জন্ম হোক যথা-তথা কর্ম হোক ভালো!
৭ অক্টোবর ২০২২ ১৯:১৩
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডেনের এসভান্তে প্যাবো (Svante Pääbo)। গত সোমবার নোবেল কমিটি তাঁর নাম ঘোষণা করে। নোবেল কমিটির তরফে বলা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই বছরের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সুইডেনের এই বিজ্ঞানীকে। বিলুপ্ত হোমিনদের জিনোম (genome) এবং মানব প্রজাতির বিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে এই বিজ্ঞানীকে।
মজার ব্যপার হলো এসভান্তের বাবা, সুনে ব্যারিস্ট্রোম (Sune Bergström), ১৯৮২ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। সুনের জন্ম ১০ জানুয়ারি ১৯১৬ এবং মৃত্যু ১৫ আগস্ট ২০০৪। এসভান্তের জন্ম ২০ এপ্রিল ১৯৫৫। এসভান্তের মা করিন প্যাবো ( Karin Pääbo), রসায়নবিদ। মূলত এস্টোনিয়ার নাগরিক তবে তখন থেকেই তিনি স্টকহোমে বসবাস করেন এবং সুনে ব্যারিস্ট্রোমের সাথে গোপন প্রেমে পড়েন। সেই সম্পর্কে এসভান্তের জন্ম হয় এবং সুনে গোপনে করিন এবং এসভান্তের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। পরে সময়ের সাথে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায় এবং সমাজে এসভান্তের পরিচয় সুনের সন্তান হিসাবে মর্যাদা পায়। মূলত সুনে ব্যারিস্ট্রোম তখন বিবাহিত এবং তার নিজ পরিবার থাকা সত্ত্বেও তিনি করিনের প্রেমে পড়েন। শুরু থেকে এসভান্তে তার মা করিনের পরিচয়ে বড় হতে থাকে বিধায় মার পদবি এসভান্তের “Surname” প্যাবো হিসেবে থেকে যায়।
ছোটবেলা থেকেই মা করিন এসভান্তেকে নিয়ে মিশর ভ্রমণ করেছেন। মিশরের ইতিহাস এবং মুমির উপর এসভান্তের সেই ১৩ বছর বয়স থেকেই আগ্রহের জন্ম নেয়। সেই ছোটবেলার আগ্রহ যা তাকে দিনে দিনে আবিষ্কারের দিকে নিয়ে গিয়েছিল যার ফলস্বরূপ এ বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর তার নোবেল পুরস্কার অর্জন।
সুইডেনের সিস্টেম বায়োলজির অধ্যাপক স্টেন লিনারসন ( Sten Lindersson )এসভান্তে প্যাবো সম্পর্কে বলেছেন “তিনি একজন অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং খোলা মনের সৎ ব্যক্তি”।
সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় তাকে তার ১০ কোটি টাকা পুরস্কারের অর্থ কীভাবে ব্যয় করবেন জিঙ্গেসাবাদ করলে বলেছেন, তিনি তার সুইডিশ সামার হাউজ রেনুভেট করবেন সে বিষয় তিনি নিশ্চিত।
এসভান্তের স্টোরিটি জানার পর মনে পড়ে গেল আমাদের সমাজের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের জীবনের কথা। যেখানে আমরা তাদের জীবন নাসে সারাক্ষণ ব্যস্ত। এখনও আমরা সমাজের সাধারণ মানুষের মর্যাদা দিতে লজ্জাবোধ করি। গরিব ধনীর পার্থক্যকে বড় করে দেখি। কিন্তু, গোবরেও যে পদ্মফুল ফোটে তা শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেও লক্ষণীয়।ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হতে দেখেছি। রাজার ছেলে রাজা হতে দেখেছি। কৃষকের ছেলে কৃষক হতে দেখেছি। নোবেল পুরস্কার পাওয়া বাবার পরিচয় ছাড়া গড়ে উঠা এক সন্তানের নোবেল পুরস্কার জয় লাভ করার গল্প এর আগে শুনিনি। সব কিছুই অসম্ভব যতক্ষণ না কেউ সেটা সম্ভব না করে। সুইডেনের এসভান্তে প্যাবো তা প্রমাণ করলেন তার নোবেল পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
সারাবাংলা/এজেডএস