Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোক্তা অধিকার

উম্মে কুলসুম কাইফা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৪৫

বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটা পণ্য হলো ওষুধ। অসুস্থতার জন্যে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কোনো না কোন ওষুধ সেবন করতে হয়। রোগ হলে ওষুধ ছাড়া রোগমুক্তির বিকল্প কিছু নেই। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয় এটা জীবন রক্ষাকারী উপকরণ। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি কিন্তু আবারো গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০ টি জেনেরিকের মধ্যে ৫৬ টি ব্রান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ দেশের কিছু মানুষের কাছে টাকাউপার্জন এতটাই অর্থপূর্ণ হয়েছে যে, যেকোনো পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে তার মধ্যে একটি পণ্য হলো ওষুধ। প্রতারণা করাটা যেন তাদের কাছে কিছুই না। আমাদের দেশের এখনো অনেক মানুষ জানে না ওষুধের মেয়াদ কোথায় লেখা থাকে। যার ফলে কোন ওষুধের মেয়াদ আছে কি না জেনেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে নেন। আর দাম কমিয়ে রাখার কথা যদি বলা হয় তখন ফার্মেসি দোকানদারদের দায়ছাড়া উত্তর ওষুধের একদাম হয়। তাই বাধ্য হয়ে দোকানদারের মুখের কথায় বিশ্বাস করে ওষুধ কিনতে হয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় তালিকাবহির্ভূত ওষুধের দাম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। সেই নির্দেশনার বলে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে যেকোনো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের ছিল। ৯৪-এর আদেশের পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধের দাম ঠিক করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জানায়। ওই দাম নির্ধারণ করার যুক্তিও তারা তুলে ধরে। এত বছর ধরে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো যে দাম চাইছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সেই দামেই বিক্রির অনুমতি দিচ্ছে। ফলে ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি থেকে যাচ্ছে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্যে তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের তার মধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের মধ্যে পূর্বঘোষণা ছাড়া শুধুমাত্র সুপারিশের ভিত্তিতে ৫৬ টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে ওষুধ কোম্পানি। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, শুধু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।

আমাদের দেশে যেকোন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অতি সাধারণ এবং স্বাভাবিক একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন বিশেষ কারণে যদি কোন একটা পণ্যের দাম বাড়ে তার সাথে পাল্লা দিয়ে যেন সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হতেই হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে লাগামহীন দামে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। এর মধ্যে ওষুধের দাম বাড়ায় সাধারণ রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি দাম বেড়ে তবে চাহিদা কমিয়ে দিয়ে কোনো ভাবে দিনাতিপাত করা যায় কিন্তু ওষুধের দাম বাড়লেও সেই সুযোগ নেই। দাম যতই হোক ওষুধ কিনতেই হবে। জীবন বাঁচার তাগিদে যেভাবেই হোক ওষুধ কিনতেই হবে। যেহেতু ওষুধ কিনতেই হবে তাই এই সুযোগ নেন অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর দল। যেহেতু ওষুধের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের কোনো হাত থাকে না থাকায় ওষুধের দাম বাড়ায় সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগের শেষ হয়না।

বলা যায় ওষুধ বাণিজ্য বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক। ফার্মেসির দোকানিদের মতে ওষুধের সব সময় একদাম হয়। যায় ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে তাদের ধরে দেওয়া মূল্যে ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছে। আর বেশির ভাগ দোকানে দেওয়া থাকে না ওষুধের মূল্যতালিকা যার ফলে সাধারণত মানুষের কষ্টের উপার্জিত টাকায় শ্রেণীর লোভী স্বার্থপর মানুষের পকেট ভরছে। করোনার সময় এ ওষুধ বাণিজ্য ছিল চোখে পরার মত। যদিও সরকার কিছু ওষুধ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল তারপরও দেশে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ নেই অজুহাতে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করেছেন ফার্মেসির দোকানিরা। আমদের দেশের এমন ও মানুষ রয়েছে যারা অসুস্থ্য হলে ডাক্তার তো দূরের কথা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে পারেন না ওষুধের দামের কারণে। জীবন রক্ষাকারী উপকরণ নিয়ে এমন বাণিজ্য সত্যি কাম্য নয়।

সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। ওষুধদের দাম নিয়ন্ত্রণ আমাদের দেশে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। সরকার এতগুলো মানুষের জীবন রক্ষাকারী উপকরণের ভার ওষুধ কোম্পানী হাতে দিয়ে রেখেছে আর সেই সুযোগে ওষুধের মূল্য নিয়ে প্রতারণা করছে একশ্রেণির বিক্রেতা।

বেঁচে থাকার জন্যে ওষুধের গুরুত্ব আমরা প্রত্যকে অনুধাবন করতে পারি। ওষুধের দাম বেশি নেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা, পণ্যের প্যাকেটে মূল্য লেখা না থাকা এবং দোকানে মূল্যতালিকা না রাখা হলো ভোক্তাবিরোধী কাজ যার ফলে ক্ষুন্ন হচ্ছে জনসাধারণের ভোক্তাঅধিকার। আমাদের দেশের এখনো অনেক মানুষই জানেন না ভোক্তা অধিকার কি। ভোক্তা অধিকার একটি মৌলিক অধিকার, যা কিনা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬ থেকে ৪৭ (ক)-এ নিশ্চিত করা আছে। সরকার ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার আইন পাস করে। কিন্তু আমরা আমাদের অধিকার সমন্ধে সচেতন না জন্যেই ব্যক্তি বা মুষ্ঠিমেয় দলগত স্বার্থের কারণে আমরা জেনে বা না জেনে প্রতারিত হচ্ছি। আমাদের দেশের কিছু মানুষ অসুস্থ প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যে নেমেছে যা হলো অনৈতিক। কিছু লোভী মানুষ সকল মানুষের অধিকার খর্ব করছে সরকারের বাজার তদারকির অভাবে। আবার আমরা নিজেরাও আমাদের অধিকার নিয়ে সচেতন না যার ফলে আমরা প্রতারিত হচ্ছি। এ কথা সত্য, ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশ্বে ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। আমরা চাই দেশীয় ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার আরো বৃদ্ধি হোক। একই সাথে এটা চাই নিয়মিত বাজার তদারকির মধ্যমে ও প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে সরকার ওষুধের একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করে দিক যেন সেই ঔষধ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে এবং ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত হয় ।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

উম্মে কুলসুম কাইফা ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোক্তাঅধিকার মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর