Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর্থ ওভারশট ডে: বাঁচাতে হবে আমাদের পৃথিবীটাকে

তানভীর মাহতাব আবীর
২২ আগস্ট ২০২২ ১৫:৩৪

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বাসস্থান এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাপেরও প্রয়োজন। আমাদের গ্রহের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো এই চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। যেহেতু প্রাকৃতিক সম্পদ খুবই সীমিত তাই প্রশ্ন আসতে পারে, ঠিক কতটুক সম্পদ আমরা ব্যবহার করবো? এই প্রশ্নের উত্তর বাস্তুতান্ত্রিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বের করা যেতে পারে।

বাস্তুতান্ত্রিক পদক্ষেপ (ইকোলজিক্যাল ফুটপ্রিন্ট) কী? এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। এটি এমন এক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আমাদের চাহিদার বিপরীতে প্রাকৃতিক সম্পদের যোগান নিয়ে কাজ করে৷ মানুষের অপরিকল্পিত এবং বিবেচনাহীন প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার প্রতিনিয়তই প্রভাব ফেলছে প্রকৃতির যোগানের উপর। বাস্তুতান্ত্রিক পদক্ষেপ পৃথিবীর উৎপাদনশীল সক্ষমতার বিপরীতে মানুষের চাহিদা পরিমাপ করে। এই সক্ষমতা ইংরেজিতে বায়োক্যাপাসিটি নামে পরিচিত। এটি হলো জৈবিকভাবে উৎপাদনশীল জমি এবং সমুদ্র ক্ষেত্র যা মানুষের ব্যবহৃত সম্পদ সরবরাহ করতে এবং আমাদের বর্জ্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয়।

বাস্তুতান্ত্রিক পদক্ষেপের বহুল আলোচিত উপাদানটি হলো কার্বন ফুটপ্রিন্ট। এটি হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানী ও অন্যান্য উৎসের জ্বালানী পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট কার্বন ডাইঅক্সাইডের শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ। এর মতো করে এই বাস্তুতান্ত্রিক পদক্ষেপের অন্যান্য উপাদানগুলোও অবদান রাখছে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে।

মানুষের চাহিদা পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এমন ঘটনা প্রথম ষাটের দশকে লক্ষ্য করেন বিজ্ঞানীরা। তারপর থেকে প্রতিবছরই এর হার বাড়ছে। ২০১৪ সালে এর হার পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

২০১৪ সালের হিসেব বলছে, প্রতিটি মানুষের বিপরীতে পৃথিবীর এই বায়োক্যাপাসিটির মোট পরিমাণ ছিল ১.৭ গ্লোবাল হেক্টর। কিন্তু মানুষ প্রতি এই চাহিদা ছাড়িয়ে গেছে ২.৬ গ্লোবাল হেক্টরে। অর্থাৎ সব মানুষের প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদা পূরণের জন্য ১.৫৩টি গ্রহের প্রয়োজন! চাহিদার এই বিশাল ফারাক প্রতি বছরই বাড়ছে। চলতি বছর এসে সেই চাহিদা ঠেকেছে ১.৬টি গ্রহে। অর্থাৎ আমরা বছরব্যাপী প্রকৃতির যে সম্পদ ব্যবহার করি সেটি প্রকৃতিতে তৈরি হতে দেড় বছরের বেশি সময় লেগে যায়। এটিকেই বলা হচ্ছে ওভারশট। আমরা গত ষাট বছর ধরেই এই ওভারশটের সম্মুখীন হচ্ছি।

ওভারশটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকেই ‘রেড’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মানে সেসব দেশ তাদের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার করছে। জনসংখ্যার আধিক্য এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাব এই অবস্থার সৃষ্টি করে দিচ্ছে। বাংলাদেশও আছে সেই তালিকায়। বাংলাদেশ বায়োক্যাপাসিটির তুলনায় ১০৭ শতাংশ বেশি প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করছে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে সিঙ্গাপুর। শতাংশের হিসেবে তাদের হার ৯৯৫০। পরিবেশগত ঘাটতিজনিত বেশকিছু কারণে হতে পারে, এর মধ্যে অতিরিক্ত মাছ আহরণ, এক এলাকা থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আরেক এলাকায় স্থানান্তর এবং দেশের নিজস্ব বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থায় শোষণ চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা অন্যতম।

দেশে দেশে এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর যে দিনটিতে চাহিদার এই ফারাক সৃষ্টি হয় সেই দিনটি ‘আর্থ ওভারশট ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। চলতি বছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালিত হচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্কের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে মানুষকে সচেতন করাই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য।

গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী লরেল হ্যান্সকম বলছেন, ‘এটি এমন একটি সূচক যেটি আপনাকে সতর্ক করবে, উচ্চ স্তরে গিয়ে বুঝতে সাহায্য করবে পরিস্থিতির নাজুকতা সম্পর্কে।’

গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের প্রভাবে প্রায় ৯.৩ শতাংশ হারে কমেছে মানুষের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের চাহিদা। এটিকে সাফল্য না বললেও সংস্থাটি এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশগুলোকে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু এবং পরিমিত ব্যবহারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি পাঁচটি মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কাজ করছে।

‘মুভ দ্যা ডেট’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পরিচালিত এই উদ্যোগে সংস্থাটি বলছে, বিশ্বজুড়ে ৩৫০ মিলিয়ন হেক্টর জমি যদি বনায়ন করা যায় তাহলে আরও আটদিন দেরীতে আসবে দিবসটি। ঠিক একইভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার যদি ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া যায় তাহলে আরও ১৩ দিন পিছিয়ে দেয়া যাবে দিবসটি৷ বৈশ্বিক খাবারের অপচয় ৫০ শতাংশ কমালে দিবসটি আসবে ১৭ দিন দেরীতে। জনসংখ্যার একটা বড় প্রভাব আছে এই ওভারশটে।

গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক বলছে, প্রত্যেক পরিবারে যদি একটির বেশি বাচ্চা না নেওয়া হয় এবং দুই বছরের জন্য সন্তান জন্মদান বন্ধ রাখা যায় তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ দিবসটিকে পেছানো যাবে ৪৯ দিন। তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে তখনই যখন কার্বন নিঃসরণের হার অর্ধেকে নেমে আসবে। এতে করে দিবসটি পিছিয়ে যাবে অন্তত তিন মাস!

ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সকলকেই তাই এগিয়ে আসতে হবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে। প্রাকৃতিক সম্পদের সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করে নজর দিতে হবে পুনর্ব্যবহারে। করতে হবে বনায়ন, কমাতে হবে কার্বন নিঃসরণের হার। তবেই বাঁচবে আমাদের এই পৃথিবী।

লেখক: শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আর্থ ওভারশট ডে: বাঁচাতে হবে আমাদের পৃথিবীটাকে তানভীর মাহতাব আবীর মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর