একদিন গাড়ি ছাড়ুন, পৃথিবীকে বাঁচান
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:০৬
পৃথিবী পুড়ছে কার্বন বৃদ্ধিতে। আর এর জন্য দায়ী অনবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। অর্থাৎ তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো শক্তির ব্যাপক ব্যবহার কার্বন নিঃসণের জন্য প্রধানত দায়ী। আর এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এই যে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে বা আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব তার পেছনে কিন্তু এসবই দায়ী। আমরা বিলাসী জাতি। উন্নত দেশে গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার সব বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে তেল, গ্যাসের ব্যবহার। সামান্য দুরত্বেও আমরা গাড়ি ব্যবহার করি। মোটরসাইকেল তো এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতেও ব্যবহার করছি। অথচ বিশ্বকে গাড়িমুক্ত রাখার জন্য একটি দিবস আলাদা আছে। ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। গাড়ি বিলাসিতা এবং প্রয়োজনীয় একটি বাহন। কিন্তু কতটা বিলাসিতা এবং কতটা প্রয়োজনীয় তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। প্রয়োজনের চেয়ে বিলাসিতার ভূত আমাদের মাথায় চেপে বসেছে। দিবসটি পালনের বহুমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা, জীবাশ্ম জ্বালানীমুক্ত বাহন যেমন- সাইকেল এবং পায়ে হাঁটা উৎসাহিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সর্বোপরি নগরকে যানবাহনের জট থেকে বাঁচিয়ে মানুষকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করা। পায়ে হাঁটাকে ডাক্তারি ভাষায় একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হিসেবে পরামর্শ করা হয়। সাত-সকালে উঠে মর্ণি ওয়াকের বদলে যদি হেঁটে অফিসে যাওয়ার অভ্যাস করি বা বাজার হাতে বাসায় ফিরি তাহলেই কিন্তু কাজ হয়। অথচ তা আমরা করি না। কারণ তাতে আমাদের মান-সম্মানে আঘাত করতে পারে! হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরা অনেকের কাছেই লজ্জার ব্যাপার!
নানা কারণে বর্তমান বিশ্বের জন্য এই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বৃদ্ধিই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য। সারা পৃথিবীতেই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। জীবন যাত্রা সহজ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বিলাসিতার মাত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামান্য দুরত্বেই আমরা হাঁটতে অথবা সাইকেল চালিয়ে যেতে অনিচ্ছুক। এই বিলাসিতার কারণে আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতা কমছে। প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন শহরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। ঢাকা শহরের ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখলেই ধারণা পাওয়া যায় কি হারে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আমাদের প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ। এই গাড়ির পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানী তথা কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা। এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘনিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার প্রভাবজনিত বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মারাত্বকরুপে প্রত্যক্ষ করছে ফলে নতুন করে প্রচারের দরকার নেই।
জানা যায়, নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ৭০’র দশকে ইউরোপে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন করা শুরু হয়। পৃথিবীতে একটি দিন কার ফ্রি ডে বা ব্যক্তিগত গাড়ি মুক্ত রাখার এই ধারণাটি প্রচলন করার পেছনের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহিত করার পাশপাশি স্বাস্থ্য সচেতন করা। কিন্তু মানুষের ব্যস্ততা এবং প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে আগ্রহ খুব বেশি হ্রাস পায়নি। প্রতিদিন ঢাকা শহরে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই যে ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে নিশ্চিন্তে অফিসে যাতায়াত করা যায়। বিপরীতে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাড়ির লাইনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্ট হচ্ছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপনের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘক্ষণ অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে বসে কাজ করা এবং তারপর রিক্সা বা বাসে বাড়ি ফেরা-এভাবেই অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে জীবন। অথচ আমাদের শরীরের জন্য পরিশ্রম করা একান্ত আবশ্যক। শারীরিক শ্রমবিমুখতার ফলে শরীর নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের বহু দেশে আজ মোটামুটি দুরত্বে সাইকেল জনপ্রিয় বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও তা কেবল দুরের পথ পাড়ি দেওয়ার জন্যই ব্যবহার করে। বাকিটা সময় সাইকেল এবং পায়ে হেঁটেই যাত্রা করে। এর ফলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো এবং সুস্থ দেহ ধরে রাখতে সক্ষম হয়। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমিয়ে সাইকেল বা হেঁটে চলার অভ্যাস করতে হবে। একটি বহুমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে এই দিবসটি পালিত হয়। সেই উদ্দেশ্য পালনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি