টুগেদার, উই ক্যান মেক ইট হ্যাপেন
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:২৪
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কিন্তু খুব বেশি দেশ ছাড়েনি যেমনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে ঘটে চলেছে। অনেকেই বলবে পাসপোর্ট থেকে শুরু করে ভিসা জোগাড় করা একটি জটিল প্রসেস ছিল তখন যার ফলে দেশ ছাড়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ঘটনার কিছুটা সত্য হলেও কিন্তু দেখা যায় সিলেটিরা কিন্তু সবসময় দেশ বিদেশ ঘুরছে। তৎকালীন ১৯টি জেলার মধ্যে যশোর জেলার মানুষ দেশ ছেড়েছে দেরি করে। তবে, এ জেলার অনেক হিন্দু সম্প্রদায় ভারতের কলকাতা আশা যাওয়া রীতিমত বজায় রেখে আসছে নানা কারণে। আমার নিজ পরিবার মূলত দেশ ছেড়েছে দেশ স্বাধীনের পর এবং বিদেশি স্কলারশীপ এবং দেশের অর্থ ব্যয় না করে বাইরে লেখাপড়া করার সুযোগ হওয়া এবং পাওয়া মূলত দেশ ছাড়ার কারণ।
নিজ দেশ ছেড়ে অন্য একটি দেশে এসে সবকিছু গুছিয়ে উঠতে কয়েক যুগ লাগার পেছনে শত শত কারণ জড়িত যেমন বাংলা খাবার এবং দেশীয় শাক সবজি। যদিও মাঝে মধ্যে এসব খাবার পাওয়া যায় তবে দুঃখের বিয়য় ভেজাল এবং পচা খাবার দেশ থেকে বেকসুর খালাস হয়ে বিদেশে যখন আসে এবং সেই খাবার যখন দশগুন বেশি দাম দিয়ে কিনি এবং রান্না করে মুখে দিতে চেষ্টা করি তখন মুখে রুচি বা স্বাদের পরিবর্তে বমি আসে। যার ফলে চেষ্টা করে চলছি দেশীয় শাক সবজি নিজে চাষ করতে সুইডেনের মতো শীতের দেশে। মজার ব্যপার হলো সাধনা এবং চেষ্টা থাকলে কিনা সম্ভব জীবনে? সেটাই হয়েছে। সব সবজির মাঝে লাউ বাঙালীর কাছে একটি অমৃত খাবার সেটাও সুইডেনে ফলানো, আমার কাছে এতবড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যা যদি তুলনা করি সুইডেনে প্রতিষ্ঠিত হবার চেয়ে কঠিন। হয়ত অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না কিন্তু এটাই সত্য। শীতের দেশে লাউ উৎপাদন করা সত্যিই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাহলে বুঝতেই পারছেন কী পরিমাণ চেষ্টা করতে হয়েছে সফল হতে। পরাগায়ন করাতে চেষ্টা করেছি, নিজ হাতে পুরুষ ফুলকে স্ত্রী ফুলের সঙ্গে যুক্ত করেছি যাতে পরাগায়ণ পদ্ধতিটি সঠিক হয় যেমনটি মৌমাছি বা বাতাসের সাহায্যে হয়ে থাকে।
এইভাবে এক দেশে থেকে অন্য দেশে যেমন আমরা এসেছি, নিজেদেরকে মানিয়ে নিয়েছি। এখন আমাদের দেশের সব কিছু আস্তে আস্তে এখানে এনে ছোট্ট একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা এর চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে? এসব চেষ্টা করার পথে দেশের কথা দেশের নতুন প্রজন্মের কথা মনে হয়েছে। মনে হয়েছে সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া অনেক তরুণের কথা। ফুলের মত অনেক প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে সামান্য একটু সুযোগের অভাবে। ফুল যেমন তার সব সুযোগ থাকতেও একটু সাহায্যের অভাবে পরাগায়ণ ঘটাতে না পারার কারণে ফলে পরিণত হতে পারছে না, ঠিক একটি গরীব পরিবারের অনেকেই একটু সুযোগ, একটু চেষ্টার অভাবে সফল মানুষ হয়ে সমাজের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সমাজের বোঝা হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে! আমরা যারা সুযোগ পেয়েছি তাদের অন্তত উচিত হবে যারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাদের একটু সাহায্য করা। একটু সাহায্য সহানুভূতি পেলে একটি জীবন সুন্দর হয়ে সমাজের কাছে, সমাজের মানুষের কাছে সর্বোপরি নিজের কাছে তার জন্মের স্বার্থকতা খুজে পেতে পারে। এতটুকু চেষ্টা যদি আমরা করি অবশ্যই সম্ভব চাওয়া পাওয়ার সফলতা ঘটানো।
আমার সুইডেনের ক্ষেতে সবকিছু হয়েছে। দুঃখের বিষয় হঠাৎ ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে একের পর এক সব শাকসবজি এখন প্রায় মৃত্যুপথের যাত্রী। ভাবছি একদিন আমাদেরও এই সাজানো গোছানো জীবনটা হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে তখন মন চাইলেও কারো জন্য কিছু করতে পারব না। ভাবছি সেই সময়টি যখন এখনও আসেনি এবং সুযোগ যখন আছে তখন দেরি কেন? এখনই আমরা কিছু একটা করি। আমার মত যদি সবাই একটু চেষ্টা করে আমি বিশ্বাস করি আগামী দশ বছরে বাংলাদেশে একজন গরীব অসহায় শিশুর জন্ম হবে না, শুধু যদি একটু চেষ্টা করি সবাই। টুগেদার, উই ক্যান মেক ইট হ্যাপেন।
লেখক: সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে
সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই