Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জ্বালা, জ্বালা, জ্বালা, বিজ্ঞাপনের জ্বালা!

মো. বিল্লাল হোসেন
১২ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৫

শিরোনাম দেখেই হয়তো অনেকেই ভড়কে গেছেন। আর ভাবছেন কিসের এত জ্বালা? আর বিজ্ঞাপনই বা কিভাবে এত জ্বালার কারন। আসলে পত্রিকা পড়া আমার নিত্যদিনের অত্যাবশ্যকীয় অভ্যাসগুলো মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে প্রথমেই অনলাইনে অন্তত ৩৭ বা ৩৮টি পত্রিকার ই-পেপার থেকে গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো পড়ার চেষ্টা করি। এরপর যখন রুমে পত্রিকার প্রিন্ট চলে আসে তখন খবরগুলো আরো বেশি বিস্তারিত মনোযোগ দিয়ে পড়ি। কিন্তু ইদানিং পত্রিকা পড়তে গেলে প্রায়শই একটি ঝামেলার মুখোমুখি হচ্ছি সেটি হলো অতিরিক্ত ও অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে পত্রিকার পাতায় খবরের থেকে বেশি জায়গা দখল করে থাকে বিজ্ঞাপন। আমরা যদি একটু পত্রিকার অনলাইন সাইটগুলোর দিকে চোখ বুলাই তাহলে বুঝতে পারবো পরিস্থিতি কতটা বাজে হয়েছে। যেকোনো অনলাইন পত্রিকার ওয়েবে ঢুকলেই পুরো সাইট সাময়িক সময়ের জন্য আড়ার হয়ে আবির্ভূত হয় নানা রকমের বিজ্ঞাপন। এটি অবশ্য ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এরপর অটোমেটিকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। এভাবে বিজ্ঞাপনটি অদৃশ্য হয়ে গেলে ওয়েবসাইটটি দৃশ্যমান হয়। তবে এখানেও আছে নানা ধরনের কারিকুরি, ওয়েবসাইটের চারপাশে ফাঁকা জায়গাগুলোতে দেখানো হয় নানা ধরনের স্টাটিক বিজ্ঞাপন এগুলোর জন্য আবার নির্দিষ্ট মাত্রার জায়গা বরাদ্দ থাকে। এগুলো এমনভাবে স্থাপন করা থাকে দেখে মনে হয় বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে আমি খবর বা আর্টিকেল পড়ছি। এটাতো গেলো সাইটের ইন্টারফেসের বিজ্ঞাপনের মাত্রা। আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো যেকোনো নিউজ ওপেন করলেই লেখার মাঝখানে মাঝখানে আসতে থাকে নানা ধরনের স্টাটিক (স্থির) ও মোবাইল (সচল) বিজ্ঞাপন যা আপনার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এত বিজ্ঞাপনের ভিড়ে আসল খবর কোনটি সেটাই খুঁজে পাওয়া দায়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে প্রিন্টেড প্রায় সকল পত্রিকারই আছে ই-পেপার ভার্সন। অনলাইনে ইপেপার পড়তে গেলে এখানেও রয়েছে বিজ্ঞাপনের জ্বালা। ইপেপার ওপেন করলেই এর চারদিকে চলে লম্বা মাপের বিজ্ঞাপন। যার ভিড়ে আপনার মনোযোগ কোথায় হারিয়ে যাবে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না।

এছাড়া প্রিন্টেড পত্রিকাতেও একই অবস্থা। চালু হয়েছে নতুন ট্রেন্ড “মলাট ওলটালেই মূল পত্রিকা”। এই ট্রেন্ড কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। মূল পত্রিকার সাথে এক্সট্রা পাতা যোগ করে সেখানে বিশাল সাইজের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। আর পত্রিকার ভিতরের পাতাগুলোতে তো বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট করে খবর ছাপা হয়। পুরো পত্রিকাজুড়ে একটু ফাঁকা জায়গা মানেই বিজ্ঞাপন। পত্রিকাগুলোর এমন অঙ্গসজ্জা দেখে মনে হয় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করাই পত্রিকাগুলোর আসল উদ্দেশ্য।

আসলে প্রত্যেকটি পত্রিকার অনলাইন কিংবা প্রিন্টেড ভার্সনে অতিরিক্ত পরিমানে বিজ্ঞাপনের কারনে আমার মত অনেক পাঠকই পত্রিকা বিমুখ হচ্ছেন। এমনকি পত্রিকা খুলেই বিরক্তি প্রকাশ করছেন অনেকে। পত্রিকার মান ধরে রাখতে ও পাঠকের মন জয় করতে চাইলে পত্রিকাগুলোর এই অসুস্থ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। না হলে অতিশীঘ্রই পত্রিকাগুলো জনপ্রিয়তা হারাবে একইসাথে হারাবে আস্থাও। তবে আশার কথা হলো বেশকিছু পত্রিকা পাঠকের কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট পরিমান বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে যা মোটামুটি সহনীয় মাত্রার মধ্যে পড়ে। সার্বিক বিবেচনায় তারা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

পত্রিকাগুলোর উচিত একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে অনলাইন ও প্রিন্টেড পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা যাতে করে পাঠকরা মনোযোগ ধরে রেখে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে পারে। এতে করে পাঠকসমাজ খুব সহজেই বিজ্ঞাপনের জ্বালা থেকে মুক্তি পাবেন। পত্রিকাগুলোকে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক পণ্য বা টাকা আয়ের উৎস মনে না করে, গণমানুষের আর্তনাদ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। না হলে অদূর ভবিষ্যতে পত্রিকাগুলো শুধুই বিজ্ঞাপন প্রকাশের প্রচারপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রত্যাশা থাকবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে সংবাদপত্র শিল্পকে গণমানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করবেন।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

জ্বালা জ্বালা জ্বালা বিজ্ঞাপনের জ্বালা! মুক্তমত মো. বিল্লাল হোসেন

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর