মাখন খাওয়া শেষে পদত্যাগ নাটক
১১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৫৪
অবশেষে বিএনপি’র ডিসেম্বরের দশ তারিখের মহাসমাবেশের মাজেজা বের হয়ে আসলো। বহু নাটক মঞ্চস্থ করে রাজধানীর সবচেয়ে ‘বিরাট গরু ছাগলের হাট’ গোলাপবাগ মাঠে তাদের কাংখিত জনসভা শেষ করলো। বিএনপির নেতা কর্মিদের চাল ডাল নিয়ে এসে নয়াপল্টনের রাস্তায় সমাবেশের দুই তিন দিন আগে থেকে বসে থাকার দুরভিসন্ধি প্রশাসন বুঝতে পারার পর ‘মাঠ না রাস্তা, ময়দান না গরুর হাট’ ইত্যাদি করার পর ঢাকার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাটই বেছে নিলো তারা। দশ তারিখের রাস্তায় বসে থাকার বালখিল্য বুদ্ধি যখন ধরা খেল তখন নিজেদের আদর্শিক পরাজিত মাঠ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করে গোলাপবাগে জনসভা করলো দলটি। দশ তারিখের হাম্বিতাম্বি শেষ হল বিএনপির সাতজন এমপির সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষনার মধ্যে দিয়ে। তাদের পুর্বের ঘোষণা দশ তারিখের পর থেকে তাদের কথায় দেশ চলবে এমন কোন আভাস না পেয়েই চাল ডাল সমেত ঘরে ফিরে গেল বিএনপির কর্মিরা। তাদের এমপিদের সংসদে দেয়া যেটুকু কথা সরকার শুনে দেশ পরিচালনায় কাজে লাগাতো এই সমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সে সুযোগটুকুও হাতছাড়া করলো।
বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে গোহারা হারার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের অসত্য গল্প বলে আসছিল। নির্বাচনে বিপুল পরাজয়ের পর এক উদ্ভট, অসত্য, মিথ্যাচারে ভরপুর এক বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছিল। দুর্নীতি ও খুনের দায়ে দন্ডিত পলাতক নেতার মনোনয়ন বানিজ্য ও প্রতি আসনে টাকা খেয়ে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় নির্বাচনের আগেই পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল বিএনপির। তদুপরি তাদের অতিতের হাওয়া ভবনের দুঃশাসনের ভয়াবহতার কথা এবং অগ্নিসন্ত্রাস ও জ্বালাও পোরাও-এর কারনে মানুষ অনেক আগেই যে বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তা তারা বুঝতে পারেনি। সেই পরাজয়ের গ্লানিকে ঢাকতে এবং নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতাকে আড়াল করে কর্মীদের রোসানল থেকে বাঁচতে দিনের ভোট রাতে হয়েছে তথ্য মাঠে ছাড়ে। অথচ সেই নির্বাচনে বিএনপি জোটের দুই শীর্ষ নেতা ডক্টর কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোটে তাদের সন্তোষের কথা বলেন। মির্জা ফখরুল তার দুটি আসনের একটি থেকে জয়লাভও করেন। তারেক রহমানের ব্যাক্তিগত রোসানলে পরে মির্জা সাহেব শপথ নিতে না পারলেও সেই আসনে চড়া দরে আরেক দফা মনোনয়ন বিক্রি করে নির্বাচন নিয়ে মিডিয়ায় সত্য কথা বলায় ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপর প্রতিশোধ নেয় তারেক রহমান। তারপর ফলাফল মেনে না নেওয়ার নাটক, শপথ না নেয়ার নাটক, বিশেষ করে ফখরুল সাহেবকে শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে লন্ডনি নেতার অনৈতিক চাপ- এ সবকিছু উপেক্ষা করে বিএনপি ও জোটের নির্বাচিত ছয় সাতজন এমপি শপথ নিলেন এবং এবং লন্ডন পলাতক নেতা তা অনুমোদনও দিলেন। পরে সেই নেতার বিশেষ পছন্দে তাদের ভাগের একজন মহিলা এমপিও নিলেন। সেই থেকে আজ চার বছর যাবত সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যরা খুবই শক্ত ভুমিকা পালন করে আসছে। সংসদের সব কার্যক্রমে জোরালোভাবে অংশ নিচ্ছেন এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন সভা সেমিনারে এমপি হিসেবে সরকারি টাকায় নিয়মিত অংশগ্রহন করছেন। এমপি কোটায় প্রাপ্য সব সুবিধা প্লট, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি, লাল পাসপোর্টসহ নানা ধরনের সুবিধা নিয়মিত ভোগ করেছেন। আর মিডিয়ায়, পত্র-পত্রিকায়, টক শো-তে প্রতিদিন নিশিরাতের সরকার বলে মিথ্যাচার করছেন। এখানেও বিএনপি নেতারা তাদের নিজেদের নিদারুন ব্যর্থতা ঢাকতে ও কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে লাগামহীন মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন। পুরো চার থেকে সাড়ে চার বছর এমপিগিরি করার পর প্রায় মেয়াদ শেষের আগে জনসভায় দাড়িয়ে পলাতক নেতার কু-বুদ্ধিতে সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়ে কর্মীদের আরেক দফা বোকা বানানোর পায়তারা করলো বিএনপি। দেশবাসী জেনে গেলো মাখন খাওয়া শেষ করে পদত্যাগ।
বিএনপি তাদের অতিতের কুকর্মের কথা একবারও চিন্তা করছে না। বন্দুকের নলে জোর করে ক্ষমতা দখল করা অবৈধ শাসক জিয়াউর রহমানের দুঃশাসন থেকে শুরু করে বেগম জিয়ার অতিতের দুইবারের শাসনামলের সব ন্যাক্কারজনক ঘটনা ও দেশ পরিচালনায় নিদারুন ব্যর্থতা থেকে কোন শিক্ষা না নিয়ে উল্টো পুরানো পথেই হাটছে বিএনপি। ফলাফল অতিতের মতই যে শুন্য তাতে কোন সন্দেহ নাই। বিএনপিও জানে তাদের পাচ সাতজন সংসদ সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এই সংসদের কিছুই হবে না। তারা কেন বা কার বুদ্ধিতে বা কোন প্রভু রাস্ট্রের পরামর্শে এইসব হঠকারি পথে হাটছে তা বোধগম্য নয়। দুর্নীতি ও খুনের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ড মাথায় নিয়ে এক যুগের অধিক সময় বিদেশে আরাম আয়েশে জীবন যাপন করে কর্মীদের রাজপথে ঠেলে দিয়ে ঘরে বসে ক্ষমতা পাওয়া যদি আরো বিলম্ব হয়! যা হবে নিশ্চিত। তাতে তার মতে টেক-ব্যাক বাংলাদেশ তো হবেই না বরং দণ্ড মাথায় নিয়ে বা তার বহু কাংখিত ক্ষমতা হাতে পেয়ে যদি কোনও দিন দেশে আসার সুযোগ হয়! সেদিন এসে এক অন্য বাংলাদেশ দেখবে। যে শেখ হাসিনাকে তারা মা-ছেলে মিলে একুশে আগস্টের মত ঘৃণ্য বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেই শেখ হাসিনার হাত ধরেই দেশ কি অসাধারণ চোখ ধাধানো সব উন্নয়ন হয়েছে। কবে দেশে ফিরবে বা আর কোন দিনই দেশে ফিরতে পারবে কিনা ঠিক নেই, তবে যদি কোন দিন ফিরে আসে তবে বিমানবন্দরে নেমে নিশ্চিত চিনতে পারবে না এটা কোন বাংলাদেশ। বিমানবন্দর থেকে নেমে যদি তার পিতৃভুমি বগুড়ায় যাওয়ার ভাগ্য হয় কিম্বা কেরানিগঞ্জ, অল্প সময়েই গন্তব্যে যেতে যেতে দেখবে নয়নাভিরাম রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যা তারা ক্ষমতায় থাকতে কল্পনাও করতে পারে নাই।
আদালত কর্তৃক বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার দণ্ড ও দণ্ডিত অবস্থায় দলের নেতৃত্ব দিয়ে নেতাকর্মীদের ভুল পথে পরিচালনা করা। দল পরিচালনায় সিদ্ধান্তহীনতা, ত্যাগী নেতাদের অবমুল্যায়ন, জেলায় জেলায় প্রবীন ও জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কার নাটক। এক নির্বাচনে অংশ নেয়া আরেক নির্বাচনে অংশ না নেয়া, টাকার বিনিময়ে পদ ও মনোনয়ন বানিজ্য করা। সিনিয়র নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন না করা ইত্যাকার নানা বিষয়ে দলের মধ্যে যখন ভয়াবহ অবস্থা ও দেশবিরোধী নানা কর্মকান্ডের কারনে সুধি মহল ও আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির অবস্থা যখন খুবই নাজুক তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে উদ্ভট, হাস্যকর সব বক্তৃতা বিবৃতি হাজির করছে দলটি। এসব করেও যখন আন্দোলন জমাতে পারছে না বা জনগণ তাদের এই ব্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়ায় সারা দিচ্ছে না তখন আবার সংসদ থেকে তাদের সদস্যদের এই পদত্যাগ নাটক মহরা। যেখানে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন প্রতিদিনই তাদের সদস্যরা বিশেষ করে হারুনর রশীদ ও রুমিন ফারহানা জোর গলায় সত্য অসত্য মিলিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলছে। সরকারের অনেক বিষয়েই যেখানে রাজপথে বিএনপি কোন প্রতিবাদ করছে না সেখানে সংসদে বিএনপি তথা তাদের জোট যুক্ত ফ্রন্টের এমপিরা জোরাল ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশবাসি সংসদে বিএনপির এমপিদের ভুমিকা অনেকটা ইতিবাচক ভাবেই দেখছে। শুধু পলাতক নেতা তাদের এমপিদের সংসদে থাকা পছন্দ করছে না। তাতে নাকি সরকারকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। সংসদের মেয়াদ চার বছর শেষ হবার পর তার এই কথা মনে হলো। তার সাথে আরো বুদ্ধিদাতা হিসেবে আছে সাবেক হাওয়া ভবনের সব দুর্নীতিবাজরা। যারা এখন লন্ডন থেকে টেলিফোনে নসিয়ত পেয়ে দল পরিচালনা করছে। আর তাদের বুদ্ধিতেই অতিতে আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা, জ্বালাও-পোরাও, অগ্নিসংযোগ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে বার বার নাটক, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়া, পচা বামদের নিয়ে আন্দোলনের মহড়া দেয়ায় আজকে দলের এই দুর্দশা। তাই দলের এমপিদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না দিয়ে বরং দল পরিচালনায় বিএনপির নেতাদের নিদারুণ ব্যর্থতার কারনে তাদেরই দলের পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিৎ। এরাই অতিতে এমপি, মন্ত্রি থাকতে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বেসুমার লুটপাট করে অঢেল অর্থকরি কামাই করে এখন আবার ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে দেশ ও গনতন্ত্র বিরোধী নানা বিভ্রান্তিকর সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। নিজেরা আরাম আয়েশে থেকে কর্মীদের রাস্তায় ঠেলে দিচ্ছে। আর বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। তাই সংসদ থেকে বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না দিয়ে ওইসব নেতারা যদি তাদের দলের নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করে তাহলে দেশের মানুষও বাঁচে দলটিও বাঁচে। তা না হলে দেশের মানুষ বুঝে নিবে মাখন খাওয়া শেষ করে পদত্যাগের নাটক করলো ক্ষমতালোভী বিএনপি।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি