Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের নদী আমাদের সম্পদ

সোহেল মিয়া
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:৪৮

পৃথিবীর ইতিহাস খুঁজতে গেলে দেখা যায় প্রায় সকল বড় বড় মানবসভ্যতা গড়ে ওঠেছিল নদীর তীরে। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নগর, বন্দর, শহর, গ্রাম, জেলেপাড়া, বাণিজ্যকেন্দ্র, প্রভৃতি। এই নদীকে ঘিরেই ছিল আদিকালের যাতায়াতের সকল ব্যবস্থা। জাহাজে, নৌকায় চড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত মানুষ ঘুরে বেড়িয়েছে। কৃষি, মৎস্য, জেলেদের পেশা এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সকল কিছুর একমাত্র উৎস ছিল নদী। পরিবেশ রক্ষায় ও নদীর ভূমিকা অপরিসীম। নদী আজ দখল, দূষণ আর ভরাটের প্রতিযোগিতায় বিপন্ন; অনেকাংশে বিলুপ্ত। নদীর অবৈধ দখলের কারনেই দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

বিজ্ঞাপন

সুনামগঞ্জ জেলায় জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ২৭ টির ও অধিক ছোট বড় নদী। যেমন,সুরমা,কুশিয়ারা,মহাসিং নদী, মরাচেলা নদী, খাশিয়ামারা, রক্তি নদী, আপার ধোলাই, সোমেশ্বরী নদী, মনাই নদী, মাই নদী, বৌলাই নদী, কংশ নদী, পাটলাই নদী, যাদুকাটা, নাইন্দা গাঁও, কানদী নদী, চামতি নদী, দারাইন নদী, ডাউকা নদী, বিবিয়না নদী, হেরা চামতি, কামার খালী নদী, চলতি নদী, পুরাতন শ্রবমা নদী, নলজোর নদী, কালনী নদী।নদীগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে এই এলাকার মানুষের জীবন, পেশা, কৃষি, ব্যবসা, খাদ্য-পুষ্টি। নদী ছিল এই এলাকার সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র।নদীই মানুষের প্রাণ।

বিজ্ঞাপন

কত বাহারি নামের নদীই না ছিলো সুনামগঞ্জের ভুমিতে। যেসকল নদী গুলো থেকে মানুষ উপকৃত হতো,আজ সেসকল নদীর কারনেই মানুষ ক্ষতির মুখে।

এ জেলার অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভৌগলিক অবস্থান সমগ্র বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে এ জেলাকে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। জেলার বেশির ভাগ অঞ্চলই হাওর, বাওড়, ও অপেক্ষাকৃত নীচু অঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং বৎসরের প্রায় ৭/৮ মাস জলমগ্ন থাকে। বর্ষার সময় এখানে সমুদ্রের মত ঢেউ খেলে এবং গ্রামগুলোকে মনে হয় এক একটি ছোট ছোট দ্বীপ। অনেক ছোট ছোট নদী ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা- কুশিয়ারায় পতিত হয়েছে। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল চেরাপুঞ্জি এ জেলার উত্তর প্রান্ত থেকে মাত্র প্রায় ৩৫ কি.মি. দূরে। তাই এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশী।

বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলায় হাতে গুনা কয়েকটি নদী ছাড়া অধিকাংশ নদীগুলো বিপন্ন; কোন কোনটা বিলুপ্ত। মরাখালে পরিণত হয়েছে নদীগুলো। অবৈধ দখলদারদের কারনে নদী গুলো বিলুপ্ত ও মরানদীতে পরিনত হওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে ও প্রভাব ফেলছে। দূষিত করে রেখেছে পরিবেশ।

নদীকে কেন্দ্র করে চলে কৃষকের কৃষি কাজ। এ অঞ্চলের খাদ্য যোদ্ধারা বন্যা, খরা, বজ্রপাতসহ প্রতিকুল পরিবেশ, আফাল, পাহাড়ি ঢল, রোগবালাইয়ের সাথে যুদ্ধ করে ঘরে তুলতো খাদ্যসম্পদ। নদী থেকে পানি তুলে সেচ দিয়ে চলতো কৃষি কাজ। বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ অঞ্চলের কৃষিকেরা সেচের পানিরজন্য সম্পুর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মাটির নীচের পানির উপর। অধিক ফলন ও খাদ্যনিরাপত্তার নামে বাহিরের প্রযুক্তির ব্যবহার করে তুলছে মাটির নীচের পানি। এতে যেমন লাভের চেয়ে ক্ষতির দিকটা যেমন দেখা যাচ্ছে,তেমনি ভালো ফলনের চেয়ে খারাপটা ও বেশি হচ্ছে। যার ফলে আমাদের পরিবেশ আজ হুমকিতে।

নদী আমাদের অস্তিত্ত্বের অংশ। নদী বাঙালীদের নান্দনিকতার উৎস। নদীর আত্মহনন বা হত্যা দিয়ে আমরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির সচল ধারাকে অবলুপ্ত করতে চাই না। সভ্যতা প্রবহমান; সংস্কৃতি চলমান ধারায় পরিবর্তনের অগ্রদূত। নদী সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রধানতম ধারক ও বাহক। নদীকেন্দ্রিক জীবন প্রবাহের এ ধারাকে সজীব ও জীবন নির্ভর করতে হবে। রক্ষা করতে হবে আমাদের পরিবেশ।

দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর ইত্যাদির পানির ওপর কৃষি ও শিল্প অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। যোগাযোগব্যবস্থাও পানি পথের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই আমাদের নদী,আমাদের সম্পদ,আমাদের ওই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এজেডএস

আমাদের নদী সোহেল মিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর