দেশের উন্নয়নে, গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলুন
১২ নভেম্বর ২০২২ ১৬:০৭
স্বাবলম্বী হওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে স্বাবলম্বীতা কি জিনিস। ধরুন আপনার এই মুহূর্তে বিশ টাকা প্রয়োজন আপনি তা কারো থেকে চেয়ে নিচ্ছেন এটা হলো পরনির্ভরশীলতা। আপনি নিজেই তা উপার্জন করলে এটা হলো স্বাবলম্বীতা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার জন আনুমানিক। যার ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন পুরুষ ও ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার জন নারী। বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রতি ৯৮ জন পুরুষের বিপরীতে ১০০ জন নারী। দেশের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে নিতে নারী/পুরুষ সমানভাবে কাজ করে চলছে। চাকরি, ব্যবসায়,আত্মকর্মসংস্থান সবক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকেও একক পরিবার বা যৌথপরিবারে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে শুধু পুরুষরা ছিলো। পরিবারে নারীরা আর্থিক দিক দিয়ে কোনো অবদান রাখতে পারতো না। যার ফলে সংসারে অভাববোধ কাজ করতো।সময়ের পরিক্রমায় সেই দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রায় ৭০% মানুষ গ্রামে বসবাস করে।প্রায় ১১ কোটি ৩০ লাখ জনগোষ্ঠীর বসবাস গ্রামে তন্মধ্যে ৬ কোটি নারী।এতবড় জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ শুধু পারিবারিক কাজকারবারের সাথে জড়িত। অর্থ উপার্জনে তারা জড়িত না।পরিবারের পুরুষ সদস্যের উপর সেই পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব থাকে। নারীদের স্বাবলম্বী না হওয়ার পিছনে সবচেয়ে যা দায়ী তা হলো তাদের নিজের ইচ্ছার অভাব। তারা এটা মনে করে না তাদের স্বাবলম্বী হওয়া উচিত।তারা এটা মেনেই অভ্যস্ত তারা পুরুষ মানুষের উপর নির্ভর করে থাকবে। গ্রামীন নারীদের স্বাবলম্বী করার বিষয়ে স্থানীয় সরকারের ভূমিকাও চোখে পড়ার মতো নয়। ধরা যাক একটি পরিবারের মাসিক আয় যদি দশ হাজার টাকা হয় ও ব্যায় যদি আট হাজার টাকা হয়। তাদের হাতে অবশিষ্ট থাকবে দুই হাজার টাকা। সেই পরিবারের নারী সদস্য যদি কিছু আয় করে ধরা যাক পাঁচ হাজার টাকা। এতে তাদের মেয়াদ শেষে আরো অর্থ সঞ্চিত থাকে। ফলে পারিবারিক অর্থনীতির ভিত্তি আরো শক্তিশালী হবে ও দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হবে।
গ্রামীন নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হতে পারে হাঁস/মুরগি পালন। এর মাধ্যমে যদি নারীরা যদি গ্রামীন পদ্ধতিতে হাস মুরগি পালন করতে পারে ও তা থেকে লাভজনক কোনো ক্ষেত্র বের করতে পারে এভাবে তারা নিজের ও নিজের পরিবারকে সাহায্য করতে পারে। যদি ব্যাবসায়িক উদেশ্য করা হয় তবে এর ক্ষেত্র হবে আরো ব্যাপক। সঠিক পরিচর্যা করলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা যাবে।
কৃষিকাজে পুরুষদের সাহায্য করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে উপকৃত হওয়া যায় ও কৃষকের মজুরি বাঁচানো যায়। বর্তমানে কৃষকের মজুরির ঊর্ধগতিতে অনেক সময় ফসলের মূল্যই উঠে না। নারীদের যদি কৃষিকাজে ঠিকঠাক কাজে লাগানো যায় তবে তারা নিজের ও নিজের পরিবারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার চাকা সচল রাখতে পারবে ।
নারীরা বরাবরই পুরুষদের চেয়ে নিজেদের সৌখিনতার ছাপ রেখে গেছে। কাঁথা শেলাই, কাপড় সেলাই, বিভিন্ন নকশা তৈরির মাধ্যমে ও তা বাজারে একটি ভালো মূল্যে বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে নিজের পরিবারকে সাহায্য করতে পারে।
গাছলাগানো,ফলের বাগান, গবাদিপশু পালন করার মাধ্যমে হয়তো তারা তাৎক্ষণিক কোনো আর্থিক প্রেশনা পাবে না তবে একটি সময় পরে এইসব ক্ষেত্র থেকে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব।
নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা গেলে দেশের জিডিপি বাড়বে। দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধিশীলতা অর্জন করবে। মানবসম্পদের যথাযথ ব্যাবহার হবে। মানবসমষ্টি যদি মানবসম্পদে রূপ নেয় তবেই সেই বড় মানবসমষ্টি একটি মূল্য বহন করবে।
বেকার বা অলস না থেকে কাজ করার ক্ষেত্র খুঁজতে হবে ও ওই অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করতে হবে। দেশের ভৌগলিক এরিয়ার বাইরে নানা দেশে নারীরা নিজের চিন্তাচেতনা বুদ্ধিদীপ্তির বিকাশ ঘটিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাশীল করে তুলছে। শহুরে নারীরা যেভাবে নিজের পরিচয় দিয়ে চলছে সেই তুলনায় গ্রামীন নারীরা অনেক পিছিয়ে। এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে তাদের এগিয়ে যেতে হবে নতুন উদ্যমে।তার জন্য দরকার শিক্ষা, হাতে কলমে গঠনমূলক শিক্ষা। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তারা এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারে নারীদের।
ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা গ্রামীণ ও শহুরে নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতায় সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আশার সঞ্চার করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাই এক সময় গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।
ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ কিছুর উৎপত্তি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও তাদের সামর্থ্য ও সরকারি সহযোগিতা দিয়ে চেষ্টা করলে পরিবারের অভাব দূর করতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে পারবে। তাদের এ প্রচেষ্টাকে সফল করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া আমাদের সবারই কর্তব্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
দেশের উন্নয়নে- গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলুন মুক্তমত মেহেদি শতাব্দি