Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিত্তের দেয়াল ভাঙতে হবে দ্রুত

জয়িতা রায়
২৪ আগস্ট ২০২২ ১৪:০৬

সমাজে মানুষের পরিমাপ যখন বিত্ত–তখন আমাদের মাথায় অনেক চিত্র আসে। উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ইত্যাদি। মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা মাথায় আসলে সকলেরই একই প্রশ্ন- কেনো দিন দিন বাংলাদেশে এই শ্রেণীর মানুষের বৃদ্ধি হচ্ছে, বেড়ে চলেছে মধ্যবিত্তদের সংখ্যা?

এই শ্রেণির মানুষের জীবন কেমন? তাদের বিশাল অংশ সাধারন মানুষের মতো চাকরি করছে, জমির মালিকানার উপর রোজগার কিংবা আলাদা কোনো কিছু। দিনশেষে তাদের জীবনের অল্প রোজগার নিয়ে এই বিশাল অংকের টাকা থাকা মানুষের যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ছে তারা বার বার।

বিজ্ঞাপন

গত দুই দশকে মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখন মধ্যবিত্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাথে যুক্ত হবে। এ তথ্য বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস)। গবেষণাটি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন। বিআইডিএস এ গবেষণাটি করেছে ঢাকা শহরের ১২টি এলাকায়।

এদের জীবন কোন সংকট কি রুপে তাদের সামনে আসছে? সংকট কি শুধু মাত্র অর্থ নিয়ে নাকি আরো কিছু? একদিকে তারা যেমন অর্থ সংকটে ভুগছেন আরেকদিকে এই সমাজে তাদের চরিত্রের মানদন্ড হয়ে উঠছে তাদের বিত্ত নিয়ে।

আমি বাবার কাছে নিজ কৌতুহলে শুনেছি- তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন পাবনা শহরের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ, তবে অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং বন্ধুদের বাবারা পেশায় কেউ হয়তো ছিলেন অফিস সহকারী, গাড়ির চালক কিংবা দোকানী। কিন্তু তাদের কখনো আমাদের বাড়িতে কিংবা সেই সময় আমার দাদুর বাড়িতে–কার বাবা কি করেন? এই পরিচয় দেখা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এখন এই সময় আমাদের প্রজন্মের কেউ বলতে পারবেনা তারা একজন রিক্সা শ্রমিকের সন্তানের সাথে অথবা অফিস সহকারীর সন্তানকে ছোট করে না দেখে বন্ধুত্ব করছে। অর্থাৎ আমরা বন্ধত্ব এবং সম্পর্ক গুলোকে পুজিঁর মাপকাঠিতে মাপছি। সত্যি কথা বলতে আমাদের জীবন-যাপনে আমরা যে জায়গাটিতে যাচ্ছি সবই নির্ভর করে অর্থের উপরে।

ছোট বাচ্চাদের স্কুলের দিকে যদি আমরা তাকাই, যে বাচ্চাটি দামী গাড়িতে চড়ে অভিভাবকের সাথে স্কুলে আসে আবার যে বাচ্চাটি রিক্সায় চড়ে স্কুলে আসে এবং যে বাচ্চাটি হেঁটে আসে- সেই তিনজন বাচ্চাকেও কিন্তু আমরা তিনটি আলাদা দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখি। হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসা বাচ্চাটির এবং দামী গাড়িতে চড়ে আসা বাচ্চাটির বন্ধুত্ব হয়তো সিনেমাতে হয় তবে বাস্তবে কিন্তু আমরা দেখিনা।

এর কারণ আমাদের অধিকাংশ অভিভাবক যখন আমাদের বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে চায় তখন নাম জিজ্ঞেস করার পর প্রথম প্রশ্নটাই হয় যে তার বাবা-মা কি করেন, কোথায় চাকরি করছেন- ব্যাপারটা লজ্জাজনক। তার মানে আমরা কি আমাদের সমাজটাকে এভাবেই ধ্বংসর দিকে এগিয়ে দিচ্ছি? এবং অর্থনীতির বৃত্তের বাহিরে কিছুকে ভাবতে পারছিনা? মানবিক জায়গাটি ভাবতে পারছিনা? এবং তাই যদি হয় আমাদের প্রজন্ম কিংবা আমাদের পরের পরের প্রজন্ম যখন বড় হবে– তারা যখন পেশাদার জীবনে প্রবেশ করবে একধরনের বিদ্বেষের সংস্কৃতি নিয়ে পরস্পর বেড়ে উঠে।

সেই সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠতে আমাদের সহায়তা করছেন আমাদের অভিভাবকরা এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোও। ইচ্ছা করলে একজন সাধারণ পরিবারের মেধাবী সন্তান চাইলেও ঢাকা শহরের নামকরা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়তে পারবেন না। অপরদিকে একজন ধনী পরিবারের স্বল্প মেধার সন্তানও অনেক বড় বড় ডোনেশন এবং বড় অংকের টাকা দিয়ে সেই স্কুলে ভর্তি হতে পারবে- এটি লজ্জাজনক, ঘৃণার ব্যাপার।

এভাবে যে শিক্ষা চলছে তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমরা যদি দেখি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ গুলোয় ভর্তি হতে পারছেনা, ভর্তি হতে না পেরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে যাচ্ছেন কিন্তু তাদের সেই পরিমাণে অর্থ নেই। এই জায়গা গুলো নিয়ে ভাবা শুরু করা দরকার। আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি পাচঁমিসালি সমাজ ব্যাবস্থার মধ্যে আমরা গড়ে উঠছি।

ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের সাথে বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের একটি দুরত্ব। অর্থাৎ আমার বয়সি পাঁচটি শিশু যদি আলাদা শিক্ষাক্রমে পড়ে আসে তাদের সার্টিফিকেটের মান সমান হলেও নিজেদের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করছে তাদের পরিবারের অবস্থান এবং তাদের বিত্ত।

নিজেদের সবার মাপকাঠিতে মাপার প্রবণতা আমাদের মধ্যে যেমন থাকছেনা তেমনই থাকছেনা অভিভাবকদের মাঝে। যেমন আমাদের মনোজগত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে তেমন অভিভাবকদেরও মনোজগতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। এই ব্যাপারগুলোর থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে আমরা যে বাঙালিত্বের গর্ব করি সে জায়গাটি ধীরে ধীরে খন্ডিত হবে। সময় নেই– বিত্তের দেয়াল ভাঙতে হবে দ্রুত।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

জয়িতা রায় বিত্তের দেয়াল ভাঙতে হবে দ্রুত মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

কলকাতায় অভিষেক হচ্ছে অপূর্ব’র
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৮

তানজিব-অবন্তীর নতুন গান
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২২

আরো

সম্পর্কিত খবর