স্রষ্টার সৃষ্টিকেই মূলত আমরা আবিষ্কার করি
২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩০
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই কিন্তু মানুষ জাতি গবেষণা করে চলেছে। তবে খুব কম সংখ্যক মানুষ আছেন যারা নতুন কিছু, যা পূর্বে ছিল না বা এ মূহুর্তে নেই এমন কিছু উদ্ভাবন করেছেন। এ কথা বললে অনেকেই আমার ওপর ক্ষেপে যাবে, ক্ষেপে যাবারই কথা। কারণ, আমরা যে পুঁথিগত শিক্ষা প্রশিক্ষণ গড়েছি বিশ্বে, সে শিক্ষায় নতুন কিছু চিন্তাভাবনা করার দক্ষতাকে আজীবনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ বর্তমান শিক্ষার যাঁতাকলে ঢুকে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করার এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের চিন্তা করার সুযোগ খুব কমই পায়। যার ফলে অতীতে মানুষ নিজের জ্ঞানশক্তি দিয়ে যতটুকু সম্ভব চিন্তাভাবনা করে নতুনত্বের সৃষ্টি করে রেখে গেছেন বর্তমানের শিক্ষাপদ্ধতি তাকে পরিবর্ধন এবং পরিবর্তন করে জটিল থেকে জটিলতর করা ছাড়া অন্য কিছু করা হচ্ছে বলে মনে হয় না।
চলুন একটু টাইম মেশিনে করে অতীতের কিছু ঘটনা প্রবাহে ফিরে যাই। ফিরে যাই হযরত আদম (আ.)-এর সময়ে। পৃথিবীতে প্রথম যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেটা হলো হযরত আদম (আ.)-এর সন্তান কাবিলের হাতে হাবিলের নিহত হওয়ার ঘটনা। সেই সময়ে কাবিল জানতো না হত্যার পর লাশটিকে সে কী করবে। লাশকে দাফন করতে হবে তা সে শিখেছিল একটা কাককে দেখে। কাকটি মাটি খুঁড়ে লাশ দাফন করার যে ইঙ্গিত দিয়েছিল সেটাই ছিল কাবিলের জন্য শিক্ষণীয়।
এভাবে যুগে যুগে মানুষ জাতি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং প্রকৃতি থেকে নানাভাবে সমাধান খুঁজেছে। মানুষ জাতির অনুসন্ধান এবং গবেষণা নতুন কিছু নয় এবং কথাটির সঙ্গে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত কিন্তু আমরা বিষয়টি নিয়ে কীভাবে চিন্তা করি?
সার্চ বা অনুসন্ধান এবং রিসার্চ বা গবেষণা সম্পর্কে তো আমরা জানি। তারপরও আবার একটু বিশ্লেষণ করি। আমার মতে সার্স বা অনুসন্ধান বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন কিছু যা আগে ছিল এবং সেটা হারিয়ে গেলে সেটাকে খোঁজা। যেমন ধরুন আপনার টেলিফোনটা পাওয়া যাচ্ছে না, আপনি কী করবেন প্রথমেই? খুঁজতে শুরু করবেন। এই খুঁজাকেই মূলত সার্চ বা অনুসন্ধান বলা হয়। মানে কী দাঁড়ালো? যা ছিল সেটা খুঁজে বের করা। আর রিসার্স হচ্ছে যা আছে তাকে গুড ট্যু বেটার করা বা ভুল থাকলে সঠিক করতে চেষ্টা করা। যেমন পাখির আকাশে উড়া দেখে বিমান তৈরি করা। তাহলে এসব আবিষ্কার বা চিন্তাগুলোর উৎস কী? নিশ্চয়ই প্রকৃতি।
এখন প্রশ্ন, আমরা ইনভেন্ট করি কখন তাহলে? আদৌ কি আমরা কোন কিছু সত্যিকারার্থে ইনভেন্ট করেছি? না, যা কিছু পৃথিবী, গ্রহ, সৌরজগত বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে সেগুলোকেই দেখে অনুকরণ করে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি বা হচ্ছি। এখনকার শিক্ষায় যে জটিলতা ঢুকেছে তা হলো আমরা পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে প্রতিনিয়ত এমনভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছি যে আমাদের নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটির আদৌ বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে না যার ফলে ‘করলা’ সব্জির মত একই জিনিসকে ঘাটতে ঘাটতে তাকে তিক্ত করে ফেলছি। বিশ্বের বর্তমান অবনতির যে প্রধান কারণ তা হলো বর্তমানের শিক্ষা।
নতুন চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তির নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটির বহিঃপ্রকাশ না হবার কারণে উন্নতির পরবর্তীতে অবনতিই বেশি লক্ষ্যণীয়। আমাদের শিক্ষার আউটপুটে সবসময় ধ্বংসাত্মক মনোভাব। এর সত্যতা যাচাই করতে হলে দেখুন কীভাবে গোটা বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো উস্কানি এবং ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রপাতি ইউক্রেনকে হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়ে মানবজাতিকে সামনের ভয়ংকর দিনগুলোতে ফেলে দিচ্ছে। অথচ সৃজনশীলভাবে বিষয়টিকে অন্যভাবে ভাবা যেতে পারত।
যেমন, মানুষে মানুষে খুন না করে বরং পৃথিবীর ৮ শো কোটি মানুষের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষের পেটে ভাত, পরনে কাপড়, বসবাসের ব্যবস্থা, তাদের মস্তিষ্ককে ভবিষ্যতের জন্য সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন পৃথিবী গড়তে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চেষ্টা করার মন মানসিকতা তৈরি করতে পারত। কিন্তু না, সেটা তো শিক্ষা পদ্ধতিতে নেই।
সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে আমাদের এই বিশ্বে পুলিশ, মিলিটারি ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রপাতি তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে গবেষকদের কি প্রয়োজন হতো? নিশ্চয় না। মানবজাতি, আমরা তো নিজেরাই নিজেদেরকে শত্রু বানিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছি এবং আমাদের প্রশিক্ষণে এগুলোই তৈরি করছি। তাহলে যদি বলি পৃথিবীর অধঃপতনের পেছনে শিক্ষাই দায়ী তাহলে কি ভুল হবে? এ শিক্ষাকে চিরতরে বন্ধ করে নতুন এবং বিশেষায়িত শিক্ষা প্রশিক্ষণ চালু করা হোক এবং সেটা বাংলাদেশেই সবার আগে চালু করা হোক। আর হ্যাঁ মানবজাতি সত্যিকারভাবে কখনও নতুন কিছু উদ্ভাবন করেনি, মানুষজাতি শুধু স্রষ্টার সৃষ্টিকে অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে শিখেছে মাত্র। এমনকি সেই কাকের চেতনা এবং বুদ্ধিমত্তাও তিনিই (স্রষ্টা) সৃষ্টি করেছেন। মূলত যা কিছু সার্স বা ইনভেন্ট করা হয় সেটা শুধু পরম করুণাময় করে থাকেন, কারণ তিনি নিজেই সে ক্ষমতার অধিকারী এবং আমরা শুধু তার সৃষ্টির অনুসরণ বা অনুকরণ করি মাত্র।
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
মুক্তমত রহমান মৃধা স্রষ্টার সৃষ্টিকেই মূলত আমরা আবিষ্কার করি