আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
২০ অক্টোবর ২০২২ ১৪:১৯
২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৬তম বর্ষ অতিক্রম করে ১৭তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। এটা নিসন্দেহে একটা আনন্দের বিষয়। আর এই আনন্দকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এই দিনে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক পুরান ঢাকার প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন হলেও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সুদীর্ঘ দেড় শ’ বছরেরও বেশি পুরনো ইতিহাস। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক সময়ের পাঠশালাটি এখন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্ম সমাজের শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্ম স্কুল। একটি পাঠশালা হিসেবে যাত্রা শুরু করে দেড় শতকের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার ইতিহাস বড়ই রোমাঞ্চকর।
জানা যায়, ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্ম স্কুল যাত্রা শুরু করে। ১৮৭২ সালে ব্রাহ্ম স্কুলের ভার তুলে দেয়া হয়েছিল বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় চৌধুরীর হাতে। কিশোরীলাল চৌধুরী তার পিতার নামে স্কুলের নামকরণ করেন ‘জগন্নাথ স্কুল’। এভাবেই ১৮৭২ সালে ব্রাহ্ম স্কুল থেকে জন্মলাভ করে জগন্নাথ স্কুল। ১৮৮৪ সালে জগন্নাথ স্কুলকে দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯০৮ সালে জগন্নাথ কলেজ প্রথম শ্রেণীর কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কার্যক্রম বন্ধ করে এটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গ্রন্থাগারের বইপুস্তক ও জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সাজাতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ গ্রন্থাগারের ৫০ ভাগ বই দান করা হয়।
পুরান ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে জগন্নাথ কলেজে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এই কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে পুনরায় সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণ করা হলেও পরের বছরে আবার এটি বেসরকারি মর্যাদায় ফিরে যায়। সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর সাড়ে সাত একর জায়গা নিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ এবং দুইটি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৬৭৯ জন শিক্ষক, ১৩ হাজার ১৬৫ জন শিক্ষার্থী, ৬৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সাতটি শিক্ষাবর্ষে ২১৪ জন শিক্ষার্থী এমফিল ও ৮৭ জন পিএইচডি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বাংলাবাজারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রীহল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের’ কাজ শেষ হয়েছে। ছাত্রী উঠানো হয়েছে হলে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা সঙ্কুলান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন এবং গবেষণা কাজের সুবিধার্থে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ২০০ একর জমিতে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কিছু ক্ষেত্রে কাজ চালুও হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি