Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহালয়া; আনন্দময়ীর আগমনীবার্তা

অলোক আচার্য
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৫২

‘আনন্দময়ীর আগমনে
আনন্দে দেশ গিয়েছে ছেয়ে।
হেরো ওই ধনীর দুয়ারে
দাঁড়াইয়া কাঙালিনী মেয়ে…।’
_ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সব ধর্মের সহাবস্থানের দেশ বাংলাদেশ। উৎসব আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। দেবী দূর্গা সপরিবারে মর্ত্যে তার পিতৃগৃহে বেড়াতে এসেছেন। বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি ঘটবে। পৃথিবীতে সুর আর অসুরের দ্বন্দ্ব চিরকালের। অসুরের দাপটে সুর অর্থাৎ শুভ শক্তি যুগে যুগে কোণঠাসা হয়েছে। তারপর যখন পৃথিবী পাপে ভারাক্রান্ত হয়েছে তখনই কোনো শুভ শক্তি পৃথিবীতে এসেছে। দেবী দূর্গা হলো সেই শুভ শক্তি। শত্রুদহনকালে তিনি অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা। তিনিই জগদীশ্বরী। হিন্দুশাস্ত্র দেবীপুরাণ, মৎসপুরাণ,মার্কণ্ডেয় পুরান, কালিকাপুরাণ ও দেবী ভাগবতে দেবী দূর্গা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। এখন যেমন পৃথিবীতে ক্ষমতাশালীদের উল্লাস, ধর্ষকদের কুৎসিত হাসি, অসৎ মানুষের দাপটে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস- এসবই মনুষ্যত্বের বাইরে। এরাই অসুর। মনুষ্যত্ব আর পশুত্বের লড়াই চলছে। তাতে মনুষ্যত্ব আজ কোণঠাসা। বহুযুগেও এরকম হয়েছে। পৃথিবীতে ক্ষমতাশালীদের দাপট বেড়েছে। তারপর একসময় তার পতন ঘটেছে কোনো একক শক্তি বা বহুশক্তির মিলিত রূপের কাছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে একটি ভালো শক্তি জাগ্রত হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীতে যখন আসুরিক শক্তি প্রবল হয়ে ওঠে তখন তা বিনাশ করার প্রয়োজন হয়। তা যেমন বহুকাল আগেও হয়েছে, আজও হচ্ছে। অত্যাচারী রাজারা প্রজাদের ওপর অত্যাচার করেছে, অন্যদেশ আক্রমণ করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। তারপর কেউ একজন এসেছে সেই অপশক্তিকে দমন করতে। এই অসুর বধ করার জন্যই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন দেবী দুর্গা। সেই অসুরের নাম ছিল মহিষাসুর- নারী শক্তিকে যে অসুর অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল, যার দাপটে দেবতারা হয়েছিল স্বর্গ ছাড়া। নারী শক্তিকে যখন অবমাননা করা হয় তখন দেবী দূর্গা আবির্ভূত হন।

বিজ্ঞাপন

শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। পূজা সনাতন ধর্মামলম্বীদের মাঝে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। এই করোনা ভাইরাস এখনো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়নি। মহামারীর মধ্যেও শংকা থাকলেও পূজার আনন্দে মেতে উঠেছে সবাই। একটি উৎসব সবার মনেই আনন্দ বয়ে আনে। ইদ, পূজা, বড়দিন বা বৌদ্ধ পূর্ণিমা- এসব আমাদের সবাইকে একসাথে বেঁধে রেখেছে। বাঙালির প্রাণ একই সূত্রে বাধা। তা সে সব মানুষের। যুগ যুগ ধরেই সহাবস্থানের মাধ্যমে বাঙালির একাত্বতা চোখে পরে। একজন আরেকজনের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। পূজা তাই একটি মেলবন্ধন।

পঞ্চমীতে দেবী দূর্গার খাটে ওঠার মধ্যে দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু। মহালয়ার মাধ্যমেই তা শুরু হয়েছে। দেবী দুর্গাকে বলা হয় দুর্গতিনাশিনী। পৃথিবীর মানুষ যখন কোনো অমানুষ বা অসুরের দ্বারা দুর্গতি বা অত্যাচারের শিকার হয়েছে ততবার দেবী দূর্গা আবির্ভূত হয়েছে তাদের ধ্বংস করার জন্য। সনাতন ধর্মের আদি শক্তি দেবী দূর্গা। হিমালয়সম সিংহ তার বাহন। প্রলয়ংকরী সেই যুদ্ধে সিংহবাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। দশহাতে দশ অস্ত্র নিয়ে দেবী অসুরদের সাথে যুদ্ধ করেছেন।

দেবী দূর্গা সমগ্র নারী শক্তির প্রতীক। নারীদের অনুপ্রেরণা। নারীরা দুর্বল নয় বরং সব অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারে সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। অসুর কে বা কারা? যার মধ্যে সুর নেই অর্থাৎ নম্রতা, বিনয় ও মনুষ্যত্ব নেই সেই অসুর। এসব অসুররুপী মানুষগুলো আজ সমাজে বড় বেশী হয়েছে। তাদের দাপটে সুর অর্থাৎ সত্যিকারের মানুষগুলো কোণঠাসা। অসহায় নারীদের আর্তনাদ আকাশে বাতাসে। নারীর মধ্যেই সেই শক্তি আছে। যা এসব অসুরকে বধ করতে পারে, ধ্বংস করতে পারে। নারী শক্তি যুগে যুগে জাগ্রত হয়েছে। আজও তাই হবে। নারী শক্তি ঠিক জেগে উঠবে। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে দেবী দূর্গা অসুরের সাথে যুদ্ধে রত। মহিষাসুর বধের যে কাহিনী আমরা জানি তাতে মহিষাসুর ছিল এক অত্যাচারী অসুর। তার অত্যাচারে স্বর্গ, মর্ত্য পাতাল কম্পিত হয়েছিল। দেবতারা তাদের দেবলোক থেকে বিতাড়িত ছিল। স্বর্গলোক হারিয়ে তারা এসে উপস্থিত হয় প্রধান ত্রিদেব অথাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের কাছে। তারপর তাদের এবং অন্যান্য উপস্থিত দেবতাদের তেজ থেকে আবির্ভাব হয় এক শক্তি। এই শক্তিই আদি শক্তি মহামায়া।

বিজ্ঞাপন

কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরান অনুসারে রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দূর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। এই সময়কালকে অকালবোধন বলা হয় কারণ হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে এই সময় দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। দেবী দূর্গার আরও রূপ ও নাম রয়েছে। প্রতিটি রুপেই তিনি পুজিত হন। দেবী চন্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, নারায়ণী, কাত্যায়ণী প্রভৃতি বহুনাম রয়েছে তার। দেবী কালী তারই একটি জনপ্রিয় রূপ। এই রূপেও তিনি বহু ভয়ংকর অসুর বধ করেছেন। তার অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজারূপে মূর্তি দেখা যায়। তবে দুর্গা নামে পরিচিত হওয়ার কারণ হলো তিনি দেবতাদের অনুরোধে দুর্গমাসুর নামে এক অসুরকে বধ করেছিলেন। পৃথিবী ব্যাপিত রেখেছেন যিনি তিনিই আদিশক্তি।

দেবী দূর্গা হলেন দশভূজা। তিনি দশ হাতে দশ অস্ত্র ধারণ করেন। ব্রহ্মার বরে বলিয়ান মহিষাসুর কোনো পুরুষ দ্বারা বধ করার ছিল না। আর নারী শক্তিকে অবজ্ঞা করেছিল সেই মহিষাসুরও। তার ফলে তাকেও মরতে হয়েছে। দেবী দূর্গার চরণে তার পতন হয়। আজ আমরা সেই রূপকেই পূজা করি। মহিষাসুর তার পাপের শেষ সীমায় পৌছে গিয়েছিল। রণভূমিতে একে একে মহিষাসুরের সেনাপতি চিক্ষু, চামুর নিহত হলে মহিষাসুর নিজেই আসেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তখনও তিনি দেবী দূর্গাকে অবজ্ঞা আর অবহলোই করছিলেন। তার ধ্বংস অনিবার্য ছিল। কারণ ক্ষমতার অহংকার, নারী শক্তিকে অবহেলা, অত্যাচার এসবই তার পতন তরাণ্বিত করেছিল। পৃথিবীতে যারা অত্যাচারী, লোভ আর ক্রোধান্বিত থাকে তারাও ধ্বংস হয়। কোনো শক্তি আসে তাকে ধ্বংস করতে। প্রতিটি নারী এক একটি শক্তি স্বরুপ। তাদের মধ্যেও সেই বিনাশী শক্তি আছে। যা সব হিংসার হায়েনাকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

সনাতন ধর্মামলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা এই করোনাকালেও মানুষের মুখে একটু হাসি বয়ে আনবে। মনে শক্তি যোগাবে। আর দেবীর কাছে প্রার্থনা থাকবে পৃথিবীকে পুরোপুরিভাবে করোনামুক্ত করে মানুষকে একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে। আর সমাজে নারীর যে অপমান, অবজ্ঞা তার বিরুদ্ধে যেন নারীদের প্রতিবাদের শক্তি যোগায় এবং সমাজকে কুলষমুক্ত করে। দেবীর বিসর্জনের সাথে সাথেই সব অসুরের বিনাশ হোক সমাজ থেকেই।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

অলোক আচার্য মহালয়া; আনন্দময়ীর আগমনীবার্তা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর