বাজার সিন্ডিকেট থামানো কি অসম্ভব?
২৬ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৫
অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভোক্তাদের। সম্প্রতি জীবনধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশে বহু মানুষ মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি অব্যাহত থাকলে মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবে কী করে? যারা অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর শাস্তি দিতে হবে। দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করা সবজি খুচরা বাজারে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তা, পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকও। লক্ষ করা যায়, কোনো পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে যে হারে বৃদ্ধি পায়, স্থানীয় বাজারে এর চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়। আবার পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে দেরিতে।
কেবল চাল-ডাল- ভোজ্যতেল-আদাই নয়; প্রায় সব নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে; শিশুখাদ্যের দামও আকাশছোঁয়া। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার দীর্ঘশ্বাস বেড়েই চলেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোক্তাকে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ। প্রশ্ন হলো, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাজার তদারকি সংস্থাগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেরি করছে কেন? চাল এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। মানুষ তার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যয় করে খাদ্য খাতে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাল কিনতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। কাজেই চালের দামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনমান। এ অবস্থায় চাল-আটার মতো নিত্যপণ্য নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি চলতে দেওয়া উচিত নয়।
বাজারে প্যাকেটজাত আটা ও চিনি কেন নেই, এ প্রশ্নের জবাবে একেক দোকানদার একেকরকম কথা বলেন। এ প্রশ্নের সঠিক জবাব মানুষ জানতে চায়। বাজারে খোলা আটা ও চিনি পাওয়া গেলেও এগুলো নিরাপদ নয়। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন রকম দেশি গুড় পাওয়া গেলেও এগুলো যে নিরাপদ নয়, তা বহুল আলোচিত। এ অবস্থায় কোনো কোনো ক্রেতা বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিদেশি গুড় ক্রয় করেন। প্রশ্ন হলো, সেই সামর্থ্য কজন ক্রেতার আছে? মানসম্পন্ন গুড়ের ব্যাপক চাহিদা আছে দেশে। দেশি গুড়ে যাতে কেউ ভেজাল মেশাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হলে মানুষ বিদেশি গুড় বাদ দিয়ে দেশি গুড় ক্রয় করবে। এমন একটি নিত্যপণ্যের সংকটে গরিব মানুষের কতটা কষ্ট হচ্ছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খোলা চিনি ক্রয় করছেন। এ চিনি শিশু ও বয়স্কদের জন্য কতটা নিরাপদ তা ভেবে দেখা দরকার। বাজারে গেলেই আমরা শুনতে পাই চিনি নিয়ে কারসাজি চলছে। প্রশ্ন হলো, এসব কারসাজি বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? কখনো ভোজ্যতেল, কখনো চাল, কখনো বা চিনি-এসব পণ্য নিয়ে কারসাজি চলে কেন? বাজারে সবকিছুর দাম চড়া। এ অবস্থায় যদি নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি চলতে থাকে, তাহলে গরিব মানুষের বেঁচে থাকার উপায় কী? অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে আমাদের আর কত দুর্ভোগ পোহাতে হবে?
মৌসুমে বাজারে চাল উঠতে শুরু করলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কমবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লক্ষ করা গেছে, ভরা মৌসুমেও চালের বাজার ছিল অস্থির। আমরা আশা করব, যাদের কারসাজির কারণে ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লেখক: চাকরিজীবী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি