননি, কিংবা আত্মসম্মানের বিনিময়ে অন্য দেশের উপর অতিরিক্ত চাপও প্রয়োগ করতে চাননি। আর এসব কিছুর উদ্দেশ্য তার একটি কথার মধ্যেই স্পষ্ট- ‘ভিক্ষুকের জাতের কোনো ইজ্জত নেই’।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে অংশের কথা একদম না বললেই নয় তা হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। তিনি আগাগোড়াই এমন একটি দেশ গড়তে চেয়েছিলেন যেখানে কারো পরিচয় না হিন্দু, না মুসলমান- বরং শুধুই মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়ই সে মানুষ। তাই রাষ্ট্রীয় উন্নতিসাধন কিংবা রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি দৃঢ়ভাবে ধর্মকে বাধা হওয়া থেকে বিরত রাখতেন। কারণ তিনি জানতেন যে ধর্ম বা কোনো বিশেষ ধারণার নামে নষ্ট রাজনীতি মানুষের ঐক্যকে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য যথেষ্ট।
১৯৭২ সালে ক্ষমতায় আসার পর জাতির জনক প্রতি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এদেশ গড়ার কাজে। পাক হানাদার বাহিনী দেশ ছেড়ে চলে যায় ঠিকই, কিন্তু নিজেদের ছাপ রেখে যেতে ভুলে যায়না। পথে-ঘাটে, নদীতে নদীতে তখন বইছিল ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বন্যা। না ছিল চাল, না ছিল ডাল, না ছিল রাস্তা। কিন্তু ছিল দেশকে সারিয়ে তোলার অদম্য মনোবল। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু সরকার যে গতিতে উন্নতিসাধন করেন তা বোধ হয় বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কোনো সরকারই করতে পারেনি। আমার মতে মাত্র একটি উদাহরণই যথেষ্ট। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৪ ডলার, ভারত ও পাকিস্তানের যা ছিল যথাক্রমে ১২৩ এবং ১৫৩ ডলার। কিন্তু মাত্র ৩ বছরে এক লাফে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হয় ২৭৮ ডলার, যা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশই নয় বরং এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বেশি ছিল। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে হয়ত আজ বাংলাদেশের নাম উন্নত দেশগুলোর তালিকায় স্থান পেত।
কিন্তু অব্যাহত ছিলনা সেই ধারাবাহিকতা, না ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় নৃশংসতার চরম মাত্রা অতিক্রম করে হত্যা করা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং তার গোটা পরিবারকে। আর সেইসাথে ভেস্তে দেওয়া হয় সম্ভাবনাময় এই দেশের উন্নতির শোভাযাত্রাকে। যার কলঙ্ক থেকে আগস্ট আমাদের ৪৭ বছরেও ক্ষমা করেনি, আর কোনোদিন করবেও না। ১৫ ই আগস্ট জাতিকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতার লোভের ফল আজ আগস্টের অশ্রু গড়ায়, অশ্রু গড়ায় বাংলা মায়ের, অশ্রু গড়ায় বাঙালির।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অগ্রগতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদনান কাদির মুক্তমত