Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে প্রবীণ; প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা

অলোক আচার্য
১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৩৭

প্রবীণ ও নবীন মিলিয়েই এ ধরণী। আজ যারা নবীন কাল তারা প্রবীণের তালিকায়। প্রতি বছর ১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রবীণ বা বয়স্করা হচ্ছেন সেই সকল অভিজ্ঞ ব্যক্তি যারা আমাদের পথ চলায় নির্দেশনা দেন, উপদেশ দেন। যারা হচ্ছেন একেকজন জীবনাদর্শে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং যারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের উপকৃত করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে প্রবীণ ব্যক্তি বা সিনিয়র সিটিজেন হলেন আমাদের পথ প্রদর্শক। তারা সর্বদাই আমাদের মঙ্গল কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে নোবেল বিজয়ীদের নির্বাচিত প্রবন্ধ গ্রন্থে রিগোবার্তা মেনচু তার তার বলেছেন, আমাদের বয়োজ্যষ্ঠ ব্যক্তিরা শুধু যে প্রাজ্ঞতা, আশা এবং সাংস্কৃতিক সমার্থক তা ই নন, তারা আমাদের ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিতও করেন এবং অভিজ্ঞতার উত্তরাধিকারীও হন। বয়োজ্যেষ্ঠরা যেকোন ব্যক্তির জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়কে, তার চরিত্রের সাধুতাকে শ্রদ্ধা করে চলেন।তারা যেকোন ব্যক্তির ভুলভ্রান্তি ও আচার-আচরণের ধরন ও তাৎপর্য, এবং তার নিয়তির সূত্রকে শনাক্ত করে থাকেন যতোদিন না ওই ব্যক্তি নিজেই বড় হয়ে উঠে এবং বয়োজ্যেষ্ঠতে পরিণত হয়। আমাদেও বয়োজ্যেষ্ঠরাই হলেন আমাদের বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞতা, তারা হলেন আমাদের ইতিহাসগ্রন্থ আমাদের গ্রন্থাগার যাদের কাছে আমরা পরামর্শ চাই এবং উপদেশ নেই এবং সর্বোপরি আমরা তাদের প্রতি গভীর আস্থা রাখি। বৃদ্ধ মানুষেরা হলেন গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞানের অধিকারী এবং তারা আমাদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞাপন

সরকার ২০১৪ সালে প্রবীণ ব্যক্তিদের সিনিয়ন সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫ প্রণয়ন করেছে। ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদাপর্ণ করবে ২০২৯ সালে। আর সেখান থেকে আস্তে আস্তে প্রবীণপ্রধান সমাজ পরিণত হবে ২০৪৭ সালে। মাত্র ১৮ বছরে এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দ্রুততম সময়ে এই পরিবর্তন ঘটতে চলেছে বিশ্বে এমন সব দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরে এটি ঘটবে ১৭ বছর সময়ের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি সময় পাবে ফ্রান্স, তাদের এই পরিবর্তন ঘটতে সমং লাগবে ১১৫ বছর। আমাদের দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা কত? গত বছর পত্রিকায় প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবীণ মানুষদের এই সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ তা হবে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি , ২০৬১ সাল নাগাদ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি! ২০৫০ সাল নাগাদ এদেশের ২০ শতাংশ নাগরিক প্রবীণ হবেন এবং শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ। আমাদের দেশে প্রবীণের সংখ্যা তরুণদের ছাড়িয়ে যাবে। দেশে মানুষের গড় আয়ু ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবন যাত্রার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি এ গড় আয়ুও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসায় তুলনামূলকভাবে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। সুতরাং প্রবীণদের জন্য আরো অধিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত এবং দৃঢ় পরিকল্পনা প্রয়োজন। জাপানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়োবৃদ্ধ মানুষের বসবাস। সেখানে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে এবং ২০১০ এ শতায়ু মানুষের সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৪৪৯ জন। তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজন। কোনো গণপরিবহনে যেনো প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ জন্ম নেওয়ার পর থেকে ক্রমেই বেড়ে ওঠে। সময়ের সাথে সাথে দেশে প্রবীণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন তা হলো কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমলে তা নানা ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। সুতরাং একটি প্রস্তুতি থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সমাজের নানা ঘাত প্রতিঘাত, সুখ, দুঃখের নানা পথ পাড়ি দিয়ে কিশোর ও যৌবন পার দিয়ে জীবনের ক্রান্তি লগ্নে পৌছে। একসময় শরীরে বাধ্যর্ক আসে। কমে আসে কার্য ক্ষমতা। সুস্থ স্বাভাবিক প্রতিটি মানুষের জীবনেই এই চক্র আবর্তিত হয়। আজ আমাদের মা বাবা প্রবীণ ব্যক্তি। আগামীকাল আমার জন্য এই সময়টা অপেক্ষা করছে। তারপর আমার সন্তানরা। অর্থাৎ জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষ প্রবীণ হবে। এসব মানুষের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রগতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বাইরের কাজে। সেই একসাথে দুপুরে বা রাতে মা বাবা ছেলে মেয়েদের নিয়ে একসাথে খাওয়ার সময়টুকুও আজ যেন অতীত হয়ে গেছে। আগেকার একান্নবর্তী পরিবারে দেখা যেত পরিবারে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ তাদের নির্দেশক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো এবং সবাই তা মেনে চলতো। কিন্তু আজ সে একান্নবর্তী পরিবার নেই। নেই সেই পাবিারিক বন্ধন। মা বাবার সাথে দুরত্ব তৈরি হচ্ছে ছেলেমেয়ের। অনেক পরিবারেই তাদের বোঝা হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। কর্মক্ষমতা হারিয়ে একসময় পরিবারের কাছেই নিজেকে বড় অযাচিত মনে করেন তারা। অথচ এই তারাই কিন্তু একসময় নিজেদেও সবটুকু উজাড় করে আমাদের বড় করেছেন। পারিবারিক বন্ধন যত আলগা হচ্ছে বৃদ্ধ হওয়ার এই সময়টা বর্তমান সমাজে ক্রমেই একাকিত্ব ও একঘেয়েমীপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাদের অনেকেই অবাঞ্চিত ও অবহেলিত চোখে দেখে। সাময়িক যৌবনের অহংকারে অবহেলা করতে শুরু করি এক অমোঘ সত্যকে। প্রবীণ ব্যক্তিরা সর্বদা শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ব্যক্তি। সর্বদা বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করাই আমাদের কাজ। আমাদের উচিত তাদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে। যাতে সেই শিক্ষা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করে নিজেদের ভাল করতে পারি। আমাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে আজ আমরা যে আচরণ শেখাবো ভবিষ্যতে আমরা বড় হলে সেই আচরণ ফেরত পাব। বয়স্কদের নিরাপত্তা দেওয়া সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাদের জীবনের শেষ দিনগুলো যেন আর্থিক সংকটে না কাটে, চিকিৎসা নিরাপত্তা এবং মাথার ওপর নিশ্চিত ছাদ থাকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

অলোক আচার্য বাড়ছে প্রবীণ; প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর