পুরুষের নীরব কান্না কেউ শুনতে পায় না!
২২ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪৫
সমাজে নারী নির্যাতনের চিত্র অহরহ চোখে পড়লেও তেমন পুরুষ নির্যাতনের স্বচিত্র সামনে আসে না। তাহলে কি আমরা ধরে নেব পুরুষ নির্যাতন দেশে হয় না!আসলেই তথ্যটা হল-নারী নির্যাতন প্রকাশ পেলেও, পুরুষ নির্যাতন অপ্রকাশিত। বিশেষ করে বিবাহিত পুরুষরা নারী দ্বারা নির্যাতনের শিকারের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটলেও সেটি লোক লজ্জ্বার ভয়ে প্রকাশ না পেলেও হয়তবা কোন পত্রিকা বা নিউজের হেড লাইনে আসে না। পুরুষের চাপা কান্নার আওয়াজ বাইরে আসে না, নীরবে বালিশ ভিজে যায়। নারীরা পুরুষের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতার ব্যতিক্রম ঘটলেই ঘটে যায় পুরুষ নির্যাতন। নারী-পুরুষের সম অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে কিছু নারী অতিরঞ্জন করে পুরুষকে তার বশিভূত করে মানসিক, আর্থীকভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। পুরুষরা সমাজে আত্ম মর্যাদার কারনে এ অত্যাচারের কথা কাউকে বলে না। সহ্য করে যায় এসব নারীর অসহ্য মানসিক যন্ত্রনা। কোন ভাবে প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো মামলার হুমকি! নারী নির্যাতন, যৌতুক সংক্রান্ত মামলা সহ কত কি!
‘বাংলাদেশে বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-এ বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক মামলার বিচার কাজ চলমান রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বলছেন, এসব মামলার অধিকাংশ মিথ্যা এবং ভুয়া। মামলাগুলোর ৮০ শতাংশই যৌতুক, ধর্ষণ ও যৌন পীড়নের অভিযোগে করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ নারী নির্যাতন হলেও অন্য ধরনের বিরোধের কারণেই এসব করা হয়েছে। বিচারকরা মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি মামলাগুলো সুপ্রিমকোর্টের লিগ্যাল এইডের কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন’। (তথ্যসূত্রঃ যুগান্তর,২০ ফেব্রুয়ারী,২০১৮)।
নারীর অধিকার সম্পর্কে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮(৪),২৯(৩) নং অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। নারীদের সুরক্ষা সংক্রান্ত দেশে একাধিক আইন প্রণয়ন হয়েছে। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইনগুলো হলো-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত-২০০৩), এসিড অপরাধ দমন আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে নারীর সুরক্ষার জন্য এই আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এ আইনগুলোকে কিছু নারী অপব্যবহার করে পুরুষ দমন ও নির্যাতনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। স্বার্থান্বেষী নারীরা পুরুষদের কাছে অযাচিত সম্পদ, অর্থ দাবী করে। আর সামান্যতেই এসব নারী নিজের স্বামী অথবা অন্য পুরুষদের নাজেহাল ও পর্যদুস্ত করতে এইসব আইনের অপব্যবহার করছে। এসব নারীদের চাওয়া মিটাতে না পাড়লেই আঙুল উঁচু করে ভয় দেখিয়ে বলে, ‘কথা না শুনলে চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবো’। এসবেও আয়ত্বে না আসলে হয়তবা টুকে দেয় মিথ্যা মামলা। আর এই মিথ্যা মামলাটি যদি হয় যৌতুক মামলা তাহলে বিজ্ঞ আদালতে এই পুরুষ ব্যাচারা আসামী হয়ে যখন আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করে হয়তবা বিজ্ঞ আদালত আসামীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপোষ-মিমাংসার শর্তে জামিন দিয়ে থাকে। আপোষ করতে গিয়ে এই লোভী নারী হয়তবা দাবী করে বাড়ী, গাড়ী কিংবা সম্পদ তার নামে লিখে দিলে সে আপোষ করবে যৌতুক মামলা। তাহলে প্রকৃতপক্ষে যৌতুক দাবী করতেছে কে এটাই বুঝার বিষয়। ধার্য তারিখে আপোষ-মিমাংসা করতে ব্যর্থ হয়ে হয়তবা জেলেও যেতে হচ্ছে এই পুরুষ বেচারার। এটাই আসল চিত্র। এমন মিথ্যা মামলার সংখ্যাটা কম নয়। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০-এর ১৭ ধারা অনুসারে মিথ্যা মামলাকারীর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে; যা শুরু হয় ভুক্তভোগীর লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। পুরুষরা নারীর অত্যাচার শেষ পর্যন্ত সহ্য করে। মিথ্যা মামলাকারীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা থাকলেও তার ব্যবস্থা নেয় না সাধারণত।
দেশে ‘পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ’ আইন বলে কিছু সৃষ্টি হয়নি এখনো। নেই পুরুষ নির্যাতনবিরোধী কোন ট্রাইব্যুনালও। ফলে আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগী কিংবা নির্যাতিত পুরুষ। ২০২০ সালের গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক’ নির্যাতনের শিকার বলে একটি বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন নামে ওই সংগঠনটি বলছে, সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না। তাদের দাবি, সামাজিক লজ্জার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করেন না অভিযোগকারীরা। বিবাহিত অনেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে একমত মানবাধিকারকর্মীরাও। তারা বলছেন, পুরুষদের নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে। তবে যেই নির্যাতিত হোক তার আইনি সুরক্ষার দাবি জানান তারা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু বেসরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করছে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশে পুরুষ দিবস পালন করছে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার বন্ধন আগের চেয়ে অনেকটা হালকা। এছাড়া সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়া, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশ্বায়নের ক্ষতিকর প্রভাব, অবাধ আকাশ সাংস্কৃতিক প্রবাহসহ নানা কারণেই এমনটা ঘটছে। যার চরম পরিণতি হচ্ছে সংসারের ভাঙন ও নির্যাতন। পারিবারিক অশান্তি ও সংসার ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সমাজের সব অংশই প্রতিনিয়ত ভুগছেন নানা পারিবারিক যন্ত্রণায়। এক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীর পাশে সমাজের অনেকেই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পুরুষশাসিত এ সমাজে পুরুষও যে নির্যাতিত হতে পারে সেটি যেন কারও ভাবনাতেই নেই। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যায় পুরুষ নির্যাতনের করুণ কাহিনী। এমন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্যাতিত পুরুষ লোক লজ্জার অন্তরালে অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে ভোগে হয়তবা নিজের জীবনকেও আত্মাহুতি দিতে দ্বিধা বোধ করেনা।
দেশে যে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন হচ্ছে না সেটা বলা যাবে না। আর সব নারী নির্যাতন মামলাই যে মিথ্যা সেটাও বলা যাবে না। কিন্তু নারী নির্যাতনের পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী নারী দ্বারা কিছু বিবাহিত পুরুষ যে ঘরে ঘরে মানসিক, অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না সেটাও কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অনেক পুরুষকেই ব্লাক মেইল করে সর্বশান্ত করে ফেলে কিছু নারী।
আর নয় পুরুষের বোবা কান্না, সময়ের প্রেক্ষাপটে এখন নারী নির্যাতন আইনের পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ‘পুরুষ নির্যাতন’ আইন পাশ হওয়া একান্ত জরুরী।
লেখক: আইনজীবী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অ্যাড. মো. রায়হান আলী পুরুষের নীরব কান্না কেউ শুনতে পায় না! মুক্তমত