Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলমান সময়ে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই

কবিতা রাণী মৃধা
১৬ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৫১

কারিগরি ও কর্ম উপযোগী শিক্ষা একটি দেশের শিল্প উন্নয়নের জন্য দক্ষ কারিগরি জ্ঞানে শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ কর্মী তৈরিতে প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমগ্র পৃথিবীতে যে দেশ যত বেশি দক্ষ কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে সে দেশ তত বেশী শিল্পউন্নত। কারিগরি শিক্ষা না থাকলে জনশক্তিকে পুর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়, কারণ বর্তমান ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে জনশক্তিকে শিল্প বান্ধব জনশক্তিতে রুপান্তরের বিকল্প নাই।

বিজ্ঞাপন

উপযুক্ত ও কর্মমুখী শিক্ষা না থাকলে কোনো দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সাপেক্ষেও অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করা যায় না। একই ভাবে প্রচুর জনশক্তি থাকলেও কারিগরি প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা না থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বিপুল সংখ্যক জনশক্তিকে উপযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যমে উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার করতে পারলেই সেই রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে তা বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে একটি কর্মে নিযুক্ত হতে পারে তাই কারিগরি শিক্ষা। আবার দক্ষতা উন্নয়ন বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে যে কর্মে প্রবেশ করে তাই হল দক্ষতা বৃদ্ধি বা প্রশিক্ষণ। সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের পর পেশা বা চাকরীর ক্ষেত্র নির্বাচন করার প্রয়োজন হয় না, কারণ সে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ। সে তার অর্জিত দক্ষতার সাথে মিল রেখে পেশা নির্বাচন করতে পারে। সাধারনত আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষার সাথে কর্মের কোন মিল থাকে না। কিন্তু কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি সর্ম্পূন মিল থাকে। এতে কর্মী ও কর্মদক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে কারিগরি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শক্তিতে রুপান্তর করে দেশের উন্নয়নে ও বিদেশে উচ্চ বেতনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনের উন্নতির শীর্ষ শিখরে অবস্থান করতে পারে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা চাকুরির পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ভাবে ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারে যা পরবর্তিতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

আমাদের দেশের এই বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠিকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার। আমাদের দেশের এই আঠারো কোটি জনসংখ্যা হচ্ছে আমাদের অন্যতম জাতীয় সম্পদ। দেশের এক তৃতীয়াংশ দরিদ্র জনগোষ্টিকে স্বল্পতম সময়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রম বাজারের মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভব। আমাদের দেশের জনশক্তির একটি বড় অংশই হচ্ছে বয়সে তরুণ আর এটাকে কাজে লাগাতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই। আমদের দেশের বিদেশগামী লোকের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ থাকে, এতে করে তারা নিম্ন বেতনে কর্মরত হয়। এই অভিবাসী শ্রমিকদেরকে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকার আয় উন্নতির ব্যাপক পরিবর্তন করা সম্ভব। আমাদের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হলো অভিবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ, এটাকে আমরা কয়েকগুন বৃদ্ধি করতে পারি শুধুমাত্র দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে। এতে আমাদের দেশের ও অভিবাসী শ্রমিকদের আয় বহুগুণে বেড়ে যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশ কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার কারনে আমাদের চাইতেও তাদের জিডিপি অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ তারা পূর্বে আমাদের চেয়েও নিম্নগামী অর্থনীতির দেশ ছিল। তবে আশার কথা হলো আমাদের বর্তমান সরকার ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এই কারিগরি শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড , কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর , শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থা। আমরা অতি দ্রুত সফলতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বর্তমান সময়ের দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে যার কারণে দেশের প্রায় ৬৮% মানুষ দরিদ্রসীমার মধ্যে বসবাস করছে। আর এই সময়ে যদি কারিগরি শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যায় তাহলে কিছুটা হলেও দেশ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

কবিতা রাণী মৃধা চলমান সময়ে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর