Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান: স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মের ভিত

ইমরান ইমন
২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:২৮

আজ ২৪ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজকের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ জন্মের ভিত তৈরি করে দেয়। এ আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়েই আমরা উদ্বুদ্ধ হই স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রধান মাইলফলক ছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।

মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তির সনদ খ্যাত ছয় দফা এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্র সমাজের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এ গণঅভ্যুত্থান। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে।

পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা স্বৈরাচারী আইয়ুব দমন-পীড়নের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান (শহীদ আসাদ)। আসাদের আত্মদানের পর তার রক্তামাখা শার্ট নিয়ে তাৎক্ষণিক মিছিলে বের করে ঢাকা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুরু হক তীব্র আন্দোলন। ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি দেশব্যাপী শোক পালিত হয়। আস্তে আস্তে ঢাকার সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ গণআন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলন পরিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানে রুপ নেয়।

আগরতলা মামলার প্রধান আসামি বঙ্গবন্ধুসহ অন্যদের মুক্তি ও পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে সাধারণ জনতা মিছিল বের করে। ২৪ জানুয়ারি ছিল হরতাল। পাক পুলিশ জনতার মিছিল সচিবালয় পর্যন্ত আসলে গুলিবর্ষণ শুরু করে।

ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথের সে মিছিলে পাক পুলিশের গুলিতে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর ও রুস্তমসহ আরও কয়েকজন শহীদ হন। তুমুল প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আসাদ গেট’ নামকরণ করে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে মহান স্বাধীনতা এবং আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পেছনে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

ঊনসত্তরে শহীদ আসাদের রক্ত হয়ে ওঠেছিল প্রতীবাদের প্রতীক, আন্দোলনের পতাকা। শহীদ আসাদের রক্ত দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছিল তখনকার স্বৈরশাসক আইয়ুবের নামে নামাঙ্কিত আইয়ুব গেট, আর আসাদের দেশপ্রেমে ভরা পবিত্র রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে ‘শহীদ আসাদ গেট’। বর্তমান প্রজন্ম কতটুকু ধারন করেছে আসাদদের? কতটুকু জানে সে বীরত্ব আর দেশপ্রেমের ইতিহাস? যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে আসাদ সেদিন নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন দেশমাতৃকার জন্য–সে স্বপ্ন আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আমরা কি পেরেছি তার স্বপ্ন পূরণ করতে বা এ বোধটুকু কি কোনদিন আমাদের মনে জেগেছে? বর্তমান সময়ে যখন দুর্নীতি ও লুটপাটের ভারে ভারাক্রান্ত প্রিয় স্বদেশ, তখন আসাদের চেতনা নাড়া দিচ্ছে নিদারুণভাবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমরান ইমন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর