Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমাবেশ করলে হ্যাঁ কিন্তু বিএনপির নাশকতাকে না

আদম তমিজী হক
২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৪০

একটি প্রশ্ন এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে ১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপি আসলে কী করতে চায়? সম্প্রতি প্রকাশ্যে সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে, অন্য কারো কথায় নয়। একদিকে পরিষ্কার হুমকি, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির ছদ্মবেশে আপাতভাবে সমাবেশ করছে বিএনপি। এই সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। চোরাগলি পথে ক্ষমতা বদলের ফানুস উড়াচ্ছে তারা। এ জন্য তাদের হাতিয়ার হতে পারে একের পর এক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানো।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে তা বোঝাই যাচ্ছে। তাদের বক্তব্যের মধ্যে ধারাবাহিক সূচীর ঘোষণা আছে। এক সময়ের জনপ্রিয় নেতা আমান উল্লাহ বলেছেন, ‘পাঁচজন কেন, যদি পাঁচ হাজার জনকেও শহীদ হতে হয়, এই দেশে শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচন হবে না। প্রয়োজনে আমরা শহীদ হব, কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচন নয়। এই সরকারের বিদায় ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরব।’

শুধু আমানই নয়, দলটির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতাও বিতর্কিত আদলের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ৯ অক্টোবর দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে আসবেন। পরদিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে ‘আটলান্টিক মহাসাগরের’ মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন।

সরকার পতনে একই রকম বক্তব্য দিচ্ছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে তিনি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর কথা বলছেন। যেখানে সবসময় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। দলের অন্য নেতারাও ‘লাঠিসোঁটা’ নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলছেন।

এতে করে বোঝাই যাচ্ছে যে, বিএনপি সমাবেশমুখী হলেও তা লোক দেখানো কর্মসূচী। তারা মুলত দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য চূড়ান্ত খারাপ কাজে লিপ্ত হবে।

সকলেই অবগত যে, এতিমদের টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা ও শেখ হাসিনাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টার দায়ে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে তিনি লন্ডনে পলাতক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এখন প্রশ্ন ওঠেছে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও কীভাবে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন?

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, ‘তারেক রহমান ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে…।’

এ ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতির মামলা রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। আর এ সময়ে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি।

দেশ পরিচালনার বিষয়ে আমান উল্লাহ আমানরা যদি উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে সরকারকে ভাবতে হবে খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বদান্যতা দেখিয়েছেন, সেটির আদৌ প্রয়োজন আছে, নাকি তাকে আবার কারাগারে পাঠাতে হবে।

গত এক যুগে মাঠের যোগ্যতা পর্যালোচনা না করেই বিভিন্ন সময় হরতাল ডেকেছে বিএনপি। এরপর দলটির নেতারা যেমন ঘরে বসে ছিলেন, কর্মীরাও রাস্তায় নেমে আসেনি। কখনও কখনও রাজধানীর অলিগলিতে সাত-আটজন মিছিল নিয়ে নেমেছে। কয়েক মুহূর্তে তা আবার উধাও হয়ে গেছে। হরতাল ডাকার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, হরতাল ডেকে ঘরে বসেছিলেন বিএনপি নেতারা। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে গাড়িতে আগুন দেওয়া থেকে তারা বিরত থাকেনি। সব মিলিয়ে দলটির জন্য বুমেরাংও হয়েছে হরতাল। বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশে হরতালকেন্দ্রিক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

এদিকে প্রায় ২০টি জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আহত হওয়ার পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানি। এটি পুঁজি করে বিএনপি ক্রমশ সংঘাতের পথে যেতে চায়। তবে বিএনপির নেতাদের কথায় সরকারের পতন হবে না।

গণঅভ্যুত্থান আর আন্দোলনের ভয় বিএনপি ১৪ বছর ধরে দেখিয়ে আসছে। তাদের এসব তর্জন-গর্জন মিডিয়া আর ফেসবুকে সীমাবদ্ধ। এ কথা বাংলাদেশের জনগণ ভালোই জানে।

বিএনপির নেতাদের কথায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও যে খুব একটা আশাবাদী হচ্ছেন না তেমন ইঙ্গিত তো আছেনই। শীর্ষ নেতৃত্বের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে এখন আগের উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এদিকে আন্দোলন কর্মসূচিতে যেসব নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করছেন, তারা দলীয় পদ-পদবি ধরে রাখতে বা সামনে পাবেন– এমন আশায় অংশ নিচ্ছেন বলেই মনে করছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একাংশ।

রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মদতদাতা দল। জঙ্গিগোষ্ঠী আফগান-তালেবানের সাথে সম্পর্কিত ছিল, যারা এ রাষ্ট্রকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য তাদেরকে কাজে লাগানো হয়েছিল। এটি করেছিল তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার এবং তারেক রহমান।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। যারা সরকারের পদত্যাগ চায়, জাতীয় সরকার চায়, কিংবা অসাংবিধানিক সরকার চায়। তারা আসলে আগামী দিনে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে না। তাদের মূল লক্ষ্য স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে, তাদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা, পাকিস্তান পন্থাকে অনুসরণ করা, সাম্প্রদায়িক চর্চাকে অনুকরণ করা, মীমাংসিত বিষয়গুলোকে আবারও নতুন করে অমীমাংসিত করে তোলা। সর্বোপরি তাদের নেতা-নেত্রীদের অপরাধ থেকে রক্ষা করা।

নির্বাচন তাদের লক্ষ্য না। নির্বাচন বানচালই তাদের লক্ষ্য। ২০০৯ সালের পর থেকে বিএনপির টার্গেট হচ্ছে দেশে একটি অস্বাভাবিক সরকার গঠন করা। পঁচাত্তর-পরবর্তী জিয়া-এরশাদের শাসনামলের ভাবনা মাথায় রেখে তারা এখনো পাকিস্তানের ট্রেনেই আছে। এই ট্রেন থেকে আজও নামতে পারেনি। এ কারণেই দলটি নতুনভাবে আবার সক্রিয় হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রমের বিরোধিতা করছে। এখনো তারা স্বাধীনতাবিরোধী, পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধী, জামায়াতের পার্টনারশিপ ছাড়তে পারেনি। এখনো তারা সাংবিধানিক সরকার উৎখাত করে অসাংবিধানিক সরকার চায়। সংবিধানের বাইরে দেশকে ঠেলে দিতে চায়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত তেরো বছর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পথ চলছে। সংবিধানের চার মূলনীতি অনুসরণ করে পথ চলছে। এই চৌদ্দ বছরে শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানপন্থাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে হয়েছে, সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলা করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানপন্থার সাংস্কৃতিক যুদ্ধাবস্থার মধ্যে দেশকে এগিয়ে নিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। গেল একযুগের বেশি সময়ে এটাই আমাদের বড় অর্জন, বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিকভাবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। বিএনপি যেন ষড়যন্ত্র করে দেশকে অন্ধকারে ঢেলে দিতে না পারে সেটি মোকাবিলা করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য দরকার। বিএনপি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে সমাবেশ করুক কর্মসূচি দিক তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু সমাবেশের নামে, রাজনীতির নামে নাশকতাকে বেছে নিলে তার জবাব রাজনৈতিকভাবেই দেবে দেশের শান্তিকামী জনগণ। বিএনপি ভুলের চোরাবালি হাঁটলে, সেই চোরাবালিতে ফের আটকা পড়বে তারা- এটি তাদের বুঝতে হবে।

লেখক: রাজনীতিক ও সমাজকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আদম তমিজী হক মুক্তমত সমাবেশ করলে হ্যাঁ কিন্তু বিএনপির নাশকতাকে না

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর