যেদিকে তাকাই সিন্ডিকেট আর সিন্ডিকেট…
২৩ আগস্ট ২০২২ ২১:৩০
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের সকলেরই অজানা কিছু নয়। যে হারে ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তা নিকট অতিতে দেখা যায়নি আর। সাধারণ মানুষ কতটা নাজুক পরিস্থিতিতে আছে সেটা বলে বুঝানো যাবে না। এটা নিয়ে সরকারেরও খুব একটা মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। কারণ এক মন্ত্রী বলেন আমরা বেহেশতে আছি, আরেক মন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এখনও পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। আমি সেদিকে যাবো না। সে-সব কথার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলাটা সময় এবং শ্রম দুটোই অপচয় বলে মনে করছি।
আমার আজকের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে সিন্ডিকেট নিয়ে। এদেশ যেন একটি সিন্ডিকেটের আতুডঘর হয়ে উঠেছে। সবক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট। কাঁচা বাজারে সিন্ডিকেট, মুদি-বাজারে সিন্ডিকেট। পেয়াজে সিন্ডিকেট, ডিমে সিন্ডিকেট। সড়কে সিন্ডিকেট, মার্কেটে সিন্ডিকেট। চাকরিতে সিন্ডিকেট, খেলাধূলায় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট চক্র থেকে দেশ কবে মুক্তি পাবে এই প্রশ্ন কাকে করবো সেটাই বুছছি না। আর এই প্রশ্ন করাটাই অবান্তর এখন।
এাঝে মাঝে চিন্তা হয়, যারা এই সিন্ডিকেট করে তাদের কি মানুষের প্রতি দয়া-মায়া, মনুষ্যত্ব, মানবতা বলতে কিছুই নাই! এই যে তেলের দাম বেড়েছে এই অজুহাতে ভোগ্য পণ্যের দাম দিগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এটা কি কোনো সভ্য সমাজে হয়? এই অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর কোনো না কোনো সময় সাধারণ মানুষের সাথে এই দাম বাড়ানোর খেলায় মেতে থাকে। কারণ তারা জানে যে মানুষের খেতে হবে। কিন্তু এবার সেটাকে আকাশচুম্বি করে ছেড়েছে তারা।
তেলের দাম বাড়ানোকে ঘিরে নিত্যপন্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। মুরগি, ডিম, শাক, সবজি এমন কিছু বাদ রাখে নাই যা বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এভাবে আর কত? এই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আছে সাধারণ মানুষ। সড়কে গাড়িতে উঠলে দেখা যায় দিগুণ ভাড়া। যে ভাড়া এক সময় ৫ থেকে ৮ টাকা ছিলো সে ভাড়া এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা করেছে গণপরিবহনগুলো। কিন্তু সাধারণ মানুষের উপায় কি? নিজের কাজ, অফিসে, স্কুলে যেতে তো হবে সকলের।
ডাকাতরা চুরি, অস্ত্র এসব ধরে ডাকাতি করে। আর আমাদের দেশে ডাকাতি হচ্ছে ভিন্ন পন্থায়। সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে করে ফেলে জিম্মি। সাধারণ মানুষ না পারে প্রতিবাদ করতে, না পারে নিজের পেটকে কষ্ট দিতে। কারণ খেতে তো হবে। স্ত্রী-সন্ত্রানকে তো খাবার তুলে দিতে হবে। তাছাড়া আপনি আন্দোলন করবেন, প্রতিবাদ করবেন অথচ আপনার আশেপাশের মানুষজন থাকবে নিশ্চুপ। তাহলে দিনশেষে তো আপনিই কষ্ট পাবেন। আপনার পরিবার না খেয়ে থাকলে তো কেউ জিজ্ঞেসও করবে না খেয়েছে কি-না।
এই যখন সমাজের চিত্র তখন তামাশা দেখা আর মুখ-বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর উপায় কি? এই অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরোদ্ধে যতদিন সাধারণ মানুষ এক হয়ে রাস্তায় নামতে পারবে না ততদিন দেশে এই সিন্ডিকেট জারি থাকবে। একসময় তেলের দাম কমবে। কিন্তু কমবে না আমাদের ভোগ্য পণ্যের দাম। আপনি যদি বলেন কমেছে তো, তাহলে আপনি হিসেবে পাক্কা নন সেটাই বুঝা যায়। আপনার পণ্যের দাম বাড়িয়েছিলো দিগুণ, কিন্তু অর্ধেক দাম কি কমিয়েছে কি-না খোঁজ রাইখেন। সুতরাং আমরা এই সিন্ডিকেট ব্যাবসার জালে ফেঁসে গেছি। এই জাল ভেদ করতে হলে সর্বস্তরের মানুষকে একসাথে এক হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। এটা কোনো দলের জন্য নয়, এটা দেশের জন্য, নিজেদের জন্য।
আসুন-না এসব রাজনীতি বাদ দিয়ে একটু মানুষের কথা ভাবি। পেঠে ভাত না পড়লে তো রাস্তায়ও নামতে পারবেন না। তাই নড়বড়ে ইস্যু নিয়ে রাজপথ গরম না করে এইসব সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীদেও বিরোদ্ধে সোচ্চার হই, আন্দোলন করি। আপনি যদি বিত্তবান হয়ে থাকেন, দিগুণ দামে সব ক্রয় করেও সুখে থাকেন তাহলে এই ব্যাথার মর্ম আপনি বুঝবেন না। তাছাড়া আমার জানামতে এই দেশের বেশিরভাগ মানুষই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত।
তাই আমাদের খেয়ে-পড়ে বাঁচতে হলে অবশ্যই এই সিন্ডিকেট সন্ত্রাসদের দমন করতে হবে। জানি না সরকার এই সিন্ডিকেট সন্ত্রাসদের রুখবে কি-না, নাকি উল্টো আন্দোলনে নামলে জনগণকেই রুখে দিবে। দেশের মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়া সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ। সরকার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনবে সেই প্রত্যাশা রাখছি। অন্যথায় রাজপথে নামবে সাধারণ মানুষ। সেদিনের পরিস্থিতে আসতে খুব দেরি নেই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ দয়া করে এই সিন্ডিকেট সন্ত্রাসদের দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি