রেললাইনের পাশে ১২০ কিমি গতির লেন তৈরি করা হোক
১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৫৭
সুইডেন প্রবাসী রহমান মৃধা (সাবেক পরিচালক, ফাইজার) কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা ভিডিও দিয়েছিলেন যেখানে তিনি গাড়িতে বসেছিলেন আর ওনার ছেলে ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চালাচ্ছিল জার্মানির এক রাস্তায়। ওই রাস্তাগুলোকে বলা হয় অটোবাহনেন (Autobahnen)। দ্রুতগামী গাড়ি চলাচলের জন্য বিশেষায়িত রাস্তা এগুলো। এসব রাস্তার গতির সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। তখন ভাবলাম, “ভাইরে ভাই, এই গতিতে ৪-৫ ঘণ্টায় দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যাওয়া যাবে।” যেখানে ঈদে আমার বাড়ি পৌঁছাতে সময় লেগেছিল মোটে ২৪-২৬ ঘণ্টা। তারপর বাড়ি পৌঁছাতে না পৌঁছাতে অসুস্থ হয়ে পড়ি। সে যাই হোক, পরে ভাবলাম আমাদের দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা কীভাবে উন্নতি করা যাবে? আর এমন গতির রাস্তা পেতে আমাদের আর কত যুগ অপেক্ষা করতে হবে?
ঢাকা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে রুয়েট যাচ্ছিলাম ট্রেনে করে। তখন দেখেছিলাম রেল লাইনের আসে পাশে বেশি একটা বসতিও নেই। ট্রেনের শব্দের কারণে আসলে মানুষ একটু দূরে বসতি স্থাপন করে। তাছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো লাগতেছিল। তখন একটা চিন্তা আসলো মাথায়। রেললাইনের দুই পাশের ফাঁকা জায়গায় রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা।
আমাদের বর্তমান যাতায়াত ব্যবস্থা:
১. একই রাস্তা দিয়ে দূরপাল্লার যানবাহন বাস, মাইক্রোবাস আবার পণ্যবাহী ট্রাক, পাথর বোঝাই করা ট্রাক, লোকাল যানবাহন যেমন অটো রিকশা, নছিমন, ব্যাটারি চালিত রিকশা, ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক, মোটরসাইকেল, সাধারণ সাইকেল, সিএনজি সবকিছু চলে। আমি আবারও বলছি এগুলো সব একই রাস্তা দিয়ে চলে।
২. প্রতিবছর দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যায়, পঙ্গু হয়ে যায়, কেউ পিতা হারায়, কেউ মাতা হারায়, কেউ ছেলে-মেয়ে হারায়, কেউ বা স্বপরিবারে নিহত হয়। কত রকমের যে দুর্ঘটনা ঘটে হিসাব নেই।
৩. যে গন্তব্যে যেতে ২-৩ ঘণ্টা লাগে সেখানে ৫-৭ ঘণ্টায়ও যাওয়া যায় না। প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম আর ঈদের সময় তো কোনো কথাই নেই। পুরাই অনিশ্চিত কবে পৌঁছাবেন বা আদৌ পৌঁছাবেন কিনা!
৪. ট্রেনে যাতায়াতে দুর্ভোগ একটু কম তবে টিকেট পাওয়া মুশকিল। ওয়েবসাইটে টিকিট ছাড়ার দুই মিনিটের মধ্যে টিকেট নাই। কই গেলো টিকেট? টিকেট কালোবাজারি, ট্রেনের পার্টস চুরিসহ এই খাতেও দুর্নীতির শেষ নেই। পুরাই লস প্রজেক্ট। আয় তো নেই আবার উল্টা সরকারকে প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। একটু পত্র-পত্রিকায ঘাটলেই এদের দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়। মাঝে মাঝেই অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এই নিয়ে।
৫. এসব ছাড়াও অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ সহ আরো কত ঘটনাই যে ঘটে। রাস্তায় নিরাপত্তার অভাব মানুষকে শান্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেয় না। কত মানুষ যে খুন হয় এসব খপ্পরে তার তো সঠিক হিসেবও নেই।
পরিকল্পনাটি:
১. রেললাইনের দুই পাশ দিয়ে দুই-দুই চার লেন রাস্তা থাকবে।
২. একদিকের দুই লেন যাওয়ার এবং আরেকদিকের দুই লেন আসার। যানবাহন সব সময় যেকোনো এক লেন দিয়ে চলবে। আর আরেক লেন থাকবে কোনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির জন্য। যেমন: গাড়ির কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে থামতে হতে পারে। তখন এই লেন কাজে লাগবে।
৩. এই রাস্তা দিয়ে যেসব যানবাহন চলবে সেগুলো পরীক্ষিত এবং ভালো মানের হতে হবে।
৪. শুধুমাত্র অনুমোদিত যানবাহন এসব রাস্তায় প্রবেশ করতে পারবে।
৫. রাস্তার দুপাশে প্রাচীর দেয়া থাকবে যাতে মানুষ, গরু ছাগল বা অন্যকিছু হঠাৎ রাস্তায় উঠতে না পারে।
৬. মানুষের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট দুরত্ব পর পর বা প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে ওভারব্রীজ বা ফুটওভার ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে।
৭. রেলস্টেশন যেমন থাকবে তার পাশে এসব যানবাহন থামার ও জায়গা থাকবে। মূলত রেলস্টেশন এর সাথে সম্মলিত করে ব্যবস্থা করা হবে।
৮. সব গাড়ি একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলবে। হতে পারে ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। রেল লাইনের রাস্তাগুলো তুলনামূলক সোজা এবং আঁকাবাঁকা কম হওয়ায় এই গতি বজায় রাখা চালকদের জন্যে অনেক সহজ হবে।
৯. যেহেতু সব গাড়ি একই গতিতে চলবে চাই ওভারটেকিং করার সুযোগ কম বা নেই।
১০. রাস্তায় পুলিশ ২৪ ঘণ্টা টহল দিবে, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করবে, গতি পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে গতি পরিমাপ করবে। রাস্তায় ঢোকার সময় যানবাহন সংক্রান্ত যা কিছু চেক করার প্রয়োজন পুলিশ চেক করবে না, চেক করবে দক্ষ মেকানিক। পুলিশ মাদক বা অন্য কোনো নিরাপত্তাজনিত বিষয় চেক করতে পারে। মূল রাস্তায় ঢোকার পর এসব করে রাস্তার গতি আটকানোর বিশেষ প্রয়োজন নেই।
১১. এ রাস্তায় যে পুলিশ টহল দিবে তাদের জন্য বিশেষ গাড়ি থাকবে যাতে সহজে ২০০-২৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি তোলা যায়। কারণ রাস্তার সাথে সাথে অপরাধীরাও আপগ্রেডেড হবে।
সুবিধা:
১. প্রথম এবং প্রধান সুবিধা দেশের জন্যে হলো লস প্রজেক্ট রেল ব্যবস্থাকে কিছুদিনের জন্যে অবসরে পাঠাবে।
২. পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে কিছুদিন সময় দিবে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা কিভাবে সর্বাধুনিক করা যায় সেটার পরিকল্পনা করতে।
৩. অন্যান্য সুবিধা যেমন যাতায়াতে সময় ও ভোগান্তি কমবে। এসব বিষয় একটু আপনারাও কল্পনা করুন।
অসুবিধা:
অসুবিধা বেশি দেখি না। অসুবিধা বা সমস্যা থাকলে সেসব বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে সমাধান করতে হবে। তবে এসব মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করার প্রধান ভয় এবং প্রতিবন্ধকতা হলো মেগা দুর্নীতি। তাহলে মূল অসুবিধা হলো দুর্নীতি।
প্রতিবন্ধকতা:
অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা আছে আমাদের দেশের বা আরো প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে সেসব প্রতিবন্ধকতাও দূর করা সম্ভব।
আমরা পদ্মা সেতু তৈরি করেছি, আমরা চেষ্টা করলে এ ধরনের প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারবো।
লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
সারাবাংলা/এজেডএস