জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া যেখানে দুষ্কর
৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:০১
রসিক দিলকা জ্বালা, ও লাল কুর্তাওয়ালা, দিলি বড় জ্বালারে পাঞ্জাবিওয়ালা। গোটা বিশ্বে শুধু সমস্যা আর সমস্যা এবং শেষে ক্রাইসিস। সমস্যার আবার ধরণও আলাদা। প্রেমের জ্বালা বিশাল সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান হবে কিভাবে? হঠাৎ এ ঘটনা নিয়ে হাজির হলাম কেন? এ প্রশ্ন করা খুবই স্বাভাবিক। আসুন জানি কিছু তথ্য।
গিয়েছিলাম আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণে, দেখা হয়েছিল নানা দেশের মানুষের সাথে। তার মধ্যে ছিল চীন, জাপান, ভারত, ল্যাটিন আমেরিকান এবং থাই জাতি। যে বিষয়টি বেশি নজর কেড়েছে সেটা হলো মেয়ের অভাবে ছেলেরাই ছেলেদের জীবনসঙ্গী হতে শুরু করেছে। পূর্ব ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ যেমন বেলারুস, হাঙ্গেরি, ইউক্রেনসহ আরো অনেক দেশে পাত্রী আছে, অভাব পাত্রের। ল্যাটিন আমেরিকায় বিশেষ করে ব্রাজিলের পাহাড়ি এলাকায় জীবনসঙ্গীর অভাব, বিয়ে করবেন কিন্তু পাত্র নেই। যার ফলে অবিবাহিত অবস্থাতেই থেকে যেতে হচ্ছে তরুণীদের।
ঘটনাটির সত্য যাচাই করতে গত কয়েক দিন ধরে আমি তিনটি দেশের তিনজন মেয়ের সাথে কথা বলেছি। মজার ব্যাপার হলো, এই তিনটি মেয়েই আমার সুইডেনের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী এবং সুইডিশ ছেলে বিয়ে করে সুইডেনে চলে এসেছে।
সাবিনা হাঙ্গেরিয়ান মেয়ে পেশায় পাইলট, বিয়ে করেছেন সুইডিশ। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ইদানীং হাঙ্গেরিতে ছেলে পাওয়া কঠিন। আমি বললাম, বলেন কী? তিনি উত্তরে বললেন, অনেকের স্ত্রী আছে। তারপরও অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক। আমি বললাম, তাহলে তো চরিত্র খারাপ। তিনি বললেন, বিষয়টি ঠিক তা না, অনেকেই ছেলের অভাবে একাকি, তখন কারো গার্ল ফ্রেন্ড হয়ে আছে। বেলারুস, ইউক্রেনের অবস্থা একই রকম এবং অনেক বিদেশী ছেলে সেখানে সহজে বিয়ে করার সুযোগ পাচ্ছে, কারণ এসব দেশে বিয়ে করা অনেক সহজ।
ল্যাতিন আমেরিকার অবস্থাও প্রায় এক রকম। সুন্দরী ও বিবাহযোগ্যা হলেও মেয়েরা সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছে না। ব্রাজিলের একটি পাহাড়ি এলাকার গ্রামে ঘটেছে একটু ভিন্ন ধরণের সমস্যা। এখানে পুরুষ বিয়ে করলে স্ত্রীর সাথে ওই গ্রামেই থাকতে হবে বলে আশপাশের এলাকার কোনো পুরুষই ওই গ্রামে বিয়ে করতে রাজি নয়। ফলে মেয়েরা বিবাহযোগ্যা হলেও অবিবাহিত থাকতে হচ্ছে স্রেফ ওই কারণের জন্য।
এর পেছনেও অবশ্য একটি গল্প রয়েছে। জানা যায়, ১৮৯০ সালে মারিয়া সেনহোরিনা ডি লিমা নামে একটি মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া হয়। এর পরই তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নোইভা ডে কোরডেইরো (Noiva de Cordeiro) নামে এক এলাকায় চলে আসেন। ১৮৯১ সালে তিনি এখানে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। আর তখন থেকেই স্থির হয় এই গ্রামের কোনো মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাবে না। স্বামীকেই স্ত্রীর সাথে থাকতে হবে। গ্রামের এই অদ্ভুত রীতির কারণেই অবিবাহিত থাকতে হচ্ছে নারীদের।
আমি সুইডেনে এখনো এ ধরনের সমস্যা দেখিনি বা শুনিনি। তবে অনেক সুইডিশ ইদানীং থাইল্যান্ডে বিয়ে করছে বিশেষ করে বয়স্ক সুইডিশরা। অন্যদিকে অনেক বয়স্ক মহিলারা আফ্রিকা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে।
ভাবনায় ঢুকেছে পৃথিবীর মানুষের মাঝে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তাতে করে বোঝা যাচ্ছে, মেয়েদের সংখ্যা কম পুরুষদের তুলনায়। আমাদের সমাজে পুরুষেরা একের অধিক বিয়ে করে, এদিকে এখানে অনেকের ভাগ্যে বিয়েই জুটছে না। ঘটনা তো মারাত্মক বেদনাদায়ক। আবার না উল্টাটা শুনি যে কিছু যেমন এক মহিলার একের অধিক পুরুষ রয়েছে। কারণ ভারত ও চীনে যেমন মেয়ের অভাব। কী অবস্থা বাংলাদেশের বড্ড জানতে ইচ্ছে করে! সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে। তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’- সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কী কেবলই যাতনাময়।
লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
সারাবাংলা/এজেডএস