Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যৌক্তিক করা হোক

সুশান্ত দাস গুপ্ত
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:১৯

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট দেবার পর অনেকেই কমেন্টে দ্বিমত পোষণ করেছেন। অনেকে আমাকে কলও দিয়েছেন এবং অনেকে ইনবক্সে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। বেশিরভাগই তাদের হতাশার কথা বলেছেন। তারা এ সিদ্ধান্তে খুব একটা খুশী হয়েছে বলে মনে হল না। তারা মনে করে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বৈষম্য সৃষ্টি সৃষ্টি হল আবারও। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সুবিধা পাবেনা, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েই সুবিধা পাবে। ফলে স্থায়ীভাবে বয়সসীমা বৃদ্ধিই একমাত্র সমাধান বলে তারা মনে করে।

বিজ্ঞাপন

তারা আমাকে কিছু ডকুমেন্টস পাঠায় ইমেইলে। এগুলো পড়ে কিছু নতুন তথ্য পেলাম। যেমন বিশ্বের ১৬০টিরও অধিক দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ এর বেশি। বেশিরভাগ দেশে ৩৫ বা তার অধিক। আমেরিকা বা ইউরোপ কান্ট্রির কোন কোন দেশে বয়সসীমাই নেই। অন্যদিকে দক্ষিন এশিয়াতে একমাত্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য সব দেশেই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বা তার বেশি। কেবল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেই সেটা ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত। এটি খুবই হতাশার ও একই সাথে দুঃখজনক যে অন্যান্য সব সেক্টরে পাকিস্তানের চেয়ে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু চাকরিতে বয়সসীমার ক্ষেত্রে তাদের নীতিকে আঁকড়ে ধরে আছি আমরা।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এদেশে বয়সবৃদ্ধি হয়। তখন আমাদের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। প্রায় ৩১ বছর ধরে এই ব্যাপারটাতে হাত দেয়া হচ্ছে না। আমার মনে হয়, পুরাতন ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করাটাই সার্বিকভাবে সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে সেটা ৩৩ হবে, নাকি ৩৫ হবে নাকি তারও বেশি হবে, সেটা সার্বিক দিক বিবেচনা করে নীতিনির্ধারকেরা সিদ্ধান্ত নিবে। তবে এই ট্যাবুটা ভাংগা দরকার বলেই মনে হয়।

যেহেতু আমাদের গড় আয়ু এখন প্রায় ৭৩ বছর। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যেতেই পারে। সেটাই বরং সবার জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। এমনকি আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়, বেকারত্ব কমাতেও সাহায্য করবে। বয়সসীমা বৃদ্ধি পেলে তখন কেউ সরকারি চাকরির আশায় বসে না থেকে কিছু না কিছুতে ঢুকে যাবে। এখন ৩০ এর একটা সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে সরকারি চাকরিতে শেষ পর্যন্ত ট্রাই করার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় চাকুরী প্রার্থীদের মাঝে। কিন্তু বয়সটা যখন আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে কিংবা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, তখন সেই প্রবনতা অনেকটাই কমে আসবে। কারন একজন চাকুরী প্রার্থীর হাতে যথেষ্ট পরিমান সময় থাকলে সে বেসরকারি কোন কিছুতে ঢুকে পাশাপাশি সরকারি চাকরির প্রিপারেশন নিতে পারবে।

আরও একটি তথ্য জানলাম, চাকরি প্রার্থীদের একটা বড় অংশ প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য অনেকদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসছে। আমার মনে হয়, সরকার এই বিষয়টা নিয়ে পুনরায় ভেবে দেখতে পারে। আমেরিকা বা ইউরোপ কান্ট্রিগুলোর মত না হলেও অন্তত দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

তরুণদের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম, তারা চাকরি চায় না। শুধু নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সু্যোগটা প্রসারিত করতে চায়। সরকার চাইলে বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারে।

এটা কেবল তরুণদের জন্য আশার আলো যে বাঁচিয়ে রাখবে, তা না। নির্বাচনের মাঠে তরুনদের ভোট পেতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

লেখক: সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সুশান্ত দাস গুপ্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর