Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে মিড ডে মিলের গুরুত্ব

অলোক আচার্য
২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৬

শিক্ষার টেকসই লক্ষ্য অর্জনে একটি বড় বাধা হলো শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীর ঝরে পড়া। প্রাথমিক, এসএসসি এবং এইচএসসি বহু শিক্ষার্থী ঝরে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে যুযোপযুগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরেও ছাত্র ছাত্রী বিভিন্ন স্তর থেকে ঝরে যাচ্ছে যা গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় বাধা। মেয়েদের ক্ষেত্রে তারা বাল্য বিয়ের শিকার হয় এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে কোনো শ্রমমূলক কাজে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষায় টেকসই অর্জনের লক্ষ্যে এটি একটি প্রথম শ্রেণির বাধা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার উদ্দেশ্য হলো কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাকে আরো যুগোপযুগী করে তোলা। শিক্ষার এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার বহুবিধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এসব বহুবিধ উদ্দেশ্যের মধ্য অন্যতম হলো শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন সাধন বা মানসম্মত শিক্ষা প্রণয়ন করা। যেখানে শিক্ষার্থীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পরা হ্রাস করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘদিনের পদক্ষেপ। এতকিছু সত্ত্বেও ঝরে পড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন স্তরের স্তরের একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা হিসেবেই থেকে গেছে। এই সমস্যা ক্রমহ্রাস করার চেষ্টাও দীর্ঘদিনের।

বিজ্ঞাপন

কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে বা কেন হঠাৎ বিদ্যালয়ে আসা ছেড়ে দেয় তার বেশকিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে দারিদ্রতা। আমাদের দেশেও ক্রমান্বয়ে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন এবং যুগোপযোগী করে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে চলতি বছর থেকেই নতুন পরিবর্তিত কারিকুলামে পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রধান বাধা হলো ছাত্রছাত্রীর ঝরে পড়া। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বাইরে রয়েছে।

এরা হয়তো সকলে ঝরে পড়বে না। অনেকেই লেখাপড়ায় ফিরবে। আবার কেউ কেউ হারিয়ে যাবে। এটাই ঝরে পড়া। শিক্ষায় বাধা হিসেবে কাজ করছে ঝরে পড়া। ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে বেশ কিছু কারণের উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো- পরিবারের অন্যত্র চলে যাওয়া, বইখাতাসহ লেখাপড়ার উপকরণ নষ্ট হয়ে যাওয়া, তাৎক্ষণিকভাবে স্কুলের ব্যয় বহনে অক্ষমতা, বাবা মাকে ঘরের কাজে সহায়তা করা, উপার্জনে বা ভাগ্যান্বেষণে নেমে পড়া, লেখাপড়ায় আগ্রহ না পাওয়া, স্কুলে যেতে নিরাপদ বোধ না করা, যাতায়াতে যানবাহন সংকট সমস্যা ইত্যাদি। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট যে পড়ালেখার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে অনেক পরিবারই তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে এবং এক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যেখানে শতভাগ মানুষকে শিক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। এই ঝরে পড়া রোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো মিড ডে মিল বা দুপুরের খাবার।

করোনা মহামারী এবং তার পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদিও এটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে। মিড ডে মিল প্রাথমিকে শুরু করার সব কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর কিছু বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম শুরুও হয়েছিল। এরপরপরই করোনার আঘাত আসে। তবে সুখবর হলো সম্প্রতি দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাসেও উপস্থিতি বাড়াতে সারা দেশের স্কুলে দুপুরের খাবার চালু করতে চায় সরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের ঝরে পড়া কমিয়ে আনতে ও তাদের মধ্যে অপুষ্টি দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করার কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামীলীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও সব গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে ও শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলে এবং পর্যায়ক্রমে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সর্বজনীন করার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। অনেক বিষয় বিবেচনায় নানা প্রতিবন্ধকতা পার হতে হবে। কিন্তু সাফল্য এলে তা হবে অনন্য অর্জন।

জাতীয় মিড ডে মিল কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও বাড়ে। স্কুলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। শ্রেণিতে মনোনিবেশ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মিড ডে মিল। টিফিনে বাড়িতে যাওয়া, খাওয়া অথবা অনেক পরিবারের রান্না না হওয়ায় খালি পেটেই আবার স্কুলে আসার মতো ঘটনাগুলো আর ঘটে না। তারা স্কুলের প্রদত্ত খাবার খেয়ে স্কুলেই নিশ্চিন্ত মনে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে। মূলত শিশুদের পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে, উপস্থিতির হার বাড়াতে এবং লেখাপড়া মনোযোগ ধরে রাখতে মিড ডে মিল অত্যন্ত কার্যকর। বিদ্যালয়গুলোতে শতভাগ ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সবকিছুর সুযোগ সুবিধা ভালো হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রী ঝরে যায়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারগুলো বিশেষত যারা এই কঠিন সময় মোকাবেলা করেও টিকে আছে তারা অনেকেই তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে দুবেলা খাবারের আশায় কাজে দেয় এবং মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। আর শিক্ষার্থীরাও বাড়িতে অনেক সময় পুষ্টিকর খাদ্যের অভাববোধ করে এবং দরকারি পুষ্টি পায় না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তান যাদের বাড়িতে পুষ্টিমান নিশ্চিত সম্ভব হয় না তারাও এর ফলে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। অভিভাবকরাও আগ্রহী হবে সন্তানকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠাতে। শিক্ষকদের সাথে অভিভাবকের একটু সমন্বয় থাকলেই বিষয়টি আরও সহজ হবে। এর আগে পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালের মধ্যে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হবে। সরকার বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর পৌছে দিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পৌছে গেছে ওয়াইফাই সংযোগ। সেখানে ডিজিটাল কন্টেটের মাধ্যমে শিশুদের পড়ালেখা করানো হচ্ছে।

২০৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার তাগিদ রয়েছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা। আর স্মার্ট মানে ডিজিটালাইজেশনের সাথে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। প্রযুক্তির মাধ্যমে লেখাপড়া এবং পড়ার পরিবেশ আনন্দদায়ক করতে প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর শিক্ষকের কথা বললে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন যারা নিয়োগ পাচ্ছে তারা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত। পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ফের শুরু হয়েছে চলতি বছর থেকে। সরকার শিক্ষা উন্নীতকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে মিড ডে মিল কার্যক্রম অন্যতম। আশা করা যায় এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে এবং আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। এর সাথে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত হবে। শিক্ষার মানেও জোরারোপ করতে হবে। শিক্ষার যুগান্তকারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিড ডে মিল যে বড় ভূমিকা রাখবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

অলোক আচার্য মিড ডে মিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর