জিপিএ ৫ নয়, শিক্ষাই মূল লক্ষ্য হোক
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৭
প্রমথ চৌধুরীর সুপরিচিত প্রবন্ধ ‘বই পড়া’-তে একটা কথা রয়েছে সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। সেই সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই জিপিএ ৫ নয় মূল লক্ষ্য শিক্ষা গ্রহণ করা। এই কথাটা বলার মুল কারণ যদি বলি, বর্তমানে আমাদের শিক্ষক সমাজ থেকে শুরু করে অভিভাবক-শিক্ষার্থী সকলের লক্ষ্য হচ্ছে পড়াশোনা করে পাবলিক পরীক্ষা গুলোতে জিপিএ ৫ পেতে হবে। কিন্তু এই গদবাধা নিয়মের মধ্যে দিয়ে গিয়ে জিপিএ ৫ পেতে গিয়ে আমরা মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি বলে আমার ধারণা। আসুন একটু বিস্তর জানার চেষ্টা করি।
বর্তমান সময়ে আমরা যখন এসএসসি কিংবা এইচএসসি তে পড়ছি তখন শিক্ষক থেকে শুরু করে আমাদের অভিভাবক তথা আমাদের পুরো সমাজ আমাদের মস্তিষ্কে জিপিএ ৫ বিষয়টাকে এমন ভাবে গেঁথে দেয় যেন জিপিএ ৫ না পেলে প্রথম-দ্বাদশ এই পুরো সময়ের শিক্ষা জীবনটাই বৃথা। আবার, অনেক সময় পরিবার থেকে তো একথা বলেও শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া হয় যে এ প্লাস না পেলে পরাশোনাই করানো হবে না। শিক্ষার্থীদের পারিপার্শ্বিক এসকল চাপে এমন ভাবে গড়ে তোলা হয় যেন তারা শুধু জিপিএ ৫ এর জন্যই পড়বে।
জিপিএ ৫ উম্মাদনার যে ক্ষতি তা আমরা অনেকটাই অনুমান করতে পারি না। এই উম্মাদনায় তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা হারিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য থেকে, এমনকি অকালে ঝরছে প্রাণ। প্রতি বছরেই ফলাফল ঘোষণার পর আমরা জিপিএ ৫ না পাওয়ায় আত্মাহুতির খবর দেখতে পারি। এই ফুলের মতো প্রাণ গুলো হারিয়ে যাওয়ার পেছনে আমাদের জিপিএ ৫ উম্মাদনাই দায়ী।
সুশিক্ষিত কিংবা স্বশিক্ষিত এই জায়গাটা থেকে সরে যাচ্ছি আমরা। শিক্ষার ফলে মূল্যবোধ যেখানে বিকশিত হওয়ার কথা সেখানে আরো সংকুচিত হচ্ছে এই এক উম্মাদনার ফলে। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা খবরের শিরোনাম দেখি ‘ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্চিত’ কিংবা ‘ছেলের হাতে মা কিংবা বাবা অপদস্ত।’ এসকল যে ঘটনা সকল কিছুর পেছনের কারণ সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে না পারা। তবেই শুধু মাত্র জিপিএ ৫ অর্জনকেই আমি দায়ী করছি না। এজন্য দায়ী আমাদের সমাজ, আমাদের পরিবেশ, পারিবারিক শিক্ষা আর শিক্ষার গদবাধা নিয়ম।
সর্বোপরি পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র কিংবা ব্যবসায় শিক্ষার ডেবিট ক্রেডিট হিসাব করে এ প্লাস অর্জন করতে গিয়ে আমরা যদি সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাই, সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে না পারি তাহলে তা আমাদের দেশ ও জাতি দুটোর জন্যই ক্ষতিকর হবে। কাজেই এই গদবাধা শিক্ষা থেকে বেরিয়ে শিক্ষা আনন্দময় না হলে মূল শিক্ষা অর্জন, মূল্যবোধ অর্জনের পাশাপাশি ভালো ফলাফলের প্রতি জোর দিতে হবে। তাহলেই হয়ত আমাদের শিক্ষা অর্জন স্বার্থক হবে বলে আমি মনে কর।
সারাবাংলা/এজেডএস