রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে নজর দেওয়া দরকার
২৯ নভেম্বর ২০২২ ২০:৪৮
সম্প্রতি দেশের রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার ফলে ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিটা রাষ্ট্রের সামগ্রিক অগ্রগতির প্রশ্নে রপ্তানির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতিবিদদের মতে, জাতীয় বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যোগান আসে রেমিটেন্স থেকে। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলো রেমিটেন্স। ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের প্রধান অংশও এটি।
বিদেশে কর্মরত প্রতিটা প্রবাসী দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া উচিত। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী গত তিন মাসে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে দেশের রপ্তানি আয়। ফলে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রেমিটেন্সর ভূমিকা অনস্বীকার্য । বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও কেন্দ্রীয় ব্যংকের প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের শেষ তিনমাসেই কমেছে রপ্তানি আয়।
তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশই আসে পোশাক শিল্প থেকে। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ৫০ শতাংশ উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট ও মাঝারি মানের অসংখ্য কারখানা। পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠনগুলোর দাবি অনুযায়ী পরিমাণ মতো যদি জ্বালানি পাওয়া না গেলে ডিসেম্বরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে বড় কারখানাগুলোও।
বৈশ্বিক মন্দা কেটে না ওঠা পর্যন্ত রপ্তানি বাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রপ্তানিকারকরা বিকল্প বাজার ধরার চেষ্টা করলেও তেমন সুবিধা করতে পাচ্ছে না। এহেন পরিস্থতিতে সরকারের উচিৎ রপ্তানিকারকদের চাহিদানুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক শ্রমবাজারের দিক নজর দেয়া। কারণ শ্রমবাজার সংকুচিত হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাবে আর বাংলাদেশ ব্যংকে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার অর্থ হলো ডলারের মুল্য বৃদ্ধি। এতে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় হ্রাসের ফলে একদিকে রিজার্ভে যেমন চাপ পড়ে অন্যদিকে টাকার মান কমে যায়। অর্থনীতিবিদরা রেমিটেন্স বাড়াতে বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফাই করে রপ্তানি আয় বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি ব্যায় বিশেষ করে বিলাসী পণ্য আমদানিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানি আয় হ্রাস ও ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি আমলে নেয়ার বিকল্প নেই।
লেখক: লেখক ও সংগঠক
সারাবাংলা/এজেডএস