Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?

সামিহা খাতুন
১৮ আগস্ট ২০২২ ১৯:১২

সভ্যতার এ যুগে এই প্রহসনের শেষ কি আদৌ আছে। একটি সভ্য সমাজে বসবাস করা সত্ত্বেও সভ্যতার চূড়ান্ততে পৌঁছানোর পরেও একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সর্বদাই শোষিত, অবহেলিত হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে আড্ডা দেয়ার ক্ষেত্রে, সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করার ক্ষেত্রে চায়ের কথা সকলের মাথায় আসলেও এই চা শ্রমিকদের ১২০ টাকা মজুরির অসুন্দর এবং মানবেতর জীবনের কথা কারো মাথায় আসে না। এই মজুরি নিয়ে চা শ্রমিকদের গল্প আধুনিক যুগের কল্পকথার মতই মনে হয়। অথচ এই অল্প টাকা দিয়েই পরিবার নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে চাষ শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বড় বড় চা বাগানের সংখ্যা ১৫৮টি। এসব চা বাগান ১ লাখ ১২ হাজার ৭৪৫ দশমিক ১৫ হেক্টর জমিজুড়ে। এসব বাগানে কাজ করেন ১ লাখ ৪০ হাজার ১৮৪ জন শ্রমিক। এসব শ্রমিকের মধ্যে নিবন্ধিত শ্রমিক ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন এবং অনিবন্ধিত ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন। উভয় প্রকার শ্রমিকের মধ্যে পুরুষ ৬৯ হাজার ৪১৫ এবং নারী ৭০ হাজার ৭৬৯ অর্থাৎ নারী শ্রমিকের সংখ্যা পুরুষ শ্রমিক থেকে ১ হাজার ৩৫৪ জন বেশি- এ হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অধীন বাংলাদেশ চা বোর্ডের। অথচ একজন চা শ্রমিক যদি দৈনিক ২৪ কেজি চা-পাতা তুলতে পারে তাহলে সে মজুরি পায় ১২০ টাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা ২৪ কেজি চা পাতা দৈনিক তুলতে পারেনা, ১৫ থেকে ১৬ কেজি তোলেন সর্বোচ্চ। আর যারা একটু বয়স্ক তাদের চা পাতার তোলার পরিমাণ আরো কম ফলে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৈনিক তারা পরিপূর্ণ ১২০ টাকাও পায়না। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের এরূপ ঊর্ধ্বগতির সময় চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা চেয়ে যে আন্দোলন করছেন তার যৌক্তিকতা এই দুর্দিনে অত্যন্ত বেশি। দ্রব্যেমূল্যের বাজারদর লক্ষ্য করলে দেখা যায় চালের কেজি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেলের দাম ১৯৫ টাকা, এক হালি ডিমের দাম ৬০ টাকা অর্থাৎ তিন বেলা পরিবারের সদস্যদের অন্ন যোগান করার অর্থ তাদের মজুরি হিসেবে দেওয়া হয় না।

বিজ্ঞাপন
চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা চেয়ে যে আন্দোলন করছেন তার যৌক্তিকতা এই দুর্দিনে অত্যন্ত বেশি

চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা চেয়ে যে আন্দোলন করছেন তার যৌক্তিকতা এই দুর্দিনে অত্যন্ত বেশি

আমাদের দেশে চা চাষের ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং পুরাতন। বর্তমান বিশ্বের বাংলাদেশ বৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ ও রপ্তানিকারক দেশ। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও নানা প্রতিকূলতার মাঝে একটি কড়ি আর দুটি পাতা ছিড়ে সৌখিন মানুষের কাপে চা পৌঁছে দিচ্ছে চা শ্রমিকরা অথচ তাদের জীবনটা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরির চক্রেই বাধা পড়েছে। স্বল্প মজুরীতে ক্রমবর্ধমান পরিবারের চাহিদা মেটাতে একই পরিবার থেকে অনেকেই চা বাগানে কাজ নিতে শুরু করে। পরিবার আলাদা হয়ে গেলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের নতুন আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়। এই স্বল্প মজুরীতে যেখানে তাদের জীবন ধারণই কঠিন সেখানে তাদের কেউ টাকা সঞ্চয় করে জমি কিনে মূলধারার সমাজে বসবাস শুরু করবে এই চিন্তাটিও করা কঠিন। যে চা শ্রমিকদের শ্রমে প্রতিবছরে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও তাদের ছেড়ে যায়নি দরিদ্রতা। চা বাগানে লক্ষাধিক চা শ্রমিক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখনো তাদেরকে বেতন বৈষম্যসহ নানা বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমান সময়ে জীবন চলানোর মতো উপযোগী করে বেতন বৃদ্ধি চা শ্রমিকদের প্রধান দাবি।

এদেশের নাগরিক হিসেবে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর দরকার একটু সহানুভুতি, ভালোবাসা আর মানুষ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর অধিকার। বর্তমান সরকারের উচিত এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া। বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম যে অধিকারগুলো দরকার, যে মজুরি দরকার তা ন্যায্যভাবে চা শ্রমিকদের পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। কেননা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য হিসেবে চা উৎপাদনে এই জনগোষ্ঠীর ভূমিকা অতুলনীয়। সর্বোপরি চা শ্রমিকরা তাদের মজুরি বৃদ্ধির ন্যায্য দাবি আদায়ের মাধ্যমে একটি সচ্ছল জীবনের হাতছানি পাবে এই আশায় ব্যক্ত করা যায়।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়? মুক্তমত সামিহা খাতুন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর