বাক-স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের হাতে হ্যারিকেন
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১১
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ আয়োজনের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ১২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম সভায় দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাই-কমিশনার নাদ আল-নাসাফি। নাসাফি স্পষ্ট করেছেন রাজনীতির মেরুকরণের সময়টাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যধিক বলপ্রয়োগের ভূমিকা নিয়ে। এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি এসেছিলেন সদ্য সাবেক হাই-কমিশনার মিশেল ব্যাচলেট। তিনিও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং কিছু কঠোর কালাকানুন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
দুঃখজনক ঘটনা— ফিরে যাওয়ার পর জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা, বিশেষত হাই-কমিশনার ব্যাচলেটের দেওয়া সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য বেশকিছু গণমাধ্যম নিজেদের মতো করে বিকৃত উপস্থাপনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হন। এই হলো আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বিক অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি! পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক যে বহির্বিশ্বের কাছে বাক-স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র বিষয়ে ভালো কোন বার্তা পৌঁছানোর সক্ষমতা আমরা অভ্যন্তরীণভাবেই ধ্বংস করে দিয়েছি।
গৌরচন্দ্রিকার মূলে প্রবেশের পূর্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে প্রবেশ করা যাক। “কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না”— এমনটাই উল্লেখ আছে ৭০ নং অনুচ্ছেদে। সংবিধানের এই আইন জানার পরে যে কোন আইন সচেতন ব্যক্তি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধরন এবং সাংসদ কতৃক সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বাধীনতা সম্পর্কে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে আঁচ করতে পারবেন। এ জন্য তাকে খোদ বাংলাদেশে আসার প্রয়োজন নেই। তবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক দুঃসময় বা সুসময় বোঝার জন্য বাংলাদেশের নানান প্রেক্ষাপট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক। বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ– কি শ্বাসরুদ্ধকর দশকগুলো আমরা একে একে পার করেছি?
একটি দেশের গণতন্ত্রের সূতিকাগার তার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গণতন্ত্রের রূপ নির্ভর করেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপরে। দেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই অথবা মুক্তমত চর্চার দৌড় কতদূর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেহারার দিকে তাকালে এক নিমিষে বলে দেওয়া সম্ভব। বলে দেওয়া সম্ভব জনগণের মনন, মূল্যবোধ এবং চিন্তা। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চার আতুরঘর হলো ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সিনেটে ছাত্রদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র স্বার্থ বিরোধী কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে তারা কথা বলতে পারেন। এমনকি ছাত্র সংসদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার ইতিহাস আছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় বছর তিন আগে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হলেও কার্যকারিতা পরিণত হয়েছিল অথর্ব ডাকসুতে। এ পরিস্থিতিতে অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ পাওয়া দুঃস্বপ্নের ব্যাপার। ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে, গণতান্ত্রিক মতামত নিয়ে হাজির হলে, তাদের উপর সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন এবং পুলিশি হামলা হয়েছে সব সরকারের আমলেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা বলতে গেলে সম্পূর্ণ রূপেই ভূলুণ্ঠিত।
বলবৎ গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বরূপে ব্যাখ্যা করলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়। যেমন— নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হবেন বা হচ্ছেন। এটা আমাদের ভূখন্ডের গণতান্ত্রিক হিসাব। ভোটের সংখ্যানুপাতিক হিসাবের কোন কারবার এখানে নেই। তাহলে সকল বা অধিকাংশ জনগণের মতের মূল্যায়ন হলো কই? অধিকাংশ জনগণের মতের মূল্যায়ন যদি না থাকে সেটা গণতন্ত্র হয় কি করে? এটা বরং অধিকাংশ জনগণের মতামতের গোঁজামিল নয় কি? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- ক, খ এবং গ তিনজন প্রার্থী। এবং উক্ত এলাকায় ভোটার সংখ্যা ১৬০ জন যাদের ১০০ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট গণনায় দেখা গেল বিজয়ী প্রার্থী ক পেয়েছেন ৪৫ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খ পেয়েছেন ৪০ ভোট আর গ ভোট পেয়েছেন ১০ টি। ৫ টি ভোট ভোটারের অসচেতনতায় বা যে কোন কারণে নষ্ট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ক বিজয়ী হলেও জনসংখ্যা অনুপাতে বেশি ভোট (৫০) কিন্তু খ ও গ এর প্রতীকে পরেছে। ব্যক্তি হিসেবে ক বেশি ভোট পেলেও নির্বাচনী এলাকার প্রদত্ত অর্ধেকের বেশি জনগণ কিন্তু ‘ক’ কে জনপ্রতিনিধি হিসেবে চায়নি। তাহলে ৫০ জন নাগরিকের জনরায় আমাদের গণতন্ত্র কেন গ্রহণ করবে না? এটা তো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিরই গোঁজামিল। গণতন্ত্র তো হওয়া উচিত ছিলো সংখ্যানুপাতিক, সকল মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধার সাথে দেখা। উপরন্তু একজন ভোটারের ক, খ এবং গ তিন জন্য প্রার্থীই অপছন্দ হতে পারে। তার জন্য ‘না’ ভোটের প্রচলন না থাকাটা দুঃখজনক।
সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের বাধ্যবাধকতার কারণে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারি দলের সাংসদদের বিলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগ অনুপস্থিত। আমরা দেখলাম ফ্লোর ক্রসিং করে বিপক্ষে সমর্থন দিলে আপনাআপনি বা অটোভাবে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার গলাকাটা খড়গ আইন। তাহলে গনবিরোধী সিদ্ধান্তে হাত-পা বাঁধা এই সাংসদেরা জনগণের জন্য কি করতে পারবেন? জনগনের গণতান্ত্রিক রায়ে নির্বাচিত সাংসদেরা সংসদে গিয়েছেন জনস্বার্থে কথা বলার জন্য। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সাংসদ যদি জনস্বার্থ বিরোধী কথা বলেন, তবে সে কারণে সংসদ সদস্য পদ বাতিলের আইন কোথায়? উচিত ছিলো জনপ্রতিনিধি জনস্বার্থ বিরোধী আচরণ করলে তার দায়িত্ব বাতিল হওয়ায়। অথচ ঘটলো তার উল্টোটা! এই হলো আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংবিধানের অবস্থা; যা ৩৯ অনুচ্ছেদের সাথেই আবার পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
একের পর এক আইন-নীতিমালা দিয়ে খর্ব হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের যত্রতত্র করা হচ্ছে হয়রানি। কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক লাইন স্টেটাস লেখার কারণে হচ্ছেন গ্রেফতার। এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিশেষ কোন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে দমন করতে বহু আগে কি স্টেটাস দিয়েছিলেন তার উপর নির্ভর করে ডিজিটাল আইনের মামলা। এ পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যত মামলা হয়েছে এর বড় অংশই সাংবাদিকদের সংবাদের কলম থামানোর জন্য। এমনকি এই আইনে কারাগারে থাকাকালীন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। নতুন করে হাজির করা হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের কলহ। অর্থাৎ ভয় ভীতি দেখিয়ে, আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে। গণতান্ত্রিক শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতি ঘটিয়েছে সামাজিক বিপর্যয়। মেলেছে গুজবের ডালপালা। উত্থান ঘটতে সহায়তা করেছে জঙ্গিবাদের মতো আত্মধ্বংসী আদর্শের। হামলা হয়েছে সাংস্কৃতিক মঞ্চে, রাজনৈতিক সভায়, রেস্তোরাঁয়।
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকারি দল এবং বিরোধী দল থাকবে। সরকারপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে কোন ভুল করলে, বিরোধী দল উপস্থাপন করবেন যৌক্তিক সমালোচনা। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক হয়ে সকলে লড়বেন। এটাই তো গণতন্ত্রের গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য। অথচ বর্তমান শতাব্দীতে প্রবেশ করেই আমরা কি দেখলাম! আমরা দেখলাম রাজনৈতিক সমাবেশ শেষে বিরোধী দলীয়দের উপরে রাজনীতির পৈশাচিক আক্রমণ; বিরোধী দল শূন্য করার গ্রেনেড হামলা। যে সমাবেশ ছিলো গুম-খুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কেউ একজন কথা বললেই তাকে গুম করা হয় কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতৃক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানের বছরগুলোতে এটা আশঙ্কাজনক বেড়েছে। গুম করতে পারলেই যেন সরকারগুলোর স্বস্তি মেলে। যাহোক এভাবে বিরোধী মত দমন করে ক্ষমতাসীনদের ফায়দা লোটা কখনোই গণতন্ত্র হতে পারে না; বরং সেটা অগণতান্ত্রিকতার বহিঃপ্রকাশ।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পাক-উপনিবেশিক শোষণ থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের স্বাধীনতার লড়াই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। যে লড়াই চলেছিলো দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে। অতঃপর সত্তরের নির্বাচনে আমরা গণতান্ত্রিক বিজয় দেখেছি। গনতন্ত্রের বিজয় দেখেছি নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে। অগণতান্ত্রিক ধারা নস্যাৎ করতে ২০০৮ সালে জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে গণতান্ত্রিক পন্থায় আওয়ামী লীগকে করেছে বিপুল সমর্থন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি (এক শত তেপ্পান্ন) সংসদীয় আসনে ভোট না হওয়া আমাদের গণতন্ত্রের বলি হয়ে যাওয়া। গণতন্ত্রের ইতিহাস হয়ে থাকবে পরবর্তীতে কোন কোন অঞ্চলে ভোটার সংখ্যার চেয়েও অধিক ভোট পরা। মোটকথা প্রতিবাদের মিছিলে রাজনৈতিক নেতাদের টুটি চেপে ধরা আমাদের গণতন্ত্রেই চালচিত্র।
সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে গণতন্ত্রের কথা তুলে বরাবরের মতো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি গণতান্ত্রিক সরকার? তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি গণতান্ত্রিক সরকার না হয়, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তারা দেখেন কিভাবে? অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে গণতান্ত্রিক কোন পদ্ধতি কেন হাজির করছেন না? নাকি তারাই কেবল ক্ষমতায় যেতে পারলে গণতন্ত্র সঠিক এই বার্তা জনগণকে দিচ্ছেন! গণতন্ত্র কপচানো উদ্ধারকারী সকল ব্যক্তিরা কি বিরোধী দল নেতৃত্ব শূন্য করার গ্রেনেড হামলার বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন? তবে গণতন্ত্র রক্ষার্থে সেদিন যারা বিভৎস আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের জন্য সাধুবাদ। আশার বিষয় এই যে রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব সংস্কারের লক্ষ্যে কর্মী সমর্থকের দিক থেকে ছোট হলেও দু‘একটা রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সামনে আনার চেষ্টায় অব্যাহত, বিরোধী বড় দলগুলো সেটা আবার অনুসরণ করেছে।
পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ কখনোই দুর্নীতি কিংবা অনৈতিকতার সাথে যুক্ত হতে পারে না। তারা একে অন্যের অধিকারকে সম্মান করতে জানে, শ্রদ্ধা করতে জানে অন্যের মতামত। দীর্ঘ মরিচায় এ ক্ষেত্রে ঠিক কিছুটা বিপরীত আমাদের জনগণও। গণতান্ত্রিক সহ্যশক্তি নেমেছে শূন্যের কোঠায়। হরহামেশাই লেগে আছে অসৌজন্যমূলক ব্যক্তি আক্রমণ, সাম্প্রদায়িক হামলা। এমনকি মাঝেমধ্যে বাধ্য হয়ে গণমাধ্যমগুলোকে তাদের মন্তব্য সেকশন বন্ধ রাখতে হয়। শত শত্রু হলেও বিপদের দিনে সান্ত্বনা দিতে যাওয়া রাষ্ট্রের একজন প্রধানমন্ত্রীকে দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া যেমন অসৌজন্যমূলক, তেমনি অগণতান্ত্রিক আচরণের ফসল। জনগণের যদি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই থাকবে তবে তসলিমা নাসরিন, আসিফ মহিউদ্দিন অথবা পিনাকী ভট্টাচার্যদের নিয়ে অযাচিত হুড়োহুড়ি হয় না। দেশের বাইরে দীর্ঘদিন কাটাতে হয় না একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সাংসদ লতিফ সিদ্দিকীর।
গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সংকট উত্তরণে জাতিসংঘ বা বহির্বিশ্বের চাপ প্রয়োগ গণতন্ত্রের জন্য শুভঙ্কর নয়। নিজেদের সমস্যা সমাধানের পথে নিজেদেরই হাঁটতে হবে। পাশাপাশি কেউ অপমানবোধ করে এরকম কথাবার্তা না বলাই বাঞ্ছনীয়। ভুল করলে তা অনায়াসে স্বীকার পাওয়া, সংশোধন হওয়ার মাধ্যম গণতন্ত্র। বর্জনীয় হওয়া দরকার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ক্ষতি হতে পারে এরকম বার্তার। গণতন্ত্র শুধুমাত্র ভোটের অধিকার নয়, ভাতের অধিকারও। মৌলিক সকল চাহিদা পূরণের মাধ্যমে বেঁচে থাকা এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিই গণতন্ত্র।
মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে, সর্বদলীয় সংস্কার কমিটি করে, বুদ্ধিজীবী-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এবং জনগণের প্রত্যক্ষ সমর্থনে সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। জনগণের কথা বলার স্বাধীনতা আধুনিক বিশ্বে মৌলিক অধিকার হয়ে দাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে শ্বাসরুদ্ধকর অগণতন্ত্রিক মূল্যবোধ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে; উদ্ধার হবে গণমাধ্যমের শক্তিশালী কলম। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার এবং সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার প্রত্যাশা।
লেখক: সজীব ওয়াফি, প্রাবন্ধিক