Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চা শিল্পের ভবিষ্যৎ রক্ষায় শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করুন

আবির হাসান সুজন
২২ আগস্ট ২০২২ ১৭:০০ | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪৯

চা শিল্পের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো। কিন্তু অতীত আর বর্তমানের মধ্যে অনেক ফারাক। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চা শিল্প আজ স্বাধীন দেশের একটি উন্নয়নশীল শিল্পের খাতায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছে। অর্থকরী ও ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পখাত এখন সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে। প্রথম চা গাছ রোপণ থেকে ধরলে বাংলাদেশে চা শিল্পের বয়স ১৭৮ বছর। সুদীর্ঘ এ সময়ে দেশের মানচিত্র বদলেছে দু’বার৷ তবে চা শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য কমেনি আজও।

ইংরেজ আমলে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল পাহাড়ি টিলা আর ঢাল পরিষ্কার করে চা-বাগানের সূত্রপাত করেছিল। বিনিময়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মানুষেরা চা-শ্রমিকের কাজটিই করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ চা-বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সব মিলিয়ে ২৫৬টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ তিন হাজারের উপরে। অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ হাজার। চা-বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশের ১৬৭ চা-বাগানে ৫ লাখের বেশি চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় এক লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে ৫ জনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তা সম্ভব না।

প্রতিটি চা-শ্রমিককে দিনে ২৩ কেজি চা-পাতা তোলার টার্গেট দিয়ে দেয়া হয়। বাগান বিশেষে হয়তো এই টার্গেটটি ১৮ থেকে ২৪ কেজিতে উঠানামা করে। তবে এই টার্গেট দিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি সিলেটের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য চা-বাগানেও আছে। আর এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে কাটা যায় মজুরি। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে যেমন মজুরি কাটা যায় তেমনি টার্গেটের চেয়ে বেশি পাতা তুলতে পারলে প্রতি কেজি পাতার জন্য দুই থেকে তিন টাকা বাড়তি মজুরি দেয়া হয়। যা স্বাধীন দেশের নাগরিকের উপর মজুরি বৈষম্যের পূর্বশর্ত।

এই দিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সময় শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু চুক্তির ১৯ মাস অতিবাহিত হলেও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করেনি মালিক পক্ষ।

এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তারা যে মজুরি পায় তা দিয়ে আড়াই কেজি চালই কেনা সম্ভব নয়। অন্যান্য খরচের টাকা আসবে কোথা থেকে। এই দিকে শ্রমিকদের ১২০ টাকা মজুরির মধ্যেও আছে ফাঁক। কমপক্ষে ২০ কেজি চা পাতা তুলতে পারলে ১২০ টাকা মজুরি দেয়া হয়। এর কম হলে প্রতি কেজিতে ছয় টাকা করে কেটে নেয়া হয়। কিন্তু যদি ২০ কেজির বেশি হয় তাহলে প্রতি কেজিতে মাত্র দুই টাকা বেশি দেয়া হয়।

শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ নবম স্থানে উঠে এসেছে। এমনকি করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২১ সালে দেশে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। চা শ্রমিক ইউনিয়ন যেখানে দাবি করেছে মাত্র ৩০০ টাকা। আর প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকরা দৈনিক ২৩২ রুপি (২৭৭ টাকা) পেয়েও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ চীন ও কেনিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। আর বাংলাদেশের চা-শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজন শুধু দরিদ্র এবং পশ্চাৎপদই নয়। বিভিন্ন ভাষা, জাতি-পরিচয়, ধর্ম, সংস্কৃতি ও একটি বিশেষ পেশা অবলম্বন করে বেঁচে থাকা মানুষ এরা। বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিসহ চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটির বিষয়ে শ্রম আইনের বৈষম্য দূর করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে।

চা শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার করতে হলে প্রথমেই শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা তাকে যেসব অধিকার দেয়, সেসব নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কেবল সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সুরক্ষাই পেছনে পড়ে থাকা চা-শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজনকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে। এমনিতেই চা-শিল্প বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের এমন ধর্মঘটে এই শিল্প খাত আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাগানে নতুন পাতা গজিয়েছে।

পাতাগুলো এখনই তোলা না হলে সেগুলো মান হারাবে। এ জন্য বিষয়টি এখনই সমাধান প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত চা-শ্রমিকদের দাবি পূরণ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নয়তো অচিরেই চা শিল্পের ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। যা দেশের এই পরিস্থিতিতে মোটেই শুভ নয়। তাই চা শিল্পের বিকাশে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে সামনে রেখে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে মেনে নেয়া উচিত। এক সময় চা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ২য়। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আজ নবম স্থানে। তাই হারানো গৌরব ফিরে পেতে, তাদের দাবিকে মেনে নিয়ে তাদের পাশে দাড়ানো উচিত। এতে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য, পুরো দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ ও মঙ্গলজনক হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আবির হাসান সুজন চা শিল্পের ভবিষ্যৎ রক্ষায় শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করুন মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা
৭ জুন ২০২৫ ০০:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর