Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে শৈত্য-প্রবাহ, পথশিশু ও শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন

মাঈন উদ্দীন রুবেল
১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৭

শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন যাবৎ সূর্যের দেখা মিলছে না,কুয়াশাচ্ছন্ন ও সূর্যবিহীন দিন যাচ্ছে। সূর্যের দেখা না পাওয়ায় প্রচন্ড ঠান্ডায় লোকজন ও পথশিশুদের শুকনো খড়, কাঠ, ঘাস ও শুকনো ময়লা আবর্জনার স্তূপে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ পোহাতে দেখা যায়। প্রচণ্ড শীতে আগুনের তাপ পোহানোর সময় মনের অজান্তে আহত ও পুড়ে যেতেও দেখা যায়। শীতের এমন সময়ে কনকনে শীতে শীতবস্ত্রহীন অসহায় লোকজন, ফুটপাতে রাত যাপন করা লোকজন এবং পথশিশুরা তরতর করে কাঁপতে শরু করে। হাত-পা বরফের মত ঠাণ্ডা ও শীতল হয়ে যায়। এমন দৃশ্য খবরের কাগজ ও টিভির পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়। শীত আসে ধনীদের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আর অসহায় গরীব ও পথশিশুদের জন্য আসে দূঃখ হয়ে। কারণ শীতের দিন ঘুম ভালো হয়,তা যদি হয় ধনী লোকদের জন্য হয় তাহলে আরো আরামদায়ক যেহেতু তারা দামি দামি লেপ ও কম্বলের মধ্যে ঘুমায় এতে শীত তাদের তেমন স্পর্শ করতে পারে না, শীত তেম অনুভবও হয় না। কিন্তু ছিন্নমূল, অসহায় গরীব-দুঃখী, পথশিশুদের জন্য চরম কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। কারণ দামি শীতবস্ত্র, লেপ-কম্বল কেনার সেই সামর্থ্য তাদের থাকেনা। জীবকার তাগিদে ছুটে চলে নানান প্রান্তে। পথশিশুরা ও ফুটপাতে জীবন অতিবাহিত করা লোকজনের শরীর ঢাকার মত পোশাক পর্যন্ত থাকেনা। এমনকি দু’মুটো ভাত পর্যন্ত জোটে না। কারণ প্রচন্ড ঠান্ডায় তারা ভীক্ষায় ও বের হতে পারে না। কোন এক উষ্ণ জায়গায় কুঁজো দিয়ে দিনরাত পার করে যায়। বৃদ্ধরা ঠান্ডায় কাতরায়। তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এমনকি তীব্র ঠাণ্ডায় অনেকে মারাও যায়। এমতা অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় কিছু কথা আছে, ‘পৌষের শীতে ভূত কাপে আর মাঘের শীতে বাঘ ডোরে (গর্জন)। পৌষ গেল, মাঘ আইল শীতে কাঁপে বুক/দুঃখীর না পোহায় রাতি হইল বড় দুখ।’ গ্রামবাংলার এ কথাগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেশের অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের শীতকালীন দৃশ্য ফুটে উঠে । সৃষ্টিকর্তার অপার ইচ্ছায় ও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পালাবদল ঘটে থাকে। এই পালা বদলের হাত ধরেই চলে আসে শীত। শীত আসে শীত যায় এটা স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃতির নিয়ম যা ঋতুর চক্রাকারে হতে থাকে।

জানুয়ারি মাসের শুরু থেক শীত জেঁকে বসেছে। উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে ও দিন রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র দেশে এক সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেশে বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে দিনে ও রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সমগ্র দেশে দৈনিক ১০-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজমান। পৌষ মাসের শুরু থেকে শীত পড়ার মাত্রা বাড়লেও পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে সূর্যের দেখা তেমন না পাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীত পড়ছে, বৈরি আবহাওয়া ও সারাদেশে শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায় যে, এ বছর জানুয়ারী মাস নাগাদ কয়েক দফায় শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করতে পারে। এতে একেক সময় দুই থেকে তিন দিনেরও বেশি থাকতে পারে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ শৈত্য প্রবাহের কারণে সারা দেশে কুয়াশাচ্ছন্ন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন বিরাজ কারায় স্থলযান, নৌ-যান, ও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, এতে বিপাকে পড়ছে যাত্রী ও জনজীবন। শীতকালে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, হাড় কাঁপানো শীতে বয়োবৃদ্ধদের অসুস্থতার হার বেড়ে যাচ্ছে, তারা শ্বাস-কষ্ট থেকে শুরু করে এজমা ও নানান সমস্যায় ভোগছে, শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে, ঠাণ্ডায় তারা কাতরাচ্ছে।

এমতাবস্থায় আমাদের উচিত হবে ঠাণ্ডায় খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কোথাও বের না
হওয়া, ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার না করা, শিশু ও বয়স্কদের কুসুম কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করা, গরম শীতের কাপড়-চোপড় পড়া, পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে আদাঁর দিয়ে কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা, এতে শ্বাসজনিত সমস্যা ও ঠাণ্ডা থেকে কিছুটা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। কারণ বুকের মধ্যে ঠাণ্ডা লাগলে এজমা ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা বেড়ে যায়। অন্যদিকে এসব সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এরূপ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।

ঘন কুয়াশার মধ্যে যানবাহনের মাধ্যমে দূরে কোথাও ভ্রমণ না করা, চালকদের ফেরি ও যান চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করা। কুয়াশা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় ধীরগতিতে ও লাইট জ্বালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ও ওভারেটিংয়ের সময় হরণ বাজিয়ে যান চলাচল করা। বিশেষ মূহুর্তে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা। কারণ সময়ের চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই আমাদের সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

বর্তমানে শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করায় কর্মজীবন ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। কারণ হাড় কাঁপানো শীতে লোকজন বাইরে যেতে পারছেনা, অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেনা। শীতে লোকজন কাঁপছে এতে উৎপাদন ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। শীতে কাজকর্ম কমে গেছে, শ্রমজীবী,খেটে খাওয়া মানুষ ও রিক্সা চালকদের রোজগার কমে গেছে, তারা কাজ পাই না, রিক্সা চালকরা ও যাত্রীবাহী বাসগুলো যাত্রী পাই না এবং শীতের কারণে তারা রিকশা চালাতে হিমসিম খাই । এতে তারা ও নিম্ন মধ্যবৃত্ত এবং মধ্যবিত্তরাও চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে।

ব্যাংক ও অফিস-আদালতে লোকজনের আনাগোনা কমে গেছে। এতে কিছু কিছু শিক্ষিত লোকজন আধুনিক ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধায় বিশেষ প্রয়োজনে বিভিন্ন মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বা বাসায় বসে ব্যাংকি সুবিধা নিয়ে থাকে। শেয়ার বাজারেরও দরপতন হচ্ছে।

আবার হিম শীতল বাতাস ও শৈত্য প্রবাহের কারণে হাড় কাঁপানো শীতে পথশিশু, ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে কঠিন জীবন পার করছে। তাদের কেউ কেউ ছেঁড়া ও পাতলা কাপড়ে এবং অনেকেই একদম কাপড় না থাকায় উলঙ্গ অবস্থায় শীত কাটাচ্ছে গরম কোথাও জায়গা খোঁজে নিয়ে, বিভিন্নভাবে কুঁজো হয়ে। দরিদ্র অসহায় মানুষদের গরম দামি শীতের পোশাক ক্রয় করার ক্ষমতা না থাকায় ও পর্যাপ্ত পরিমানে শীত নিবারনের পোশাক না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে তারাও কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই দেশের গরীব দুঃখী অসহায় মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণে মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফুটানো ও শীত থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নজর দিতে হবে ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষ, শিশু ও বয়স্কদের প্রতি। মানবতার পাশে দাড়ানোই হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ। যা একজন মানুষকে উদার ও বড় করে তোলে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য সব মানুষের উচিত সমগ্র সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া, অকৃত্রিম ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতিশীল হওয়া। তাই দেশের সর্বস্তরের ধনাঢ্য, বিত্তবান, শিল্পপতি ব্যবসায়ী, বিশিষ্টজনদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, আপনারা চলতি শীত মৌসুমে শীতার্ত গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় নতুন বা পুরোনো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণে অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুন। শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করলেই এ থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে। পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত পরিমান শীতবস্ত্র ও শীতার্তদের পাশে এগিয়ে এলেই শীত নিবারণের পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।

আসুন, আমরা সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়ায়। এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ববোধই হতে পারে অসহায়ের সহায়।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বাড়ছে শৈত্য-প্রবাহ- পথশিশু ও শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন মাঈন উদ্দীন রুবেল মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর