Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাপানের কাছে বিশ্ব যা শিখতে পারে

অলোক আচার্য
২৯ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫৫

গত বিশ্বকাপ এবং চলমান ফুটবল বিশ্বকাপে একটি বিষয় বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। সেটা হলো খেলা শেষে পুরো স্টেডিয়াম পরিস্কার করেছে জাপানিরা। খবরটি আপাতদৃষ্টিতে অনেক সাধারণ মনে হলেও আদতে সাধারণ নয়। আবার সাধারণ কাজগুলোই মাঝে মধ্যে অসাধারণ হয়ে ওঠে।

যে কাজ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের করার কথা সেই কাজটি করছে জাপানের মতো কয়েকটি দেশ। শুধু এই একটি অভ্যাস থাকলেই আজকের পৃথিবী আরও বেশি সুন্দর,নিরাপদ ও বাসযোগ্য হতো। পৃথিবীর মানুষ আরও বেশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতো। গড় আয়ু হতো আরও বেশি। পৃথিবীর আয়ুও বৃদ্ধি পেতো।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশের কথা ভাবুন। সামান্য এক জায়গায় যদি কয়েকশ মানুষ একত্রিত হয়ে খেলা দেখে এবং তারপর সেখানে গেলে প্রচুর নোংরা যেমন চিপসের প্যাকেট, কোল্ড ড্রিংকসের বোতল,বাদামের খোসা এবং এধরনের আরও বহু জিনিস দেখা যাবে। সেসব আবার জড়ো করে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হবে। তারপর সেখান থেকে তা ছড়িয়ে যাবে পরিবেশের সর্বত্র। এটা শুধু আমাদের দেশের চিত্র না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বিশেষত উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলোতে তো এই অভ্যাস অনুপস্থিত। আমরা ইচ্ছেমতো পরিবেশটা নোংরা করছি।

একটু ভাবুন তো, আপনি যেদিকে তাকাচ্ছেন সেদিকেই কোনো নোংরা নেই। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এমন একটি চিত্র নিঃসন্দেহে আমাদের চোখের জন্য স্বস্তিদায়ক। কিন্তু সেই দৃশ্য আপনি কোথাও পাবেন না। পাবেন উল্টো চিত্র! আপনি যে বাদাম খাচ্ছেন, যে কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছেন সেসবের খোসা বা খালি বোতল এখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছেন। তারপর সেই প্লাষ্টিকের বোতল মিশে যাচ্ছে নদীতে,সমুদ্রে। সেখান থেকে মাছের পেটে। তারপর সেখান থেকে মানুষের পেটে চালান হচ্ছে। এভাবেই আমরা পরিবেশ দূষিত করছি। ছোটবেলা থেকেই এই শিক্ষার চর্চা হয় না।

বিজ্ঞাপন

এর একেবারে বিপরীত চিত্র জাপানে। সেখানে এখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখে না। তারা নিজ হাতে সেসব পরিস্কার করতেও লজ্জা বোধ করে না। আমাদের লজ্জা প্রবল! আমরা নিজের পরিত্যক্ত বস্তুটি আশেপাশে নিক্ষেপ করি। অথচ নিজেকে পরিস্কার রাখার মতোই আমাদের চারপাশটাকে পরিস্কার রাখার দায়িত্বও রয়েছে। আবার আসি জাপানিদের কথায়। জাপানিরা খুব স্বাস্থ্য সম্মত জাতি হিসেবেও পরিচিত। তারা র্দীঘায়ু জাতি। এই দীর্ঘায়ু হওয়ার পেছনে তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, দৈনন্দিন অভ্যাস ইত্যাদি জড়িত।

জাপানিরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। তারা কাজ ছাড়া অন্য কিছু কমই চিন্তা করে। বিশ্বকাপের খেলায় যখন শক্তিশালী জার্মানিকে হারিয়ে দেয় তখন মাঠে তাদের উল্লাস ছিল, মনেও ছিল কিন্তু গণমাধ্যমে এ নিয়ে দেশে তেমন কোনো আয়োজনের খবর দেখা যায়নি। তারা কাজ পাগল। এই কাজই তাদের উন্নয়নের মূল সূত্র। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জাপান সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়। যেমন- জাপানের রাস্তায় রাস্তায় কোনো ডাস্টবিন নেই। কারণ তারা তো বাইরে ময়লা ফেলেই না।

তারা প্রায় সবরকম বর্জ্য রিসাইকেল করে। অর্থাৎ আমরা যেমন রাস্তাঘাটকে ডাস্টবিন বানিয়ে নোংরা ফেলি ওরা তা করে না। ওরা নির্ধারিত জায়গায় ফেলে। আমাদের অভ্যাস এমন যে সামনে ডাস্টবিন থাকলেও দেখা যায় আশেপাশে ময়লা ফেলছে। ডাস্টবিনে ফেলার কষ্টটুকুও তারা করতে চায় না! এটা কিন্তু আলসেমি না এটা হলো অভ্যাস। আবার চক্ষুলজ্জাও বলা যায়। আমাদের সেটা প্রায় অনুপস্থিত। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যেখানে লেখা আছে এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ। ঠিক তার পাশেই দাড়িয়ে কর্মটি সারছেন। আশ্চর্য বিবেকবোধ! রাস্তার পাশে হাঁটতে নাকে চাপা দিয়ে হাঁটতে হয়। এই হলো আমাদের অভ্যাস।

জাপানের রাস্তায় ধূমপানের ছাই পর্যন্ত দেখতে পাবেন না। ওটা নিষিদ্ধ। এখন নিষিদ্ধ হলেই আইন মানার অভ্যাস আমাদের কিন্তু নেই। তবে ওরা আইন মেনে চলে। আমরা যেমন আরাম আয়েশ করি ওরা তেমনটা করে না। তারা নিয়মিতভাবে প্রচুর হাঁটাহাটি করেন। আবার যানবাহন হিসেবে সাইকেল সবচেয়ে জনপ্রিয়।

এক তথ্যে জানা যায়, জাপানে ৭২ মিলিয়ন মানুষ বাইসাইকেল ব্যবহার করে নিয়মিত। স্কুল থেকে শুরু করে অফিসে তারা সাইকেল ব্যবহার করতেই বেশি পছন্দ করে। এবার আমাদের দেখুন, অবস্থা এমন যে দশ মিনিটের দুরত্বে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। প্রতিদিনের বাজার করতে যায় মোটরসাইকেলে। অথচ হাঁটা বা সাইকেল চালানোটা শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। আবার খাদ্যাভাসও এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় জাপানিদের।

নিয়মতান্ত্রিকতা বিষয়টি এমন যে মানলে অনেককিছু আর না মানলে কিছুই না। শুধু স্টেডিয়াম পরিস্কার করার পর তারা খবরের শিরোনাম হয়েছে। এটা দেখে যদি অন্যরাও এই কাজটি করতে থাকে অন্তত নিজ দেশে তাহলে কিন্তু তাদেরই লাভ হবে। একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ বা দেশ গড়তে এই অভ্যাসের বিকল্প নেই। তবে আমরা যে স্বাস্থ্যসচেতন নই এর প্রমাণ পাওয়া গেছে করেনা মহামারীর সময়। মাস্ক পরার অভ্যাসটাই ঠিকমতো করতে পারিনি। মাস্ক পরার জন্য জরিমানাও গুনতে হয়েছে। অথচ এটা একটি সাধারণ সচেতনতা। এটা মানতে এমন কিছুই প্রয়োজন ছিল না। জাপান করলেই বিশে^র সকলের করতে হবে বিষয়টা এমন না। তবে সেই অভ্যাসটা যদি দেশকে এবং সারা পৃথিবীকে নিরাপদ রাখতে পারে তাহলে সেই অভ্যাস করায় ক্ষতি নেই।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও মুক্তগদ্য লেখক

সারাবাংলা/এজেডএস

অলোক আচার্য জাপান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর