Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আত্মহত্যা প্রতিরোধ: এখনই এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে

মো. জাহিদ হাসান
১১ অক্টোবর ২০২২ ১৫:১০

স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বিনাশ করার ব্যাপারটা ভাবলেই ভয়ে আঁতকে উঠতে হয়। জীবন সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ দান । জীবন নিয়ে চলার পথ বড়ই বিচিত্র। জীবনে চলার পথে বিভিন্ন অনুভূতি, স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। হাসি, আনন্দ, দুঃখ, বেদনা ইত্যাদি সবকিছুই আমাদের জীনের অংশ। জীবনে কখনও আসে বাঁধভাঙা খুশির জোয়ার, আবার কখনও নেমে আসে অমাবস্যার অন্ধকারের মত অসহনীয় কষ্ট। কখনও কখনও চারিদিক থেকে ব্যর্থতা, কষ্ট, বিপদ আপদ এমনভাবে আসে যে, জীবনটা অন্ধকার কারাগারের মত মনে হয়। বুকের মাঝে বিষাদের অনুভূতি এতটা প্রকট আকার ধারন করে যে, শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এই ভয়ংকর কষ্টে পতিত হয়ে অনেকে মুক্তির আশায় বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। কিন্তু মুক্তি কি এত সহজ? আত্মহত্যায় কি কখনও সমাধান মেলে?

বিজ্ঞাপন

মুক্তি আত্মহত্যায় নয়, ধৈর্য্য ধরে কঠোর সংগ্রাম করে সফলতা অর্জন করাটাই মুক্তি। সৃষ্টিকর্তা কাউকে সারাজীবন ধরে শুধু কষ্টই দেন না। আবার কাউকে সারাজীবন ধরে সুখও দেন না। বরং, সুখ-দুঃখ সবার জীবনেই পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে। তাই যেকোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েই ধৈর্য্যহারা হওয়া একদম উচিত নয়। সমস্যা সমাধান অবধি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের মাঝে এই বোধটুকু যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যা একটি মারাত্মক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর এক জরিপ অনুসারে, দেশে বছরে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছে। জরিপের হিসাব অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার এই ভয়াবহ প্রবণতা সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ থেকে আরও স্পষ্ট হওয়া যায়। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে প্রকাশিত হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত (প্রথম আট মাস) আত্মহত্যা করেছে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ছিল ১৯৪ জন, কলেজ পড়ুয়া ছিল ৭৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৫০ জন। শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার এরূপ মারাত্মক প্রবণতা আমাদের জন্য আসলেই উদ্বেগের বিষয়। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সকল মহলের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যকর পদক্ষেপ এখনই জরুরী। নতুবা, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারন করবে।

বিজ্ঞাপন

আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বিভিন্ন আত্মহত্যার ঘটনা অনুসন্ধান করলে যে বিষয়গুলো পাওয়া যায় তা হলো অভিমান, প্রেম ঘটিত কারণ, বেকারত্ব, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, সেশনজট, পড়াশোনার চাপ, দারিদ্রতা, ধর্ষন ও যৌন হয়রানি, মিথ্যা অপবাদ, অপমান, হতাশা ও বিষন্নতা, পবিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া ইত্যাদি। আবার, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পড়াশোনার মাত্রাতিরিক্ত চাপকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন মনোবিদগণ। এই সমস্ত কারণগুলো নির্মূলের মাধ্যমেই সমাধানের পথে এগোতে হবে। সন্তানের সাথে বাবা মায়ের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সন্তানের সকল সমস্যায় পাশে থেকে অনুপ্ররণা দিতে হবে। সন্তানরা যেকোন অভিমান, ক্ষোভ ও জেদের বশবর্তী হলে সুন্দরভাবে বোঝাতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে। একইসাথে, শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে হবে। কেন্দ্র থেকে নিয়মিত সেবা ও পরামর্শ প্রদান করতে হবে। ইভটিজিং, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীদের জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। কোন নারী সহিংসতার স্বীকার হলে প্রয়োজনীয় আইনী সহয়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে হবে। সর্বোপরি, সকলকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে এবং নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা সমাজে সকলে সুন্দরভাবে বসবাস করুক। আত্মহত্যার ন্যায় ভুল পথে আর কোন প্রাণ ঝড়ে পড়ুক, এটা আমাদের একদমই কাম্য নয় ।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আত্মহত্যা প্রতিরোধ: এখনই এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে মুক্তমত মো. জাহিদ হাসান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর