ঢাকায় বাসের রেষারেষিতে আর কত প্রাণ ঝরবে?
৭ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৪৮
প্রথম দৃশ্য: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক। বিমানবন্দরের সামনেই গাজীপুরগামী দু’টি বাস একটির সঙ্গে অপরটি লেগে যায়। পিছনের বাসটি সরাসরি এসে ঢুকে পড়ে সামনের বাসটির একদম দরজায়। এরপর বাসের গা ঘেঁষে আটকে থাকা। অপরপাশে জায়গা থাকলেও সেদিকে যেন বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই চালকের।
দ্বিতীয় দৃশ্য: সকাল তখন ৭টা ৫৭মিনিট। রাজধানীর মগবাজার মোড়ে থামলো মালিবাগ থেকে আসা দুটি বাস। একটু ফাঁকা জায়গা পেতে না পেতেই সামনের বাসটির পেছনের অংশের সঙ্গে রেষারেষি। একপর্যায়ে আটকে গেল বাসটি।
এভাবেই রাজধানীতে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠছে বাসে বাসে রেষারেষির ঘটনা।
প্রথম ঘটনা: গেল ৩০সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হন ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ফারুক (৩৬)। তিনি পেশায় ইট-বালুর ব্যবসা করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী হাশেম রোডের মাথায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে।
দ্বিতীয় ঘটনা: ঠিক একইভাবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো আজ সোমবার ৩ অক্টোবর রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানে। যাত্রীবাহী দুই বাসের চাপায় হালিমা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও দুপুর দেড়টার দিকে ওই নারী মারা যান। নিহত হালিমা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আইন্টার গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী।
তৃতীয় ঘটনা: ২৯সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস চাপায় অজ্ঞাতনামা (১৪) এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে দিন দিবাগতর রাত দেড়টার দিকে মহাসড়কটির বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশনের নতুন ভবন সংলগ্ন রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এ তিনটি ঘটনাই সম্প্রতি সময়ে ঘটা। ৪-৫দিনের ব্যবধানে রাজধানীতেই বাসে বাসে রেষারেষিতে ঝরলো তিনটি তাজা প্রাণ। গণমাধ্যমের খবরে চোখ রাখলে দেখা যায়, রাজধানীতে এভাবে প্রতিনিয়ত বাসে বাসে রেষারেষিতে প্রাণ হারাচ্ছেন বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত লোকজনও৷
রাজধানীতে বাস চালকদের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড যেন দেখার কেউ নেই৷ একেতো তাদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। বাসে সিট খালি না থাকলেও বাসের ভেতর ঠাসাঠাসি করে যাত্রী উঠানো যেন তাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এর মাঝেই সুযোগ পেলেই পাল্লা দিয়ে বাস একটি সঙ্গে আরেকটির সংঘর্ষ করছে চালকরা। এতে বিপন্ন হয়ে উঠছে ঢাকার জনজীবন।
যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক কেফায়েত শাকিল বলেন, ঢাকার বাসগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট যে, বাসগুলো প্রতিনিয়ত একটির সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধে লিপ্ত। দেখলেই বোঝা যায়, বাসগুলোকে এই রকম রেষারেষি করেই টিকে থাকতে হয়। এটি সমাধানের জন্য ঢাকাতে বিভিন্ন সময় আলোচনাও হচ্ছে, কিন্তু কোন সমাধান মিলছেনা। অভিযান পরিচালনা করেও যে এটা বন্ধ করা যাবে, সেটাও আমি বলছিনা। এটার একটাই সমাধান, বাসগুলো দেখেই, চিহ্নিত করেই ব্যবস্থা নেয়া। বিআরটিএ যদি ঘোষণা দিয়ে দেয়, ঢাকায় এ রকম ফিটনেসবিহীন বাস চলতে দেয়া হবে না, তাহলেই এমন রেষারেষি বন্ধ হবে, প্রাণও ঝরবে না।
গুগলে ‘রাজধানীতে বাস চাপায় নিহত’ এটি লিখে সার্চ দিলেই আপনি আঁতকে উঠবেন। একের পর এক বাস চাপায় নিহতের ঘটনা দেখে আপনার কাছে মনে হবে এটি কোন পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
ঢাকায় বাস চালকদের অদক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবই রীতিমতো এসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। যদি বাস চালকদের আইনের সুষ্ঠু ধারার আওতায় না আনা হয়, তবে তাদের এই বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে ঝরতেই থাকবে একের পর এক তাজা প্রাণ।
সারাবাংলা/এজেডএস