শেখ হাসিনাকে কেন প্রয়োজন?
২০ অক্টোবর ২০২২ ১৯:২৩
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তেমনি কারো জন্যই কোন কিছু আটকে থাকে না বা একদমই অচল হয়ে যায় না। সময়, পরিস্থিতি এবং পরিবেশের সাথে সাথে সবকিছু বদলায়। যা ভাবা যায় না তাই হয়, আবার যা ভাবি তা হয় না। আবার সব কিছুরই একটি প্রপার টাইম বা সময় থাকে, যা সেই সময়ের মধ্যে করতে পারলে বা সাকসেসফুলিভাবে করতে পারলে সেই কাজের পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের এই প্রচলিত সমাজে প্রত্যেকেরই কাজের ধরন আলাদা আলাদা। সে রাজনীতিবিদ হোক, সরকারি চাকরিজীবী হোক, বেসরকারি চাকরিজীবী হোক, সাংবাদিক বা ব্যবসায়ী হোক কিংবা দিন মজুর হোক প্রত্যেকেরই কর্মের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে, সেটা কম বা বেশি। ঠিক একই ভাবে একজন রাজনীতিবিদেরও কাজের সময় ও সক্ষমতা একটা না একটা সময় শেষ করতে হয়। যেমন চাকরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বয়স সীমা আছে এবং তা ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা আলাদা। যেমন উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে এক ধরনের অবসরের বয়সসীমা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এক ধরনের বয়সসীমা, আর অন্য সব চাকরিজীবীদের জন্য আরেক বয়স সীমা। ঠিক একইভাবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের যেমন কোন সুনিদৃষ্ট সময় নাই, যতক্ষণ কর্মক্ষম বা কর্তৃপক্ষকে কিছু দেওয়ার সমর্থ্য থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার কাজও থাকবে বা চাকরিও থাকবে। এটা নিদৃষ্ট আইনে বা কর্তৃপক্ষের মন মর্জির উপর নির্ভর করে। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ করে এই উপমহাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে এই বয়সের সীমাটা একটু আলাদা। ঠিক একই কথা প্রযোজ্য সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও। এখানে পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবং রাজনীতিবিদদের নিজেদের নিরলস অংশগ্রহণের কারণে শারীরিক সক্ষমতা থাকা পর্যন্ত দলীয় ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। তারপর থাকে নিজদলের নেতা কর্মীদের সমর্থন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন আওয়ামী লীগের সামনের সম্মেলনে যদি একজনও কাউন্সিলর না চায় তাহলে তিনি অবসরে যাবেন । তিনি আরো বলেছেন তিনি অবসরের জন্য প্রস্তুত। যারা রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনেই শেখ হাসিনা নিজের বয়সের কথা বলে দলের শীর্ষপদ থেকে অবসর চান। কিন্তু দলের লাখো কোটি কর্মীরা তাকে অবসর দিবেন না। তারা শেখ হাসিনার অবসরের কথা চিন্তাও করেন না। কেনই বা কর্মীরা এখনই শেখ হাসিনার অবসরের চিন্তা করবেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের জন্য, দেশের জন্য যা করেছেন তা কি কেউ করতে পারছেন বা করতে পারতেন। শেখ হাসিনা তো নিজের কথা চিন্তা করে চার দশকের বেশি সময় আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ ঘাতক সামরিক সরকারের সময় দলের দায়িত্ব নেননি। আর সেই সময় তো তিনি নিজের ইচ্ছায়ও দলের দায়িত্ব নেননি। আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতিক্রমে তাকে দলের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারপর সেই দায়িত্ব তিনি প্রশ্নাতীতভাবে সফলতার সাথে পালন করেছেন। তাই তিনি চাইলেও কর্মীরা তাকে অবসর দিবেন না,যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ ও কর্মক্ষম আছেন। এমনকি তিনি সুস্থভাবে বেঁচে থাকা পর্যন্ত নিঃসংকোচে দলের দায়িত্ব পালন করবেন সেই সাথে দেশের। এ ব্যাপারে দলের একেবারে তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের একশত ভাগ সমর্থন আছে বা থাকবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।
এখন কথা হচ্ছে কেন এখনই শেখ হাসিনাকে অবসরে যেতে হবে বা তার অবসরের প্রশ্ন আসছে। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে বা বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে তিনি দলের এবং দেশের জন্য যা যা করেছেন যদি সেদিকে একবার তাকাই দেখা যাবে তিনি যা করেছেন তা একটা সময় অকল্পনীয় ছিল। প্রথমেই যদি বলা যায় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে বা আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থাকলে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ঘাতক জামাত শিবির বা মানবতার বিরোধী অপরাধের বিচার কি হতো? শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে আওয়ামীলীগ কি এখন পর্যন্ত চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারতো? আওয়ামী লীগ যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না যেত তাহলে কি ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হতো? এখানে তো শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবেই না আওয়ামীলীগ সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা একশো ভাগ সফল। আওয়ামী লীগকে চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসার একক কৃতিত্বও শেখ হাসিনার। বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময়ে দল থেকে চলে গিয়ে দলকে বিভক্ত করে এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যেভাবে আওয়ামী লীগের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল সেখান থেকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দলকে শক্তিশালী একটি ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন বলেই আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। আর সে কারণেই আজ দেশের এত উন্নয়ন অগ্রগতি। যার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ শেখ হাসিনার। যা তিনি নিজে কখনো বলেন না বা বলবেন না।
একজন সিনিয়র সাংবাদিক বা সম্পাদক কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় কি তিনি অবসর নেন,সাধারণত নেন না। কারণ তার অনেক কিছুই দেশকে এবং পত্রিকাকে বাম গণ মাধ্যমকে দেবার থাকে। ঠিক তেমনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সুস্থ সবল থাকলে তিনি আমৃত্যু দলের জন্য দেশের জন্য কাজ করতে পারেন বা কাজ করা উচিত। যদি না তিনি অনৈতিক কাজে বা দুর্নীতি বা খুনের দায়ে আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হন। রাষ্ট্রদ্রোহী বা দেশদ্রোহী না হন। অপ্রকৃতিস্থ না হলে বা দলের বা দেশের লোক না চাইলে তিনি দলের দায়িত্ব আমৃত্যু পালন করতে পারেন। আমাদের দেশে শেখ হাসিনা ছাড়াও আরো অনেক ছোট বা বড় দলের নেতা দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রধান থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন কোন সফলতা ছাড়াই। এমনকি আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও দলের শীর্ষপদ আকড়ে থাকছেন। আবার নিজ নিজ দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়েও একেবারে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত দলের প্রধান থাকছেন। এসবই সেসব দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে শুধু এদেশেই নয় এই উপমহাদেশের মধ্যে শেখ হাসিনা প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ সফল নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক। এই মুহূর্তে তার সমকক্ষ কেউ নেই যে এতদিনধরে সুচারুভাবে দলের ও দেশের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে দলের প্রশ্নে প্রশ্নাতীতভাবে, কর্মীদের অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সত্যি সত্যি নিজ থেকে যতদিন চাইবেন ততদিনই এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন প্রতিটি নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়েই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নতুন নেতৃত্বের জন্য জায়গা তৈরি বা জায়গা ছেড়ে দিতে হবে না। নিশ্চয়ই হবে এবং তা হয়তো শেখ হাসিনা দিবেনও। তার যোগ্য দুজন সন্তান আছেন, বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা আছেন। তার যোগ্য সন্তানরা আছেন। উল্লেখিত সবাই দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অত্যন্ত যোগ্য। এ ছাড়াও দলেরও অনেক যোগ্য প্রাজ্ঞ নেতা আছেন। অতএব কাকে এবং কবে দায়িত্ব দিবেন সে প্রশ্ন এখনই নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের কি হবে, কে নেতৃত্ব দিবেন তা কি আজকের মত করে কেউ কল্পনা করেছিলেন। অথবা বঙ্গবন্ধু ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছায়া ছাড়া দল চলার কথা ঐ সময়ে কারো কল্পনায় ছিলো, বঙ্গবন্ধু একটা সময় দেশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলের সভাপতির পদ ছেড়েছিলেন সত্য কিন্তু দল তার নামেই চলতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নিয়তির অদৃষ্ট লেখায় অল্প বয়সে তার কন্যা শেখ হাসিনার উপরই সেই গুরু দায়িত্ব পড়েছিল তার অজান্তেই। দলের নেতা কর্মীদের প্রবল আগ্রহেই। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে তিনি শতভাগ সফল। আর এখানেই শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে দল ও দেশের জন্য অপরিহার্য। শেখ হাসিনারও হয়তো পরিকল্পনা আছে তিনি সত্যিকার অর্থেই কবে অবসরে যাবেন, কাকে দলের দায়িত্ব দেবেন। দল ক্ষমতায় থাকলে তার অবর্তমানে কে দলের হয়ে দেশের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু তিনি বারবারই দৃঢ়তার সাথে বলেছেন এ ব্যাপারে দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে কে দলের দায়িত্ব নিবে। যা কিনা চার দশকের বেশি সময় আগে তার নিজের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন ছিল আগামী সম্মেলনে দলের নেতৃত্বে কোন চমক আসছে কিনা বা তিনি অবসরে যাবেন কিনা, শেখ হাসিনার দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া কারো কাছে বা গণমাধ্যমের কাছে কোনরকম চমক হলেও এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দলের ও দেশের জন্য প্রয়োজন। শেখ হাসিনা দলের প্রয়োজনে শতভাগ সফল। শেখ হাসিনা দলকে চারবার ক্ষমতায় এনেছেন। শেখ হাসিনা দেশে সামরিকতন্ত্র বিদায় করে গণতন্ত্র এনেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারই উন্নয়ন অগ্রগতি করে দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। এই যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদ্যুৎ, কৃষি ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি তা শেখ হাসিনার জন্য। শেখ হাসিনাই দেশকে সমৃদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। শেখ হাসিনার জন্যই কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল বাতিল হয়েছে এবং পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ও জেলহত্যা কাণ্ডের বিচার হয়েছে। তাকে প্রয়োজন এই জন্য যে দলে হয়তো যে কেউ কোন সময় যোগ্য একজন দায়িত্ব নিবেই। কিন্তু দেশ, দলের প্রধান হিসেবেই সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। তার কারণেই দল ক্ষমতায়। তাইতো দেশের এই ধারাবাহিক অগ্রগতি। তাই তাকে হটিয়ে যাদেরকে ক্ষমতায় আনার পায়তারা চলছে বা যারা আসার হুঙ্কার দিচ্ছে তারা কারা, তারাও ক্ষমতায় ছিলো, কি অবস্থা ছিল দেশের। তারা আবার তাদের দলেরও প্রধান। একজন এতিমের টাকা মেরে দন্ডিত। অপরজন একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় খুনের দায়ে ও অন্যান্য দুর্নীতির দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ফেরার আসামি। যারা দুজনই সামরিক জান্তার গর্ভে জন্ম নেয়া ভুঁইফোড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ও বিদেশে থেকেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান। এরা প্রকৃত অর্থে কোন দলের নেতৃত্ব দেয়ারও অযোগ্য এবং দেয়াটাও অনৈতিক। অনৈতিকভাবে দল চালানো লোক দেশ চালাবে কিভাবে, এজন্যও শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। ভূমিহীনদের জন্য শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। অসহায় মানুষদের জন্য শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। শিক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাকে প্রয়োজন। দুর্যোগ দুর্বিপাকে শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। দেশকে দেশের মানুষকে মায়ের মত করে আগলে রাখতে শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। তার নিজের জন্য নয় দেশের জন্য প্রয়োজন। আর এজন্যই তাকে এখনো এবং আরো অনেকদিন দলের জন্যও প্রয়োজন। যিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে বার বার মৃত্যুকে উপেক্ষা করে পিতা মাতা, ভাই ভাবি, আত্মীয় পরিজন সব হারিয়ে শুধু দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন তাকে দলের ও দেশের প্রয়োজন না তো আর কাকে প্রয়োজন?
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি