Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এম এ সামাদ: সৃজনশীল কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন চলচ্চিত্রে

মীর শামসুল আলম বাবু
২৯ অক্টোবর ২০২২ ০১:৫০

এম এ সামাদ। চলচ্চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র শিক্ষক, পরিচালক-প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব। ছিলেন একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক। তিনি সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তার চিত্রায়িত চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও তিনি ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন।

এম এ সামাদ ১৯৩৭ সালের ৮ জুলাই, সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে ব্যারিস্টার হবে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তাই তাকে ব্যারিস্টারি পড়তে ১৯৫৭ সালে লন্ডনে পাঠানো হয়। লিংকন্স ইন কলেজে ছয় মাস লেখাপড়া করার পর আইন শাস্ত্র পড়তে ভালো লাগলো না। ভর্তি হলেন ‘চার্টার্ড একাউন্টেন্সি’তে। এরপর তিনি ‘দ্য লন্ডন স্কুল অব ফিল্ম টেকনিক’-এ, কোর্স অব ট্রেনিং ইন মোশন পিকচার্স প্রোডাকশন টেকনিক কোর্সে ভর্তি হন। এক বছর পড়ালেখা করার পর বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ‘ডিস্টিংশন গ্রেড’ লাভ করায় প্রিন্সিপাল রবার্ট ডানবার তাকে পরের তিন বছরের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দেন।

বিজ্ঞাপন

বেস্ট স্টুডেন্ট হিসেবে এম এ সামাদ ‘লাইটিং সিনেমাটোগ্রাফি’তে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ফলে প্রত্যক্ষভাবে ফিল্ম মেকিং সম্পর্কে জানতে তিনি বাণিজ্যিক সফল ছবি ‘গানস অব নাভারান’ এবং শৈল্পিক ছবি ‘সাটার ডে নাইট সানডে মর্নিং’-এ কাজ করার সুযোগ পান। এছাড়া রয়েল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস কোর্সে অভিনয় ও মেক-আপের উপরও প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

এম এ সামাদ ১৯৬২ সালে বিবিসিতে ক্যামেরাম্যান হিসেবে যোগদান করেন। বাবা-মায়ের ইচ্ছায় বিবিসি’র চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরেন। দেশে এসে তিনি চিত্রগ্রাহক সাধন রায়ের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। একক চিত্রগ্রাহক হিসেবে তার প্রথম কাজ এম এ হামিদ পরিচালিত ‘অপরাজেয়’ চলচ্চিত্রে। কিন্তু চিত্রগ্রাহক হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম ছবি কাজী জহিরের ‘বন্ধন’, ১৯৬৪ সালে।

বিজ্ঞাপন

রূপবান, ১৩ নং ফেকুওস্তাগার লেন, অপরাজেয়, ইস ধরতি পর, ইন্ধন, উলঝান, আবির্ভাব, ভাগ্যচক্র, চল মান গ্যায়ে, গায়ের বধু, ওরা ১১ জন, ঈশা খাঁ, নিজেরে হারিয়ে খুঁজি, দম মারো দম, দুরন্ত দুর্বার, সংগ্রাম, সূর্যগ্রহণ, সূর্যসংগ্রাম, শিরি ফরহাদ’সহ প্রায় ৪০টির মত চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

একসময় তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনায় হাত দেন। তার প্রযোজিত ও পরিচালিত চলচ্চিত্র সূর্যগ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম ও শিরি ফরহাদ। তিনি ‘প্রসন্ন পানি’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেন। কাহিনী-চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এম এ সামাদ। প্রশিক্ষিত চলচ্চিত্রকর্মী সৃষ্টি করতে এফডিসিতে প্রথম চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে, প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেন তিনি।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘ফিল্ম এন্ড মিডিয়া’ বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

চলচ্চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র শিক্ষক, পরিচালক-প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এম এ সামাদ। ছিলেন একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক। চলচ্চিত্র সম্পর্কে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন তিনি। তিনি সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তার চিত্রায়িত চলচ্চিত্রে। তার ধ্রুপদী ক্যামেরার কাজের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন সেরা চিত্রগ্রাহকের সুনাম, অধিষ্ঠিত হয়েছেন খ্যাতির শীর্ষ আসনে। চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও তিনি ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সূর্যগ্রহণ’ ও ‘সূর্য সংগ্রাম’, সে সময়ে চলচ্চিত্রদর্শক ও সমালোচক কর্তৃক সমাদৃত ও বহুল প্রশংসিত হয়েছে।

প্রগতিশীল, আধুনিক চিন্তা-চেতনার এক মহিরূহ চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব এম এ সামাদ। চলচ্চিত্র সম্পর্কে তার বিদেশে অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, নিজের দেশের চলচ্চিত্রশীল্পকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তার অবদান, অবশ্য অবশ্যই স্মরণযোগ্য।

তিনি ২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর, নয়া দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত এই গুণী চলচ্চিত্রব্যক্তিত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

লেখক: চলচ্চিত্র গবেষক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর