অন্য স্বপ্ন দেখাচ্ছে খায়রুজ্জামান লিটনের রাজশাহী
৩১ অক্টোবর ২০২২ ১৮:২১
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, ঝর্ণা , হাওর- কোনকিছুর অভাব নেই আমাদের। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, প্রকৃতির আশীর্বাদে ঋদ্ধ বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে এখনও অনেক পিছিয়ে। অথচ, একটি উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে শুরু পর্যটনশিল্পকে পুঁজি করে।
বাংলাদেশে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে শুরু থেকেই কক্সবাজার, রাঙামাটি, সিলেটের জাফলং বেশ জনপ্রিয়। হালে রাতারগুলসহ সিলেটের আরও অনেক অঞ্চল, সুন্দরবন, বান্দরবনের সাজেক, বরিশালের কুয়াকাটা উঠে এসেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সেই তালিকায় যোগ হতে পারে রাজশাহীর নাম। বরেন্দ্রভূমির রাজধানী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী। রয়েছে এই অঞ্চলের রেশম শিল্প, আম, লিচু আর মিষ্টান্নর সুনাম।
ইতোমধ্যেই রাজশাহী নগরী পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের ‘রোল-মডেল’ নগরীতে। একজন যোগ্য নগর-পিতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীকে পরিণত করেছেন সবুজের নগরীতে।
কথায় আছে, ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে যারা মেয়র হয়ে চান, তারা নানা স্বপ্ন দেখান। বলেন, সবুজ সিঙ্গাপুর হবে! ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু বাংলাদেশ যে সবুজে ঘেরা কেক, তা ভুলে যায়। সুন্দর করে পরিচর্যা আর নানা উদ্যোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সমীকরণ বদলিয়ে দিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার উত্তরের মেয়র মহোদয় রাজশাহী থেকে শিক্ষা নিতে পারেননি।
এদিকে রাজশাহী বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর। শহরের অভ্যন্তরে কোথাও ময়লা আবর্জনার স্তূপ সাধারণত চোখে পড়ে না। গর্ব করার মতো তথ্য হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে পরিষ্কার এবং বায়ুদূষণ মুক্ত শহরগুলোর মধ্যে প্রথমদিকেই রয়েছে রাজশাহী শহর।
যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী শহর। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আধুনিক সবুজের শহর হিসেবে রাজশাহীর প্রতিষ্ঠা খুলে দিয়েছে এই অঞ্চলে পর্যটনের নতুন দুয়ার। পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই নগরী্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। বর্ষকালে উত্তাল পদ্মার ঢেউ আর গ্রীষ্মে ধু ধু মরুভূমির মতো বালুরাশির বিস্তীর্ণ চর- যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর মন ভরিয়ে দিতে যথেষ্ট। এ ছাড়া ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ ও মাজার, বরেন্দ্র জাদুঘর, পুটিয়া রাজবাড়ী, সারদা পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ভদ্রাপাক, পারিজাত লেক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর পদ্মার চরে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চেতনায় সমৃদ্ধ হতে পারে পর্যটকরা ।
ইতোমধ্যেই পদ্মার কোল ঘেঁষে প্রায় ১২ কিলোমিটার জায়গার বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সড়ক পথ। নগরীর বুলনপুর থেকে শুরু করে বড়কুঠি ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া এলাকা পর্যন্ত এসব পয়েন্ট বিস্তৃত। এসব পয়েন্টে স্থানীয়দের সাথে আশেপাশের এলাকার মানুষ দিনরাত ভিড় করে। বিশেষত বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন বুলনপুর আইবাঁধ এবং পঞ্চবটি আইবাঁধ এলাকা এখন স্থানীয়দের ঘুরে বেড়াবার প্রিয় স্পট। মেয়র লিটনের তত্ত্বাবধানে কয়েকবছর আগে ইংরেজি ‘আই’ অক্ষরের আদলে তৈরি হয়েছে বাঁধগুলো। এখানে দাঁড়িয়ে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় প্রমত্তা পদ্মা নদীকে মনে হয় বিশাল এক সমুদ্র। আর নদীর চর যেন একখণ্ড সাগর-সৈকত।
রাজশাহীকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সব উপাদান প্রকৃতি নিজেই উজাড় করে দিয়েছে। সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থাপনা আর আধুনিক রাজশাহীর স্বপ্নদ্রষ্টা নগর-পিতা খায়রুজ্জামান লিটনের অক্লান্ত পরিশ্রম মিলে এখন সময় হয়েছে এই অঞ্চলকে পর্যটনের ‘প্রাণকেন্দ্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। যা খুব কঠিন কাজ নয়। রাজশাহীর অভ্যন্তরীণ শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করা এখন সময়ের দাবি। মেয়র লিটন কক্সবাজার থেকে রাজশাহী ফ্লাইট চালু করিয়েছেন । আকাশপথে সেই যোগাযোগের বিস্তার ঘটাতে হবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে । এছাড়া সড়কপথে সারাদেশের সাথে সরাসরি সহজ আর আরামদায়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা কয়েকজনের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে, তারা সবাই পদ্মার রাতের সৌন্দর্য উপভোগে আগ্রহী। কিন্তু পদ্মা পাড়ে ভাল কোন হোটেল নেই। এটা পর্যটন বিকাশে অন্তরায়।
রাজশাহীকে আধুনিক আর সবুজ স্বাস্থ্যকর নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখন প্রয়োজন পর্যটনকে ‘টার্গেট’ করে সাধারণ থেকে বিলাসবহুল হোটেল, মোটেল আর পদ্মাপাড়ে রিসোর্টের সুবিধা বাড়ানো। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ইকো-টুরিজমের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে রাজশাহীর। আর সেটা পদ্মানদীকে কেন্দ্র করে। রাজশাহীর পর্যটন শিল্পের বিকাশের সাথে ঘটবে পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার উন্নয়ন। মোট কথা, রাজশাহী নগরীর পর্যটনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে বদলে যাবে গোটা বিভাগের চিত্র।
রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন পদ্মাপাড়ে সুন্দর একটি ইকোপার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছেন। পদ্মার পাড়ে তিনি তৈরি করতে চান মনোরম একটি পর্যটন স্পট। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত বিকাশে অনেক বেশী মনযোগী। কয়েকবছর ধরেই সরকার পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের লক্ষ্যে একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সেই পরিকল্পনায় রাজশাহীকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্দ্বিধায় বলা যায়, ট্যুরিজম বোর্ড আর সরকারের সার্বিক সহায়তা পেলে খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীকে পরিণত করবেন দেশের শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্রে। কারণ নির্লোভ এই মানুষটির রয়েছে নিজ জন্মভুমির প্রতি গভীর মমত্ববোধ। তিনি রাজশাহীকে দেশের সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে পেরেছে। তিনিই পারবেন রাজশাহীর পর্যটন শিল্প প্রসারের অগ্রদূত হতে।
লেখক: সাংবাদিক
সারাবাংলা/একে/এএসজি
অন্য স্বপ্ন দেখাচ্ছে খায়রুজ্জামান লিটনের রাজশাহী আহসান হাবীব সুমন মুক্তমত